মতামত

পাহাড়ের চাপা কান্না এবং বিপুল চাকমা

সিয়াম সারোয়ার জামিল : বিপুল চাকমা। পাহাড়ি ছাত্র নেতা। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুবাদে মধুর ক্যান্টিনে পরিচয়। আড্ডা হয়েছে বেশ ক'বার। সাক্ষাৎ হলেই হাসি মুখে হাতটা বাড়িয়ে দেন। আমিও ভালবাসা নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরি। আড্ডায় তার মুখে শুনেছি, পাহাড়িদের স্বপ্নের কথা, সংগ্রামের কথা। জুম্মু জাতীয়তাবাদের স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন তাদের লক্ষ্য। বিপুল এখন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-পিসিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনটি পাহাড়িদের রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফ সমর্থিত। সুদর্শন, মার্জিত, চৌকস, নম্র এই তরুণকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে গত রোববার।

 

ক্যানসার আক্রান্ত অসুস্থ মাকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে চট্টগ্রাম হাসপাতালে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে গাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মায়ের সামনেই ছেলেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় তারা। পুলিশকে তিনি মিনতি করেছিলেন যেন মায়ের সামনে এসব করা না হয়। পুলিশ সে কথা শোনেনি। তারা বীরদর্পে দায়িত্ব পালন করেছে। অন্যদিকে নিদারুণ এ দৃশ্য অসুস্থ মা মেনে নিতে পারেননি। খাগড়াছড়ি হাসপাতালে নেয়ার অল্প পরেই মায়ের মৃত্যু হয়। এরপর বিপুল চাকমাকে প্যারোলে সাত ঘণ্টার জন্য মুক্তি দেয়া হয়। মায়ের লাশের সামনেই তিনি জুম্মু জাতীয়তাবাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ডাণ্ডাবেড়ি আর হাতকড়া দেয়া অবস্থায় তাকে মায়ের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণের দৃশ্যটি দেখেছি। বিয়োগান্তক আর দৃঢ সংকল্পের সে দৃশ্য।

 

বিপুল গ্রেফতারের খবর শুনেই আমি চমকে উঠেছিলাম। অথচ চমকে ওঠার কোনো কারণ ছিল না। মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন ওদের কাছে নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। পাহাড়ে তো কত ঘটনাই ঘটে। বিপুলের মত কতশত তরুণ নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। সবটা কী গণমাধ্যমে উঠে আসে? ওদের হয়ে কথা বলারও কেউ নেই। দেখে-বুঝে-শুনে চোখে ঠুলি পরে থাকে সবাই। ফলে পাহাড়ি শতশত তরুণ বুকে কান্না চেপে পাহাড়িদের স্বায়ত্তশাসনের স্বপ্নে বেড়ে ওঠে। শপথ নেয়, একদিন দিন বদলাবে। ওদের জমিতে ওরাই থাকবে। সেটেলার নামক 'দানব' উচ্ছেদ করবে।

 

আচ্ছা, নিজ ভূ-খণ্ডের জমি বেদখল হয়ে গেলে সে জমি চাওয়া কি অপরাধ? হিংসার আগুনে পুড়তে থাকা তরুণ বিপুল চাকমা আসলে কত বড় সন্ত্রাসী? সে কয়টি ধর্ষণ করেছে? কয়শ' কোটি টাকা লুট করেছে? নির্বিচারে মানুষ মারা যাচ্ছে বন্দুকযুদ্ধের নামে। সেসব সন্ত্রাস নয়? এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী রাজনীতির নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে- সেসব অপরাধ নয়? শোষণ বঞ্চণার শিকার পাহাড়িদের পক্ষে দাঁড়ানোটা অপরাধ হবে কেন? বাঙালিদের বাইরেও বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী এ দেশে বসবাস করে। তবে কী বাঙালি জাতীয়তাবাদের বাইরে অন্যসব জাতীয়তাবাদী চেতনা এ দেশে অপরাধ হিসেবে গন্য হবে? 

 

দুই

আমার শৈশবের একটা সময় কেটেছে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে, খাগড়াছড়িতে। সেখানে গেলে এক ধরনের স্বর্গীয় অনুভূতি হয়। সবুজের ভাঁজে ভাঁজে যে অপার আনন্দ ছড়িয়ে আছে, তা মুহূর্তেই স্নিগ্ধ করে মন। কিন্তু ভ্রমণপিপাসুদের সেই অপার আনন্দের পেছনে আছে কয়েক যুগ ধরে পাহাড়িদের ভেতরে জমে থাকা চাপা কান্না। থেকেছি বলেই জানি, ওরা আমাদের ঘৃণা করে। অন্যরকম দৃষ্টি নিয়ে দেখে। না পাওয়ার বঞ্চনায়, কষ্টে তারা দিন বদলের স্বপ্ন দেখে। নিজেদের জাত চেনানোর জন্য যতটা তার চেয়ে শোষণ, বঞ্চনা থেকে মুক্তির স্বপ্নটাই তাদের চোখে বড়।

