খেলাধুলা

২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টিতে ভেঙে যাওয়া ৫টি রেকর্ড

জহুরুল ইসলাম জহির : ২০১৬ সালটা টেস্ট কিংবা ওয়ানডেতে ভোগান্তিতে কাটলেও টি-টোয়েন্টিটা রোমাঞ্চকতায় কেটেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য। কেননা, যেখানে টেস্ট ২টি এবং ৯টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ, সেখানে টি-টোয়েন্টি খেলেছে ১৬টি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ দল ২০১৬ সালের শুরু থেকেই সংক্ষিপ্ত পরিসরের ক্রিকেটের ওপর বেশি জোর দিয়েছিল। তাই এ ফরম্যাটে সাফল্যও পেয়েছে টাইগাররা।

 

বছরের শুরুতে ফেব্রুয়ারি-মার্চে ঘরের মাটিতে এশিয়া কাপে রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। পরের মাসে ভারতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দারুণ শুরু করে সুপার টেনে উঠে বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। 

 

আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর বছর জুড়ে দ্বিপাক্ষিক কোন সিরিজে কেউ তেমন টি-টোয়েন্টি ম্যাচের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি, তবুও অনেক ক্রিকেটার তাদের পার্ফমেন্সে মুগ্ধ করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের। পুরাতন রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের নামের পাশে লিখিয়েছেন নতুন রেকর্ড। ২০১৬ সালে বিরাট কোহলি, শাহিদ আফ্রিদী, কেন উইলিয়ামসন, ক্রিস গেইল, মার্টিন গাপটিলদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা তাদের পার্ফমেন্স অব্যাহত রেখে গড়েছেন বেশ কিছু রেকর্ড।

 

২০১৬ সালে ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে ব্যাপক রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়া যোগ হয়েছে। রাইজিংবিডি পাঠকদের  জন্য এমন পাঁচটি রেকর্ড তুলে ধরা হল যা ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভেঙে গেছে।

 

১. দুই বারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজ : বর্তমান সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল বেশ পিছিয়ে। কিন্তু সেই দলটাকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্লেষণ করুন চোখের সামনেই আবির্ভাব হবে অন্যরকম শক্তিশালী একটা দল। যার শক্তিমত্তা বিচার করতে আপনিও হিমশিম খেয়ে যাবেন। কারণ একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলই আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি দুইবার ঘরে তুলেছে।

 

আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ৬ষ্ঠ আসরের শুরু থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল এবার কোন রেকর্ডের স্বাক্ষী হবে ক্রিকেট বিশ্ব। বিগত ৫ বার নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ঘরে তুলেছে ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলংকা। কিন্তু এই আসরে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার পাশাপাশি এটাও বিবেচনায় রাখা হয়েছিল আইসিসি’র ছোট দলগুলোও এই ট্রফি জয় করতে পারে। ধারণার বাইরে ছিল না আগের পাঁচ চ্যাম্পিয়নদের কথাও। যারা দ্বিতীয় বারের ন্যায় ট্রফি ঘরে তুলতে পারে। আর শেষমেষ হল সেটাই, সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

 

২. ইনিংস সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড : টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানের নাম ব্রেন্ডান ম্যাককালাম। তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে অবসর নেওয়ার আগে অনেক রেকর্ড নিজের দখলে রাখেন। যার মধ্যে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডটি ছিল তারই দখলে। কিন্তু সেই রেকর্ডটির বর্তমান মালিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা ক্রিস হেনরি গেইল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং দানব আবারও প্রমাণ করে দিলেন তিনি ছোট ফরম্যাটের বড় তারকা এবং কতোটা ভয়ঙ্কর। তিনি মাত্র ৪৮ বলে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। যেটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপের সেই বিস্ফোরক ইনিংসে ক্রিস গেইল ৫টি চার এবং ১১টি ছক্কার হাঁকান।  আর ভেঙে দেন ২০০৭ সালে ম্যাককালামের গড়া এক ইনিংসে ১০টি ছক্কার রেকর্ড।

