মার্চ স্পেশাল

গরুর মাংস কি অস্বাস্থ্যকর?

ডা. সজল আশফাক : রেড মিট বা লাল মাংসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শুনতে শুনতে, অনেকেরই মনে হতে পারে লাল মাংস তথা গরু-খাসির মাংসের বুঝি কোন ভালো গুণই নেই। আসলে রেডমিট সম্পর্কে সর্তকবাণীর প্রায় পুরোটাই বয়স্কদের জন্য। যাদের বয়স ৩০-এর নিচে, রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা ঠিক আছে, মেদাধিক্য নেই, ওজনও স্বাভাবিক তাদের জন্য লাল মাংসের এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ঠিক হবে না।

 

রেড মিট বা লাল মাংস অনেকেই মজা করে খান। কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে কেউ কেউ গরুর মাংসকে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসাবে ভাবতে শুরু করেছেন। এর কারণ হলো রেডমিট এর পক্ষ এবং বিপক্ষ- দুই দলই চরম পক্ষপাতিত্বের বিবেচনায় রেডমিটকে বিচার করছেন। আসলে কৃশকায় গরুর মাংসকে স্বাস্থ্যকরই বলা চলে। কারণ তাতে কোলেস্টেরল থাকে কম। এই ধরনের গরুর সাধারণ মাংস দৈনিক ৫০-১০০ গ্রাম গ্রহণে খুব একটা অসুবিধা নেই।

 

তবে কথা হচ্ছে, হৃদরোগ কিংবা ক্যান্সার ঝুঁকি থাকলে রেড মিট এড়িয়ে চলা উচিত। আবার এ কথাও ধ্রুব সত্য, গরুর মাংস বা রেড মিট হচ্ছে প্রাণীজ প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, থায়ামিন, রিবোফ্ল্যাভিন, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি-১২ এর অন্যতম উৎস। এই গরুর মাংসই হতে পারে স্বাস্থ্যকর খাবার যদি গরুর মাংসের চর্বি বাদ দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে খাওয়া যায়। পাশাপাশি এই রেডমিট-ই আবার হৃদরোগ এবং কোন কোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু কৃশকায় গরুর মাংস কিংবা চর্বি বাদ দেয়া গরুর মাংসে চর্বি কম পরিমাণে থাকার জন্য ঝুঁকিও কম।

 

গবেষণায় দেখা গেছে, কৃশকায় কম চর্বি সম্পন্ন গরুর মাংসের কিছু এমানোএসিড, টরাইন এবং আর্জিনাইন উল্টো সিসটোলিক (উপরের) রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। কম চর্বি যুক্ত গরুর মাংসের চেয়ে বরং অতিরিক্ত ভাত খাওয়া বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকের ধারণা গরুর মাংসে বুঝি শুধু ক্ষতিকর সম্পৃক্ত চর্বিই থাকে। আসলে তা নয়। কৃশকায় গরুর মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (সম্পৃক্ত চর্বি), মনোআনস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এর সমানুপাতিক হার হল ২৪:৪০:১৪। তবে রেড মিটের এইসব ঝুঁকির পেছনে মূলত দায়ী মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ। রেড মিট একক ভাবে দায়ী নয়।

 

দেখা গেছে দৈনিক ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস গ্রহণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে ৪২ শতাংশ আর ১৯ শতাংশ বাড়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। তবে গরুর মাংসের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি কিছুটা কম। রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি শূকরের মাংসে। প্রক্রিয়াজাত বা প্রসেস্ড মিট-এর মধ্যে সসেজ, সালামি, বেকন এবং লাঞ্চন মিটস্ অনেকেরই পছন্দের খাবার। অবাক বিষয় হচ্ছে, প্রক্রিয়াজাত এবং সাধারণ গরুর মাংসে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ প্রায় একই।

 

প্রক্রিয়াজাত গরুর মাংসে কোলেস্টেরল এবং আয়রন কম। তবে প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে ব্যবহৃত লবণের কারণে  সোডিয়াম এবং সংরক্ষণে ব্যবহৃত উপাদানের কারণে নাইট্রেট বেশি থাকে। লবণের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয় এবং নাইট্রেটের জন্য রক্তনালীর দেয়াল ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ইনসুলিন নিঃসরণ কমে গিয়ে ডায়াবেটিস প্রবণতা বাড়ায়। যার ফলাফল হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। কোন কিছ্ ুযেমন বেশি ভালো নয়, গরুর মাংসও তেমন বেশি খাওয়া ভালো নয়। তবে ঢালাওভাবে সবাই গরুর মাংস এড়িয়ে চলবেন এটা ঠিক নয়। আবার বলছি, সাধারণ কম চর্বিযুক্ত গরুর মাংস শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবার জন্য পুষ্টিকর খাবার হিসাবে বিবেচিত। তবে আগেই বলেছি, বয়স ৩০-এর ওপরে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, মেদাধিক্য ও বাড়তি ওজনদার মানুষ, ইতিমধ্যে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কিংবা আক্রান্ত হয়েছেন হৃদরোগে তাদের জন্য গরুর মাংস তথা রেড মিট এড়িয়ে চলাই মঙ্গল।

 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নাক কান গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/তারা