ক্রীড়া ডেস্ক : শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, হারারে স্পোর্টস ক্লাব ও কলম্বোর আর. প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম। উপরের স্টেডিয়ামগুলো শতাধিক ওয়ানডে ম্যাচ আয়োজনের মাইলফলক ছুঁয়েছে আগেই। এবার সেই তালিকায় প্রবেশ করতে যাচ্ছে মিরপুরের শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। তবে উপরে উল্লেখিত স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে ১০০ ওয়ানডে ম্যাচ আয়োজন করতে যাচ্ছে মিরপুর স্টেডিয়াম। মাত্র ১১ বছরে শততম ওয়ানডে ম্যাচ হতে যাচ্ছে স্টেডিয়ামটিতে। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় স্টেডিয়ামটি। ওই বছরের ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচ আয়োজন করে মিরপুর। যা ছিল স্টেডিয়ামটির ইতিহাসে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় জিম্বাবুয়ে এই মাঠের শততম ম্যাচেও মাঠে নামতে যাচ্ছে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। অবশ্য এই ম্যাচকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কোনো পরিকল্পনা হাতে নেয়নি। নানাভাবে উদযাপন করা যেত মিরপুর স্টেডিয়ামের মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচটি। মিরপুর স্টেডিয়াম গেল ১১ বছরে অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। অনেক স্বপ্ন ডালপালা মেলেছে এখানে। অনেক স্বপ্ন হয়েছে ধুলিসাৎ। কত উল্লাসের সাক্ষী হয়েছে স্টেডিয়ামটি। হয়েছে কান্নার সাক্ষীও। কত শত গল্পের জন্মদাতা এই স্টেডিয়াম তার ইয়ত্তা নেই। এই মাঠেই ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। এই মাঠেই জন্ম হয়েছে ‘বাংলাওয়াশ’ শব্দটির। এই মাঠে খেলেই ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে হেরে কান্নার রোল পড়েছিল এই মাঠেই। এরপর এই মাঠেই পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। এ মাঠেই ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়ের ইতিহাস গড়েছে টাইগাররা। আজকের এই ম্যাচের আগে এই মাঠে যে ৯৯টি ম্যাচ হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ খেলেছে ৮৪টিতে। যেখানে বাংলাদেশের জয় ৪০টিতে। মিরপুর শুধু একটি স্টেডিয়াম নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু। এখানে ক্রিকেটের প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই পাওয়া যায়। আছে অনুশীলনের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই। এখানেই ক্রিকেট বোর্ডের হেডকোয়ার্টার্স। ক্রিকেটার ও কোচরা এই মাঠের ভক্ত। তবে এটি ক্রিকেট ভেন্যু হওয়ার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক গৌরব ও ইতিহাস লেখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। ১৫ বছর আগে সেখানে হয়েছিল সবশেষ ক্রিকেট ম্যাচ। ১৯৫০ সালে নির্মিত হওয়ার পর ঢাকা স্টেডিয়াম অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল এই স্টেডিয়ামে। এরপর ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের আরো ছয়টি টেস্টের আয়োজক ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম (তৎকালিন ঢাকা স্টেডিয়াম)। সেই সময়ের অনেকের কাছেই এই স্টেডিয়াম স্মৃতির পাহাড়। সে সময় অনেকেই বাবা কিংবা বড় ভাইয়ের হাত ধরে প্রথমবারের মতো স্টেডিয়ামে গিয়েছিল। কিংবা টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে এক নজর সেই সময়ের তারকাদের দেখতে স্টেডিয়ামে হাজির হয়েছিল স্কুলগামী ছেলেরা। তবে স্বাধীনতার পর স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়ার অনেক ইতিহাস রচিত হয়েছে এই মাঠে। তখন নতুন দেশটির ক্রীড়াঙ্গন ছিল এই স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ কিংবা টুর্নামেন্ট, আন্তর্জাতিক কিংবা ঘরোয়া আয়োজন- বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জয় খুবই কম। অবশ্য তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের শুরুর দিক ছিল। তখন বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে জিততে নয়, লড়াই করতে মাঠে নামত বাংলাদেশ। তবে জয় না পাওয়াটা স্টেডিয়ামের দোষ নয়। ১৯৮৮ সাল থেকে সহযোগী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলছিল। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ভারতের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই প্রথম টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। তবে ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়েকেও ওয়ানডেতে এই মাঠে হারিয়েছিল টাইগাররা। তখন একই মাঠে ফুটবল ও ক্রিকেট হত। শীতের মৌসুমে ক্রিকেট। আর বর্ষা মৌসুমে ফুটবল। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন বাংলাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকল তখন ফুটবলের সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে শুরু করল ক্রিকেটের সূচি। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের সংখ্যা বাড়তে শুরু করলে ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে দ্বন্দ্বও বাড়তে শুরু করে। তবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মেলবোর্নের মতো একই মাঠে ক্রিকেট ও ফুটবল চালিয়ে নিতে পারেনি। তার উপর ফুটবল ও ক্রিকেট দুটি ফেডারেশনের সহাবস্থান সম্ভব হয়নি। তাই ২০০৪ সালে সরকার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে মিরপুরে আয়োজন করতে তাগাদা দেয়। তবে তখন মিরপুরে কিছু কিছু ফুটবল ম্যাচ হত। কিন্তু প্রায় প্রত্যেক ম্যাচের পরেই হাতাহাতির ঘটনা ঘটত। কখনো কখনো ম্যাচ চলাকালিনও হত দুই পক্ষের সমর্থক, কমর্কর্তাদের হাতাহাতি। তবে যখন ক্রিকেট বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মিরপুরে চলে আসে তখন মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল ক্রীড়াঙ্গনে। কেউ কেউ মনে করেছিল ফুটবল কর্তাদের ঈর্ষার কারণেই ক্রিকেটকে সরে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছিল ক্রিকেটের বন্ধু বলে কেউ কী সরকারের আমলা-মন্ত্রীদের মধ্য নেই? তবে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে সময় লাগেনি। আস্তে আস্তে মিরপুর হয়ে ওঠে হোম অব ক্রিকেট। ২০১১ বিশ্বকাপের আগে মিরপুর ও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অনেক সংস্কার হয়। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয় অনেক। বিশেষ করে মিরপুর স্টেডিয়ামের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে। মিরপুরে এখন সবই হয়। সিনিয়র, ‘এ’ টিম, হাই পারফরম্যান্স টিম, উইমেন্স ক্রিকেট কিংবা বয়সভিত্তিক ক্রিকেট। এখন আর ট্রেনিং ক্যাম্প করতে বিকেএসপিতে যেতে হয় না দলগুলোকে। এখানেই তারা করতে পারে সবকিছু। তথ্যসূত্র : ক্রিকইনফো রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জানুয়ারি ২০১৮/আমিনুল