নিজস্ব প্রতিদেবক, চট্টগ্রাম : ‘আমার মায়ের সঙ্গে মহসিনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। নিজের চোখে এ দৃশ্য দেখে আমি মহসিনকে প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করি। এর পর বাজার থেকে করাত কিনে এনে লাশ ১০ টুকরো করে কর্ণফুলী নদী, নালা-নর্দমাসহ বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিয়ে আসি।’চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ আরিফুল ইসলামকে (১৯) গ্রেফতারের পর এভাবেই সে হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়েছে পুলিশের কাছে।
শুক্রবার গভীর রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর সিমেন্ট ক্রসিং এলাকা থেকে আরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর শনিবার বিকেলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরিফুল লাইটার জাহাজের ক্যাপ্টেন মহসিনকে (৫১) হত্যা করে লাশের টুকরো বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়ার চাঞ্চল্যকর বর্ণনা দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, খুনি আরিফুলের মা নাজমা বেগমের সঙ্গে লাইটার জাহাজের ক্যাপ্টেন মহসিনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। মহসিনের সঙ্গে তার মাকে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকতে একাধিকবার দেখতে পেয়ে আরিফুল মহসিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
আরিফুল পুলিশকে জানিয়েছে, মহসিনের জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করলে মহসিন নাজমা বেগমের বাসায় থাকতেন। নাজমা এবং তার ছেলে আরিফুল স্থানীয় পৃথক দুটি গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিল। গত ৫-৬ বছর ধরে নাজমা বেগমের সঙ্গে মহসিনের সম্পর্ক চলছিল। সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারি দুপুরে মহসিন নাজমার বাসায় আসে। এ সময় মা নাজমা বেগমের সঙ্গে আরিফুলও বাসায় অবস্থান করছিল। মহসিন বাসায় আসার পর নাজমা বেগম কাজের কথা বলে আরিফকে বাসার বাইরে পাঠিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই আরিফ বাসায় ফিরে মা ও মহসিনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখতে পায়। এ দৃশ্য দেখে আরিফ ওই দিনই মহসিনকে হত্যার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে। একই দিন বিকেলে নাজমা বেগম গার্মেন্টে কাজে গেলে মহসিন নাজমার বাসাতেই ঘুমিয়ে ছিল। সুযোগ পেয়ে আরিফুল মহসিনের বুকের উপর বসে মুখের ওপর বালিশচাপা দিয়ে প্রথমে মহসিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর লাশ গুম করার পরিকল্পনা করতে মহসিনের লাশ দুদিন ধরে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। দুদিন পর বাজার থেকে একটি করাত কিনে আনে আরিফুল। এর পর লাশ কেটে ১০ টুকরো করে সে। পরে ১৭ জানুয়ারি রাতের আঁধারে লাশ ব্যাগে ভরে চার ভাগে ফেলে দিয়ে আসে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে মাথা থেকে গলা পর্যন্ত দু’ভাগ করে কর্ণফুলী নদীতে এবং সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় একটি বড় নালায় ফেলে দেয়। বুক থেকে নাভি পর্যন্ত ফেলা হয় হালিশহর থানার আনন্দবাজার এলাকায় নদীর পাড়ে। হাত-পা ফেলে দেওয়া হয় একই এলাকায় আরেকটা বড় নালায়। লাশের টুকরো ফেলে দেওয়ার একদিন পরেই ১৮ জানুয়ারি হালিশহর থানা পুলিশ আনন্দবাজার এলাকা থেকে বুক থেকে নাভি পর্যন্ত লাশের অংশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় হালিশহর থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ এই হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু করে। ২১ জানুয়ারি মহসিনের ভাই ও স্ত্রী ঢাকা থেকে এসে ইপিজেড থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন এবং নাজমা নামে একজনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক থাকার বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দেন। এই ক্লু ধরে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ নাজমার সন্ধান পায় এবং নাজমাকে গ্রেফতার করে। মাকে ছাড়িয়ে নিতে খুনি আরিফুল একাধিকবার থানায় গেলেও পুলিশ একবারও আরিফুলকে সন্দেহ করতে পারেনি। মা নাজমাকে জেলহাজতে প্রেরণের কয়েকদিনের মধ্যেই আরিফুল চট্টগ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেলে পুলিশের সন্দেহ হয়। তদন্তের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে শুক্রবার রাতে পুলিশ আরিফকে চট্টগ্রামে ডেকে এনে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এর পর আরিফুল মহসিনকে হত্যার পর লাশ ১০ টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়ার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।
খুনি আরিফুলের মা নাজমা বেগমও বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/রেজাউল/মুশফিক