আইন ও অপরাধ

পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা : ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় দশজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে ডিবি পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান গত ৮ এপ্রিল সিএমএম আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানা গেছে। চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- রবিউল ইসলাম (৩০), রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া (২১), ইমরানের বন্ধু রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩) এবং দুই কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণ ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফী (১৬) ও ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশা (১৬)। ২০১৮ সালের ৯ জুলাই গাজীপুরের জঙ্গল থেকে মামুন ইমরান খানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় মামুনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। চার্জশিটে বলা হয়, টেলিভিশনে ক্রাইম ফিকশনে রহমত উল্লাহর সঙ্গে অভিনয়ের সূত্র ধরেই তার সঙ্গে মামুন ইমরান খানের পরিচয় ও বন্ধুত্ব। ওই দুজনের সঙ্গে অভিনয় করত কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণা। সে অপরাধী চক্রের প্রধান রবিউলের স্ত্রী কেয়াকে জানায়, রহমত উল্লাহর অনেক টাকা আছে। তাকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করা সম্ভব। ওই কিশোরী পূর্বপরিকল্পিতভাবে রহমত উল্লাহকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করতে জন্মদিনের কথা বলে ফোন দিয়ে আসতে বলে। ফোন পেয়ে রহমতউল্লাহ ইমরানকেও ওই অনুষ্ঠানে আসতে আমন্ত্রণ জানায়। ইমরান ও রহমত উল্লাহ ২০১৮ সালের ৮ জুলাই বনানীর ওই বাসার নিচে আসলে ওই কিশোরী দুজন মহিলাসহ নিচে আসেন। সে একজনকে বোন এবং একজনকে ভাবি পরিচয় দেয়। এরপর তাদের বাসার ভেতরে নিয়ে যায়। বাসায় গিয়ে তারা দেখেন, জন্মদিনের কোনো আয়োজনই নেই। তখন রহমত উল্লাহ ওই কিশোরীকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের নাকি বার্থডে পার্টি, কিন্তু তার তো কিছু দেখছি না।’ তখন চক্রের প্রধান রবিউলের স্ত্রী কেয়া বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের বার্থডে পার্টি এরকমই হয়। একটু পরই দেখতে পাবেন।’ কেয়া ওই কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর স্বপন, দিদার, আতিক ও মিজান আসেন। তারা মামুন ও রহমতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে তোরা এখানে এসেছিস।’ তখন ইমরান ওই কথার প্রতিবাদ করলে সঙ্গে সঙ্গে ওই চারজন ইমরানকে মারতে শুরু করেন। আসামি স্বপন, আতিক ও দিদার বলে, ‘ওদের হাত-পা বেঁধে ফেলো। মেয়েদের সঙ্গে ছবি তুলে টাকা আদায় করা হবে।’ তখন ইমরানকে চেপে ধরে স্বপন, আতিক ও দিদার। হাত-পা বাঁধেন দিদার ও স্বপন। আসামি মিজান মুখ চেপে ধরলে ইমরান তার হাতে কামড় দেন। তখন মিজান ও দিদার পেছন থেকে ইমরানের ঘাড়ে আঘাত করেন এবং আতিক জোরে লাথি মারলে ইমরান অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন রহমত উল্লাহকেও হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়। চার্জশিটে বলা হয়, রাত ১২টার দিকে স্বপন বলে, ইমরানের হাত-পা কেমন শক্ত মনে হচ্ছে। তখন প্রধান আসামি রবিউলকে সে ওই তথ্য মুঠোফোনে জানায়। এরপর রবিউলের পরামর্শে আসামি স্বপন, আতিক ও দিদার ধারালো অস্ত্র দিয়ে মামুনের পায়ের আঙুল কেটে রক্ত বের না হওয়ায় তারা নিশ্চিত হন পুলিশ কর্মকর্তা ইমরান মারা গেছেন। স্বপন আর দিদার তখন রবিউলকে ফোন দিয়ে বড় একটা ট্রলি বা বস্তা নিয়ে আসতে বলেন। সকাল ৭টায় আসামি স্বপন, দিদার ও আতিক লিফটে করে মামুনের লাশ নিচে নিয়ে এসে রহমত উল্লাহর প্রাইভেট কারের পেছনে রাখে। রহমত উল্লাহ গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। গাড়িতে দিদার, আতিক, স্বপন ও মিজান ছিল। প্রধান আসামি রবিউল সামনে মোটরসাইলে ছিল। গাড়িটি বনানী থেকে আবদুল্লাহপুর যাওয়ার পথে বাঁশঝাড় দেখে আসামি স্বপন রহমত উল্লাহকে গাড়ি থামাতে বলেন। তখন গাড়ি থেকে লাশ বাঁশঝাড়ের মধ্যে নিয়ে আতিক লাশের গায়ে পেট্রল ঢালে এবং স্বপন আগুন দেয়। এরপর রহমত উল্লাহ গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। চার্জশিটে আরো বলা হয়, বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করাই ছিল ওই চক্রের কাজ। এ চক্রের প্রধান রবিউল ইসলাম।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ এপ্রিল ২০১৯/মামুন খান/রফিক