আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট : নাগরিকদের পরামর্শে মোড়েলগঞ্জ পৌরসভাকে একটা উন্নত সেবা প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চাই। এজন্য যা যা করা দরকার আমি তা-ই করব। জনপ্রতিনিধি হয়ে জনসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করা আমার বহু দিনের স্বপ্ন।
এভাবেই রাইজিংবিডির কাছে নিজের ইচ্ছার কথা জানান গত ৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মনিরুল হক তালুকদার।
তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন রাইজিংবিডির বাগেরহাটের নিজস্ব প্রতিবেদক আলী আকবর টুটুল। তার সাক্ষাৎকারের অংশগুলো পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হল-
মোড়েলগঞ্জ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন মনিরুল হক তালুকদার। তিনি ৭ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মজিদ জব্বার পান মাত্র ১ হাজার ৩৬২ ভোট।
সাক্ষাৎকারে নবনির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক তালুদার বলেন, ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৮ বছর পার করেছে আমাদের এ পৌরসভা। শুরু থেকে ছয় বছর সরকারি প্রশাসক এ পৌরসভার দায়িত্ব পালন করেন। পরে নির্বাচনের মাধ্যমে দুই মেয়াদে ১২ বছর (ওয়ান-ইলেভেনে দুই বছরসহ) আমি এ পৌরসভায় মেয়র হিসেবে নাগরিকদের সুখ-দুঃখে পাশে ছিলাম।
কোনো নাগরিক সমস্যা নিয়ে এসে তার কাছ থেকে সমাধান পাননি এ কথা কেউ বলতে পারবে না। তবে স্থানীয় দলীয় বিভক্তির কারণে পৌরবাসীকে সেবা দিতে কষ্ট হয়েছে। তারপরও পৌরবাসী আমাকে ছেড়ে যায়নি; আমিও তাদের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি।
মেয়র বলেন, তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভাকে আলোকিত করতে চাই। নাগরিক সুবিধাসম্পন্ন উন্নত-আধুনিক পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য হবে। বর্তমানে নদীবেষ্টিত পৌরসভাটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও ভরা জোয়ার-ভাটায় ২৪ ঘণ্টায় দুবার প্লাবিত হয়। এছাড়া পানগুছি নদীর পূর্বপ্রান্তে ৮ এবং ৯ দুটি ওয়ার্ড় থাকায় পৌরবাসী নানান দুর্ভোগে পড়ছে। তা থেকে উত্তরণে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দসহ ডিজিটাল আধুনিক পৌরসভা গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। শুধু পৌরসভা নয় গোটা মোড়েলগঞ্জ উপজেলার চেহারা পাল্টে দেওয়া সম্ভব হবে দলীয়ভাবে নির্বাচনের কারণে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়নের স্বার্থে যে ভূমিকা রাখছেন সেই উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে মোড়েলগঞ্জ পৌরবাসী বঞ্চিত হবে না।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলায় আওয়ামী লীগের যারা আছেন তারা আমার অভিভাবক। আমি পৌরসভার দায়িত্ব পেয়েছি। এখন পরিকল্পনামাফিক শুধু এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।
মনিরুল হক তালুকদার ছাত্রজীবনেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। অবিরাম যুক্তিনির্ভর কথার গাঁথুনির বক্তা হিসেবে অনেকের সুদৃষ্টিতে পড়েন তিনি। ধাপে ধাপে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পথ বেয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি একই সঙ্গে তিনি এখন আওয়ামী লীগ নেতা।
তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে প্রাসঙ্গিক অতীত। ১৯৬৫ সালের ১ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে নানা ইনসান উদ্দিন আহমেদের বাড়িতে তার জন্ম। বর্তমানে পৌরসভার বারইখালী গ্রামের তিনি বাসিন্দা। ছাত্রজীবনে খুলনায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখার সময়ে ছাত্রলীগে জড়িয়ে পড়েন। নবম শ্রেণিতে পড়ালেখার সময় স্কুল ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ঢাকা কলেজ, এস এম কলেজ ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় ছাত্রলীগের কলেজ সভাপতি ছিলেন।
১৯৯৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে তিনি মোড়েলগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বড় ভাই মমতাজুল হক লন্ডনের অ্যাভার্ডিন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতার সুবাদে আমাকে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য সেখানে ভর্তি করেন। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা ও মাটির টানে লন্ডনে পড়ালেখা করতে যাওয়া হয়নি। এরপর ২০০৪ সালে মোড়েলগঞ্জ পৌরসভার প্রথম তফসিল ঘোষণার পর পৌরবাসীর ভালোবাসা নিয়ে ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা অলিউর রহমান পল্টুকে পরাজিত করে নির্বাচিত হই।
ছয় বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভার ২৮ হাজারের অধিক অধিবাসীর উদ্দেশে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার এ বিজয় জনগণের প্রত্যাশার ফল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিজয় এবং ১৮ বছরের এ পৌরসভার উন্নয়নের পথে এক ধাপ এগোনো।
এ পৌরশহরকে উন্নত করার প্রথম প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জন্মের পর বিগত দিনে পৌরসভার উন্নতি যতটুকু না হয়েছে আগামী পাঁচ বছরে তার তুলনামূলক চিত্র সবাই দেখতে পারবে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/১৬ জানুয়ারি ২০১৬/আলী আকবর টুটুল/মুশফিক