 

৩. সবচেয়ে বেশি ম্যাচ এবং উইকেট শিকারি : ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেশ কয়েকটি রেকর্ড উলট-পালট হয়। সদ্য শেষ হওয়া আসরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ এবং উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও হয়। এর বাইরেও বিশ্বকাপে চারজন ব্যাটসম্যান ২০০ এর অধিক রান করার গৌরব অর্জন করেন। ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান তিলকারত্নে দিলশান ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু তার আগে একটি রেকর্ড নিজের নামে যোগসাজস করে যান দিলশান। তার দীর্ঘদিনের সতীর্থ খেলোয়াড় কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধানে এবং লাসিথ মালিঙ্গা’কে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার অনন্য নজির গড়েন দিলশান। তিনি বিশ্বকাপ মঞ্চে সর্বোচ্চ ৩৫টি ম্যাচ খেলেন।

 

শহিদ খান আফ্রিদি বিশ্বকাপের মঞ্চে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ খেললেও বল হাতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার একমাত্র তিনিই। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গাকে (৩৮টি উইকেট) পিছনে ফেলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বনে যান। শাহিদ আফ্রিদি বিশ্বকাপ আসরে ৪ ম্যাচে ৪টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ ৩৯টি উইকেট নিজের নামের পাশে যোগ করেন। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৯৭টি উইকেট নিয়ে সেরা উইকেট শিকারি শাহিদ খান আফ্রিদি।

 

৪. সর্বোচ্চ রানের জুটি : ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে ২টি সর্বোচ্চ রানের জুটি দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন এবং মার্টিন গাপটিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়েন। দুজনে মিলে ১৭১ রানের অপরাজিত জুটি গড়ে আগের সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড ভেঙ্গে দেন। পাশাপাশি উইলিয়ামসন ও গাপটিল দুজনেই অপরাজিত অর্ধশত রানের ইনিংস উপহার দেন। এতদিন এই রেকর্ডটির দাবিদার ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ব্যাটসম্যান। ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার লুইটস বোসমেন এবং গ্রায়েম স্মিথের জুটি ১৭০ রানের জুটি গড়ে রেকর্ড গড়েছিলেন।

 

৫. সবেচেয়ে বেশি রান এবং অর্ধশতক : তাকে শচিন টেন্ডুলাকারের সাথে তুলনা করা হয়। ভারতীয় ক্রিকেট দলের নিয়মিত সদস্য এবং টেস্ট দলের অধিনায়ক। বলছি ভারতের তারকা ক্রিকেটার বিরাট কোহলির কথা। কোহলি বিশ্ব ক্রিকেটে এমন একজন ব্যাটসম্যান যার ব্যাটিংয়ের প্রশংসা তার শত্রুরাও করেন। ২০১৬ সালে বিরাট কোহলি টেস্ট থেকে শুরু করে ওয়ানডে এবং টি-টুয়েন্টিতে অনেক রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের নামে করেছেন। বলা বাহুল্য গেল বছরের শুরুতেই চার মাসের মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জকাবর্ষে সর্বোচ্চ রানের মালিক বনে যান কোহলি।

 

বিরাট কোহলি ১২ ইনিংসে ১২৫ গড়ে ১৩০.৫০ স্ট্রাইক রেটে সর্বোচ্চ ৬২৫ রান করেন। এর বাইরে কোহলি টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ৭টি অর্ধশতক নিজের নামের পাশে যোগ করেন। ২০১২ সালে এই অনন্য রেকর্ডের মালিক ছিলেন নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিল। গাপটিল ১৩ ম্যাচে ৪৭২ রান করেছিলেন।

 

কোহলির পরে দ্বিতীয় স্থানে আছেন টাইগার টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান রুম্মন। ১৬ ম্যাচে ৩৫.৬১ গড়ে ১২৭.৫৪ স্ট্রাইক রেটে ৪৬৩ রান করেছেন সাব্বির রহমান।     রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জানুয়ারি ২০১৭/জহুরুল ইসলাম জহির/আমিনুল