কুষ্টিয়া সংবাদদাতা: কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে নিভৃতে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে ‘কুষ্টিয়া আমলা সরকারি ডিগ্রি কলেজ’। গ্রামবাংলার কৃষক পরিবারের সন্তানরাও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে। মিরপুর উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত কলেজটির গৌরবের ইতিহাস হচ্ছে, স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা মারফত আলীর প্রচেষ্টায় জাতীয়করণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমলা সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা, মনন, সৃষ্টিশীলতা ও দক্ষতার পরিচয় বহন করে চলেছে । আনন্দের খবর হচ্ছে, গ্রামে অবস্থিত কলেজটিতেও লেগেছে দিনবদলের হাওয়া। কলেজটি এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছে। এ বছর পাশের হার ৭৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত দুই যুগে সর্বোচ্চ। তবে কলেজের শিক্ষকদের লক্ষ্য ১০০ ভাগ সাফল্য। কলেজটিকে একটি আধুনিক ও রোল মডেল হিসাবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কলেজের শিক্ষকরা। কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে এই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখা থেকে ৪২৮জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ২৮০জন কৃতকার্য হয়। সে বছর পাশের হার ছিলো ৬৫ দশমিক ৪২ শতাংশ। ২০১৭ সালে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখা থেকে ৩৯২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ২১২ জন কৃতকার্য হয়। পাশের হার ছিলো ৫৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে তিনটি শাখা থেকে ৩৯৪জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩১০জন কৃতকার্য হয়। এতে পাশের হার পৌঁছে ৭৮ দশমিক ৬৮ শতাংশতে। এ বছরের ফল ভাল হওয়ায় কলেজ সংশ্লিষ্ট সবাই খুশী। ভাল ফলে উচ্ছসিত কলেজের অধ্যক্ষ মহব্বত হোসেন জানালেন, ‘আমাদের সকলের লক্ষ্য ২০১৯ সালে এই কলেজের পাশের হবে শতভাগ।’ তিনি বলেন, ‘আমি এই কলেজে আসার পর শিক্ষার্থীদের একটি নিয়মের মধ্যে এনেছি। কলেজে উপস্থিতি ৮০% এর উপরে। সকল শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক কলেজ পোশাক চালু করেছি। বিনোদনের জন্য বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ব্যবস্থা করেছি। খেলাধুলার সামগ্রির ব্যবস্থা করেছি। সেই সাথে কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ডের মাধ্যমে কলেজ গেটে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছি। দুপুরে খাবারের জন্য ক্যান্টিন চালুর ব্যবস্থা চলছে।’ অধ্যক্ষ মহব্বত হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নিয়মিত ক্লাস টেস্ট ও মডেল টেস্ট পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। কলেজের শোভা বর্ধনে ফুলের বাগান গড়েছি। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের লেখায় নিয়মিত দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে। তাদের জ্ঞান চর্চার জন্য লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছি।’ এইচএসসি (মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায়ী) শাখার পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি (পাস) কোর্স চালু রয়েছে কলেজটিতে। তবে নেই সম্মান ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ। এতে হতাশ কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ অভিভাবক। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ মহব্বত হোসেন বললেন, ‘আমরা একটি হোস্টেল এবং একাডেমিক ভবনের জন্য আবেদন করেছি। সেই সাথে অনার্স কোর্স চালু করার লক্ষ্যে ভাইস প্রিন্সিপাল পদসহ ৪৪টি পদে শিক্ষকের জন্য আবেদন করেছি। সেই সাথে বি কম কোর্স চালুর জন্যও আবেদন করেছি।’ তিনি বলেন, ‘কলেজ ক্যাম্পাসে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। এখানে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় দিবসগুলো পালিত হচ্ছে। কলেজে দলগত শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমরা চাই এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সহায়তায় এই কলেজটিতে একটি আধুনিক ও মানসম্পন্ন আদর্শ বিদ্যাপিঠ হিসাবে গড়ে তুলতে। আমাদের লক্ষ্য হলো এই কলেজের কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবে না।’ ধবধবে সাদা পোশাকে তারুণ্যের উচ্ছলতা যেন ঘিরে রেখেছে কলেজটিকে।দুই তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন, তিন তলা বিশিষ্ট বিজ্ঞানভবন, এক তলা বিশিষ্ট কলা ও তিন তলা বিশিষ্ট ডিগ্রিভবন সমৃদ্ধ কলেজটি ঘিরে এলাকার মানুষের স্বপ্ন অনেক। রাইজিংবিডি/কুষ্টিয়া/২৪ জুলাই ২০১৮/কাঞ্চন কুমার/টিপু