লাইফস্টাইল

অন্তর্মুখীদের কথা

ইয়ামিন (আরচুভ) :  অন্তর্মুখীদের নিয়ে লেখা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইগুলোর মধ্যে ‘কোয়াইট’ বইটি অন্যতম। সুসান কেইনের এই বইয়ের ভাষ্যমতে, পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ মানুষই অন্তর্মুখী। অন্তর্মুখীদের সংখ্যা এত বেশি হওয়া সত্বেও এরা প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝির স্বীকার হয়। এদেরকে সবসময় অসামাজিক হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্তর্মুখী মানুষ সাধারণত কম কথা বলে। লজ্জা এবং জড়তার কারণে এরা অন্যদের চেয়ে ভুল বেশি করে। শান্ত শৃঙ্খল স্বভাবের জন্যই তাদেরকে আত্মকেন্দ্রিক ভাবা হয়। অন্তর্মুখীরা সকল সম্পর্কগুলোকে তাদের নিজস্ব পরিমন্ডলে নিয়ে আসতে চায় এবং এটাই তাদের সহজাত আচরণ। কিন্তু এই বহির্মুখ ব্যক্তিত্বের বিশ্ব অন্তর্মুখীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে থাকে এবং তাদের মূল্যবোধকে উপেক্ষা করে থাকে। আসলে অন্তর্মুখীরা চায় তাদেরকে যেন অন্যরা একটু হলেও বোঝে। * শান্ত আর লাজুক স্বভাবের মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। অন্তর্মুখীরা সাধারণত শান্তশিষ্ট হয়। সুসান কেইন তার এক ভাষণে লাজুকতাকে ‘সামাজিক লোকলজ্জার ভয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যার সঙ্গে অন্তর্মুখী ব্যক্তিদের মতামত নিজের মনে মধ্যে রাখা এবং যখন প্রয়োজন অনুভব করে তখন প্রকাশের বিষয়টির পার্থক্য রয়েছে। * অন্যদের কথাবার্তার মধ্যে নিজেদের মতামত দেয়াকে তারা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। তারা বেশিরভাগ সময়ে প্রখর শ্রবণশক্তি দিয়ে শ্রোতার ভূমিকা পালন করে। * তার মানে এটা না যে, তাদের মধ্যে কোনো অসাধারণ আইডিয়া নেই অথবা তারা শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী নয়। বরং অন্তর্মুখী ব্যক্তিরা প্রায়ই বড় মাপের বক্তা হয়ে ওঠে। * অন্তর্মুখীরা সাধারণত অপ্রকাশিত ছায়া হয়েই থাকে। কারণ তারা কিছু বলার আগে সে ব্যাপারে ভাবতে থাকে আর ততক্ষণে এক্সট্রোভার্টরা (বহির্মুখী বা যারা নিজেদের চিন্তাগুলো প্রকাশ করতে পছন্দ করে) চিন্তা করার সঙ্গে সঙ্গে তা প্রকাশ করে দেয়। * অন্তর্মুখীরা তাদের চিন্তাগুলোকে সবার সামনে প্রকাশ করার আগে নিঃশব্দে সাজাতে থাকে, এদিক দিয়ে দেখলে এদেরকে সবসময়ই প্রস্তুত অবস্থায় পাওয়া যায়। * কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের পর পরস্পরের সঙ্গে আলাপচারিতা থেকে এরা সবসময় দূরে থাকে। * অন্তর্মুখীরা দীর্ঘ এবং অর্থপূর্ণ আলোচনা বেশ উপভোগ করে। অহেতুক দীর্ঘ খুচরা আলাপ এদের কাছে এক ধরনের নির্যাতন। তারা সাধারণত সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে মানিয়ে নিতে পারে না। তবে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে লোকজনের সঙ্গও এরা অপছন্দ করে না। * কোনো অনুষ্ঠান শেষ হলে মানসিকতাকে গুছিয়ে নেয়ার জন্য লোকচক্ষুর আড়াল হওয়াটা এদের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে ওঠে। * নিজেদের ভিতরের শক্তিকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য ঘর ছেড়ে বেশিদিন বাইরে থাকার অনীহা এদের চিরকালের। * অন্তর্মুখীরা নিজেদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং নিজস্বতার ব্যাপারে আপোষহীন। সভার মধ্যমনি হতে এরা পছন্দ করে না। সবার সামনে বসায় চেয়ে পেছনের দিকে বসাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। * ফোন কল এদের কাছে কোনো বাবলের মধ্যে বিরক্তিকর পিন ফুটিয়ে দেয়ার মতোই। * অন্তর্মুখীরা হয়তো সমাজের আনন্দদায়ক উড়ন্ত প্রজাপতির মতো না, তবে তারা তাদের খোলস থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে না। * অনুভূতি এবং শান্ত শক্তির মাধ্যমে তারা সত্যিকারের শক্তিশালী সম্পর্ক প্রত্যাশা করে থাকে। তথ্যসূত্র : ইনসাইডার  

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জুলাই ২০১৭/ফিরোজ