 

সত্তরের দশকে প্রকাশিত সত্যেন সেনের ‘মা’ উপন্যাস এ দেশে বামপন্থি ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যকার এক ঐতিহাসিক দলিল। সেই উপন্যাসে খুব চমৎকাতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, এদেশের মানুষের শোষণ, বঞ্চনার কথা। যার মধ্য থেকেই এ দেশের তরুণরা সশস্ত্র স্বদেশী যুদ্ধে নামে। জেলের ভেতর মার্ক্সবাদী বইপত্র পাঠের মাধ্যমে এই জাতীয়তাবাদীদের একাংশ মার্ক্সবাদী হয়ে ওঠে। আবার মার্ক্সবাদীরাও জাতীয়তাবাদী পতাকাতলে সমবেত হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন বেগবান করতে চায়। এমন সব মতবাদের সম্মিলনের মধ্য দিয়েই এদেশে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ হয়েছে।

 

বিপুল চাকমাদের গল্পও ভিন্ন কিছু নয়। ষাটের দশকে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে পাকিস্তান সরকারের হাইড্রো-ইলেকট্রিক প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি জনগণের মধ্যে অসন্তোষ শুরু হয়েছিল। সেই অসন্তোষের কারণে একাত্তরে বাঙালিদের সাথে পাহাড়িরাও দেখেছিল মুক্তির স্বপ্ন। স্বাধীনতার পর যখন বলা হলো, পাহাড়িদের বাংলা শিখে বাঙালি হয়ে যেতে। তখন পাহাড়িরা যে মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে বাঙালিদের সঙ্গে অস্ত্র ধরেছিল, মুহূর্তেই সেই স্বপ্ন আবারও ওই অসন্তোষের দিকেই ধাবিত হয়। ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে পাহাড়িদের রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি- জেএসএস। পাহাড়িরা জুম্মু জাতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে এর স্বীকৃতি দাবি করে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছিল।

 

১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল সাংসদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা লিখিতভাবে সরকারের নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদার দাবি জানান। কিন্তু নতুন সংবিধান পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বিশেষ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মর্যাদা দেয়নি। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জেএসএস মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেয়। আশির দশকে জিয়াউর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় দুই লাখ সমতলের বাঙালিকে পাহাড়ে নিয়ে আসে। প্রত্যেককে পাঁচ একর করে খাস জমি দেয়া হয়। সঙ্গে সেনা ছাউনি বাড়ানো হয়। এতেই বেড়ে যায় সংঘাত।

 

দুই দশকের সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালে সরকার ও জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর মধ্যে চুক্তি সই হয়। দীর্ঘকালের সশস্ত্র সংগ্রামের অবসান ঘটিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করেছিল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তিবাহিনী তথা জনসংহতি সমিতি। সবাই ভেবেছিল, এবার বুঝি পাহাড়ে শান্তি নেমে এল। কিন্তু পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হলেও এর বাস্তবায়ন যে দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া, তা বোঝা গেল অচিরেই। চুক্তিকে কেন্দ্র করে জেএসএস বিভক্ত হয়ে যায়। জন্ম হয় ইউপিডিএফ-এর। শান্তিচুক্তির পর জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (এমএন) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এই তিন সংগঠন যেমন নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে, আবার রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অসংখ্য তরুণ নেতাকর্মী ও সমর্থক প্রাণ হারিয়েছে। বিপুল চাকমা সেই ইউপিডিএফ অনুসারি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা।

 

তিন

পাহাড়িদের খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই। নিজ ভূ-খণ্ডে উৎকট ঝামেলা কে চায়? সেটা ওরাও চায় না। শান্তিচুক্তির প্রধানতম শর্ত মেনে গঠন করা পার্বত্য ভূমি কমিশন পড়েছে শুভঙ্করের ফাঁকিতে। গঠনের পর থেকে পার্বত্য ভূমি কমিশন এ পর্যন্ত একটি ভূমির বিরোধও নিষ্পত্তি করেনি! খাগড়াছড়িতে কমিশনের অফিস থাকলেও অন্য দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানে এর অফিসও নেই। নেই পর্যাপ্ত লোকবল, তহবিল। যথাযথ আইনের অভাবে কমিশনটি একেবারেই পরিণত হয়েছে কাগুজে দলিলে। ফলে সমস্যা সমাধান দূরে থাক, কমিশন নিজেই একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

