যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় শত শত নারী, পুরুষ, শিশুসহ বাস, ট্রাক চালক ও শ্রমিকদের।
অথচ এই ঘাটে এদের জন্য নেই কোনো ভাল খাবার হোটেল, বিশ্রামাগার ও শৌচাগার। যে কারণে এই রুটে চলাচলকারীদের সবসময় চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, দীর্ঘ ৪৫ বছর আগে দুইটি ছোট ছোট ফেরি নিয়ে আরিচা-নগরবাড়ি ও আরিচা-গোয়ালন্দ রুটে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছিল। পদ্মা-যমুনায় ডুবোচর জেগে ওঠায় পলি জমে নদী সংকুচিত হওয়ায় ১৯৯৮ সালে আরিচা ঘাট পাটুরিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। গোয়ালন্দ ঘাট সরে আসে দৌলতদিয়ায়। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ায় নগরবাড়ি ঘাটের গুরুত্ব একেবারেই কমে আসে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫শত থেকে ২৭শত ছোটবড় গাড়ি পারাপার হয়।
অন্যদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট রুটে ৩৬ টি লঞ্চে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার যাত্রী পারাপার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা। তবে ঈদ বা বড় কোনো ছুটির সময় এই ঘাট দিয়ে এর কয়েকগুন বেশি যাত্রী পারাপার হয়।
দেশের অন্যতম এই নৌরুটে রুটে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও ঘাট এলাকায় নেই পর্যাপ্ত ল্যাট্রিন, বাথরুমের ব্যবস্থা। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাটুরিয়া ঘাটে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএর দুটি টার্মিনাল। দু`টি টার্মিনালে রয়েছে ১২টি বাথরুম।
পাটুরিয়া ঘাটে অপেক্ষমান কয়েক জন মহিলা যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, এ টার্মিনালে যে বাথরুমগুলো আছে তা একেবারেই ব্যবহারের অনুপোযোগী। তারা জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে আটকে থাকতে হলেও কোনো দিন ভাল করে বাথরুম ব্যবহার করতে পারেননি। ফেরির বাথরুম ও , ল্যাট্রিনের অবস্থাও একই রকম। এদিকে অতিরিক্ত চাপের কারণে বাথরুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হয় না বলে ফেরির এক স্টাফ জানিয়েছেন।
বাথরুম সংকটের সুযোগে কেউ কেউ খুলে বসেছে পাবলিক টয়লেট। এই টয়লেটের অবস্থা ভাল না হলেও হাতের নাগালে থাকায় ব্যবহার করছেন অনেকে। তবে এর জন্য দিতে হচ্ছে জনপ্রতি ১০ টাকা।
যানজটের সময় পাটুরিয়া ঘাটে হোটেল রেস্টুরেন্টে যাত্রীদের কাছ থেকে গলা কাটা দাম রাখা ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রাস্তার ধারে এ সমস্ত হোটেল রেস্টুরেন্টে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই।
নোংরা পরিবেশে হয় রান্নাবান্না। নদীর পারের খোলা জায়গার বাতাসের সঙ্গে আসা রাস্তার ধুলাবালি এদের খাবার-দাবারের অংশ। এ অভিযোগ প্রতি সপ্তাহে এ ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী যশোরের যাত্রী আবুল হোসেনের।
তিনি জানালেন, যানজট হলেই এদের হয় পোয়াবারো। ভাত, মাছ, ডিম, মাংস, রুটি, পানির বোতল সবকিছুর দামই আদায় করে ইচ্ছা মতো। এর পর রয়েছে বিশাল হকার বাহিনী। গাজর, বড়ই, পেঁয়াজ, সেদ্ধ ডিম, কলা, ডাব, ঝালমুড়িসহ হরেক রকম খাবার নিয়ে বাসে বাসে ট্রাকে ট্রাকে হাঁটা যাত্রীদের কাছে যে যার মতো দামে বিক্রি করছে। দামের কথা বললে বলে, নিলে নেন নাইলে টাইম নাই।
বরিশালের রাশেদ এবং মামুন দুই বন্ধু এই রুটের নিয়মিত যাত্রী। দুজনেই দাবি করলেন পাটুরিয়া ঘাটে হোটেল রেস্টুরেন্টের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং দামের বিষয়টির ব্যাপারে কেউ কোনো সময়ই খোঁজ নেয় না।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর নদী ও বন্দর কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন জানান, ফেরি ও লঞ্চঘাটে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী পারাপার হচ্ছে। ঘাট এলাকা হওয়ার কারণে বাথরুমগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এগুলোর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে আরো বাড়ানো হবে। খাবারের হোটেলের মান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাইজিংবিডি / আশরাফুল / রণজিৎ