সারা বাংলা

হেমায়েত বাহিনীর দাপটে মুক্ত হয়েছিল কোটালীপাড়া

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর। এদিন পাক-হানাদার মুক্ত হওয়ায় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বয়ে গিয়েছিল আনন্দের বন্যা। মুক্তির স্বাদ পেয়ে মানুষ দলে দলে নেমে এসেছিল রাস্তায়।

গোপালগঞ্জে কোটালীপাড়াই প্রথম হানাদার মুক্ত হয়। প্রায় ৫’শ পাকহানাদারকে পরাস্ত করে কোটালীপাড়াকে শত্রুমুক্ত করেছিল হেমায়েত বাহিনী।

এ অঞ্চলে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা ছিল খুবই শক্ত অবস্থানে। এ এলাকারই সন্তান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষক হেমায়েত উদ্দিন যুদ্ধ শুরু হলে দেশে পালিয়ে আসেন। পাক হানাদারদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করতে সে সময়ে এদেশে কয়েকটি অঞ্চলে গঠিত হয়েছিল কয়েকটি বাহিনী। তারমধ্যে অন্যতম হেমায়েত বাহিনী। ৮হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন হেমায়েত বাহিনী। কোটালীপড়ায় তিনি একটি ট্রেনিং ক্যাম্পও গড়ে তোলেন। যেখানে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরকেও যুদ্ধের ট্রেনিং দেয়া হতো।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বেশ কয়েকটি সম্মূখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় হেমায়েত বাহিনী। ৭২টি গ্রুপের সমন্বয়ে গঠিত এই হেমায়েত বাহিনী অনেক যুদ্ধ’র মুখোমুখি হয়েছিল। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ হয় হরিনাহাটি, মাটিভাঙ্গা, বাঁশবাড়িয়া, ঝনঝনিয়া, জহরের কান্দি, কোটালীপাড়া সদর প্রভৃতি স্থানে। এ ছাড়া ছোট ছোট যুদ্ধও হয়েছে বেশ কয়েকটি। আর এসব যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন হেমায়েত বাহিনী প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীর বিক্রম নিজেই।

হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ২৪জন আহত হন। নিহত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন-কোটালীপাড়া উপজেলার গোলাম আলী, বেলায়েত, আবুতালেব, আবুল খায়ের, মোক্তার হোসেন, রতন কুমার, মোয়াজ্জেম হোসেন, টুঙ্গীপাড়া উপজেলার বেলায়েত হোসেন, মুকসুদপুর উপজেলার আবুল বাশার, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ছাত্তার মৃধা, সেকেন্দার, নুরু বেপারী, পরিমল শীল, আগৈলঝাড়া উপজেলার তৈয়াবালী, নলসিটি উপজেলার ওসমান, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার মকবুল হোসেন, আঃ ছাত্তার এবং ঢাকার ইব্রাহিম।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হেমায়েত বাহিনীর সদস্যরা ১৩৪টি অপারেশন পরিচালনা করেন। এর মধ্যে রামশীলের যুদ্ধ অন্যতম। হেমায়েত বাহিনী প্রধান রামশীলের যুদ্ধে মারাত্মকভাবে আহত হন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের কারণে দেশ স্বাধীন হবার পর হেমায়েত উদ্দিনকে “বীর বিক্রম” খেতাবে ভুষিত করা হয়।

দিবসটি পালন উপলক্ষে আজ হেমায়েত বাহিনী কোটালীপাড়া উপজেলার টুপরিয়া গ্রামে অবস্থিত হেমায়েত বাহিনী স্মৃতি যাদুঘরে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে।

 

গোপালগঞ্জ/বাদল সাহা/টিপু