গত কয়েক দশকে পাহাড়ে বাঙালিদের আধিক্য শুধুই বেড়েছে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন জেলা নিয়ে গড়ে ওঠা পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট আয়তন প্রায় পাঁচ হাজার ৯৩ বর্গমাইল। সেখানে রয়েছে ১২টি ভিন্ন ভাষাভাষি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বাস। জনসংখ্যার অনুপাতের জরিপে ১৯৪৭ সালে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি ছিল ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর বাঙালি ছিল আড়াই শতাংশ। ১৯৮১ সালে ছিল ৫৮ দশমিক ছয় শতাংশ ও ৪১ দশমিক চার শতাংশ, ১৯৯১ সালে ৪৯ ও ৫১ শতাংশ এবং সবশেষ ২০০১ সালের হিসাবে ৪১ শতাংশ ও ৫৯ শতাংশ। এই অনুপাতে বাঙালিদের সংখ্যা এখন ক্রমশ বাড়ছে। ফলে আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা ও স্বকীয়তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

 

পাহাড়ে পর্যটন থেকে বড় একটা আয় হলেও এর ফল পাহাড়িরা খুব কমই ভোগ করে। ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাঙালিদের আধিক্য বেশি। ফলে দারিদ্র্য পাহাড়িদের নিত্যসঙ্গী। অনেক বেদখলকৃত জমি তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত-প্রত্যাগত শরণার্থী আছেন, তাদের ভূমি-সমস্যা সমাধানের জন্য সম্প্রতি চতুর্থবারের মতো টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কার্যপরিচালনা বিধি এখনো তৈরি করা হয়নি।

 

গত কয়েক দশকে পাহাড়ে খাদ্য সংকটের মত ঘটনাও ঘটেছে। অসংখ্য সংঘাতে তরুণেরা মারা পড়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে পাহাড়ি নারীরা। এমন হাজারো সমস্যা নিয়েই পাহাড় আর পাহাড়িরা বেঁচে আছে। তাদের সেই সংগ্রামের কথা সমতলের কয়টা মানুষ জানে? ‘আদিবাসী' শব্দটি এখনও পায়নি সরকারি স্বীকৃতি। রাষ্ট্র যদি আদিবাসী শব্দের মমার্থই না বুঝে, সংকট সমাধান করবে কীভাবে?

 

চার

পাহাড়ে রাজনৈতিক সমস্যার পেছনে যেমন স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সংকট রয়েছে, একইভাবে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে। শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন নিয়েও বিতর্ক আছে। সরকার দাবি করলেও এটা সত্য যে, পাহাড়িদের শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তি অধরাই থেকে গেছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল এতটাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত যে, পাহাড়িদের নিয়ে ভাবনার সময় নেই। এতে করে পাহাড়ের সমস্যা জটিলতর হচ্ছে বারবার। সমাজ বাস্তবতা বিবেচনা করে চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল ঠিক করে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কৌশল হিসেবে প্রথমে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ন্যূনতম ইস্যুভিত্তিক ঐক্যের মাধ্যমে শক্তি সংহত করলে, ব্যাপক গণসংযোগের প্রচেষ্টা সব সময় অব্যাহত রাখলে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কোনো কারণ নেই।

 

বিপুল চাকমা কতটা অপরাধী তা আদালত বলবে। কিন্তু এটুকু সত্য যে, পাহাড়িদের মৌলিক অধিকার পূর্ণ করলেই কিন্তু বিপুল চাকমাদের এ পথে পা বাড়াতে হয় না। এজন্য পাহাড়ের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে সরকারকে ছাড় দিতে হবে। জেএসএস এবং ইউপিডিএফ উভয়কেই ভূমিকা রাখতে হবে। তবেই বিপুল চাকমাদের মতো মেধাবী, ত্যাগী ও দেশপ্রেমিক তরুণদের প্রতি কিছুটা সুবিচার করা হবে। এদেশের মানুষ নানা কারণেই রাজপথে নামে। নারী নিপীড়ণে নামে, বাক স্বাধীনতা সংকটে পড়লে নামে, ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে নামে কিন্তু পাহাড়িদের শোষণ বঞ্চনার প্রতিবাদে কয়জন নামে? চব্বিশ বছর শোষণ করে একাত্তরে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তান। সেই অপরাধ আমরা এখনো ক্ষমা করিনি। গত চুয়াল্লিশ বছর ধরে শোষণ করছি পাহাড়িদের। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের নামে যে ধোকা তাদের দেয়া হয়েছে তাতে ওরা আমাদের ক্ষমা করবে তো?

 

লেখক : সহকারী সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ অক্টোবর ২০১৬/তারা