ক্যাম্পাস

শকুন

এক সময়ে নদীর ধারে, খোলা মাঠে দুপুরে দাঁড়ালে দেখা যেত দু’ডানায় ভর করে শোঁ শোঁ শব্দ করে উড়ে বেড়াচ্ছে বড় এক প্রকারের পাখি। জলবায়ুর পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে এখন আর সচরাচর দেখা মেলছে না এদের। বলছিলাম প্রাকৃতিক সুইপার খ্যাত শকুনের কথা। এ পাখির দেখা মেলে এখন শুধু জাদুঘরে।

বন্য প্রাণী ও পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শকুনের জাত রক্ষা করা না গেলে কয়েক বছরের মধ্যে প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে এরা। বাস্তবে নয়, তখন বইয়ে ছবি দেখে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চেনাতে হবে। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কোনোভাবে টিকে আছে সরু ঠোট প্রজাতির শকুন। এরা মৃত পশু-পাখি খেয়ে পরিবেশ দূষণ কমায়। একই সঙ্গে অ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন রোগের জীবাণু ছড়ানোর হাত থেকেও পরিবেশকে রক্ষা করে। এ কারণে শকুনকে বলা হয় ‘প্রকৃতির সুইপার’। গোটা পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতির শকুন থাকলেও বাংলাদেশে দেখা যায় মাত্র ৭ প্রজাতি। বর্তমানে তাও বিলুপ্ত প্রায়।

জানা গেছে, ৮০’র দশকে পটুয়াখালী জেলা ও গলাচিপা উপজেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকাগুলোর নদ-নদীর চরে দল বেঁধে ঘুরত শকুনের ঝাঁক। আকাশে ছায়া ফেলে চক্কর দিত শকুনরা। এরা অশুভ তো নয়ই, হিংস্রও নয়। চিল, ঈগল বা বাজপাখির মতো শিকারিও নয়। এটা আমাদের পরিবেশের পরম বন্ধু। মৃত পশু খেয়ে শকুন আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। এরা কখনই জীবিত মানুষকে আক্রমণ করে না। প্রখর দৃষ্টিশক্তির অধিকারী পাখিটি বটগাছ, কড়ইগাছ, শিমুল, বাঁশঝাড়, দেবদারু গাছে বাসা বানাত।

শকুনের দৃষ্টি এতটাই প্রখর যে, অনেক উঁচু থেকেও মাটি বা পানির ওপরে থাকা খাবার দেখতে পায়। এ পাখি একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০টি ডিম পাড়ে। তিন সপ্তাহ তা দেয়ার পর বাচ্চা ফোটে। এর স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ২৫ বছর। তিন থেকে চার ফুট উচ্চতার হয় এই পাখি। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্রমাগত কমছে শকুনের সংখ্যা। সত্তরের দশক থেকে এ পর্যন্ত শকুন হ্রাসের পরিমাণ প্রায় ৯৮ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃত পশুর মাংস শকুনের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু ডাইক্লোফেনাক দেয়া হয়েছে এমন মৃত পশুর মাংস খেলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২-৩ দিনের মধ্যে শকুনের মৃত্যু ঘটে। এ কারণে গত তিন দশকে উপমহাদেশে ৯৭ শতাংশ শকুন মারা গেছে।

তাই শকুনকে এ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এখনই যদি পরিবেশ রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে অচিরেই হারিয়ে যাবে প্রাকৃতিক সুইপার খ্যাত শকুন।

লেখক: শিক্ষার্থী, কম্পিউটার টেকনোলজি, বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। গলাচিপা (পটুয়াখালী)/হাকিম মাহি