আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। এ প্রবাদ বাক্য আমাদের সবার জানা। কিন্তু যদি এমন হয় যে, বনের পশু বসবাস করছে মানুষের সঙ্গে। একই ঘরে তারা খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে, বাড়িতে খেলাধুলা করছে- তাহলে কেমন হয়?
অবাক হলেও সত্যি বনের এক ভালুক প্রায় দুই যুগ ধরে বসবাস করছে এক মানব পরিবারে। বনে স্বাধীনভাবে থাকা-খাওয়া, চলাফেরার পরিবর্তে বাস করছে মানুষের সঙ্গে।
নাম তার স্তেপান। বয়স যখন তিন মাস তখন তাকে দত্তক নিয়েছিলেন সভেৎলানা ও ইউরি প্যান্টেলিনকো দম্পতি। স্তেপানের বয়স এখন ২৩, ওজন প্রায় ১৬২ কেজি। আর উচ্চতা ৭ ফুট। দৈত্যই বলা যায় তাকে- ভালুক দৈত্য। ২৩ বছর ধরে নিজের সন্তানের মতোই তাকে লালনপালন করছেন রাশিয়ার সভেৎলানা ও প্যান্টেলিনকো দম্পতি।
সভেৎলানা জানান, মাত্র তিন মাস বয়সে এক শিকারি জঙ্গলে স্তেপানকে খুঁজে পেয়েছিলেন। মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল সে। ওই সময় তার অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। ওই সময় শিকারির কাছ থেকে স্তেপানকে দত্তক হিসেবে নেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘স্তেপান লোকজনদের খুব পছন্দ করে এবং সে হচ্ছে পুরোপুরি সামাজিক ভালুক। লোকজন যা কিছুই ভাবুক না কেন, সে কারো প্রতি ক্ষিপ্ত হয় না। কখনোই সে আমাদের ওপর কোনো হামলা চালায়নি।’
সকালে ঘুম ভাঙার পর স্তেপান নিজেই তার ঘর থেকে বের হয়ে আসে। নাশতার টেবিলে সভেৎলানা-প্যান্টেলিনকো দম্পতিকে সঙ্গ দেয় সে। রাতের খাবারের টেবিলেও তার উপস্থিতি থাকে। স্তেপানের খাবারের পরিমাণও কম নয়। প্রতিদিন তার খাদ্যতালিকায় থাকে ২৫ কেজি মাছ, শাকসবজি ও ডিম। তবে তার প্রিয় খাবার হচ্ছে পুরিজ ও কনডেন্স মিল্ক।
সভেৎলানা-প্যান্টেলিনকো দম্পতির সঙ্গে একই সোফায় বসে টেলিভিশন দেখে সে। প্যান্টেলিনকো আবার মাঝে মাঝে বই পড়েন শোনান স্তেপানকে। তার ভাব দেখে মনে হয় প্যান্টেলিনকো বইয়ে কী পড়ছেন, তা সে গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছে।
বাগানের ফুলগাছগুলোতে পানি দিয়ে সভেৎলানা ও প্যান্টেলিনকোকে সাহায্য করে সে। ফুটবল নিয়ে খেলাটা তার খুবই পছন্দের। ওই দম্পতির সঙ্গে প্রতিদিন সে বল খেলে।
সভেৎলানা-প্যান্টেলিনকো দম্পতি স্তেপানের বেশ যত্নও নেন। সভেৎলানা প্রতিদিনই স্তেপানের গায়ের বিশাল বিশাল লোমগুলো চিরুনি দিয়ে পরিপাটি করে দেন।
স্তেপানকে দেখে লোকজন বেশ অবাক হয়ে যান। বনের হিংস্র ভালুক এভাবে মানব পরিবারে বসবাস করছে, দেখে সবাই বিস্মিত হওয়ার পাশাপাশি মুগ্ধও হন।
ভিডিও:
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ মে ২০১৬/শাহেদ/এএন