জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজ 'মাসুদ রানা' এবং 'কুয়াশা' সিরিজের ৩১০ বইয়ের প্রকাশ বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য প্রকাশক-মালিক কাজী আনোয়ার হোসেনকে নির্দেশ দিয়েছে কপিরাইট বোর্ড।
মাসুদ রানা সিরিজের ২৬০ এবং কুয়াশা সিরিজের ৫০টি বইয়ের মালিকানা দাবি করে লেখক শেখ আব্দুল হাকিম কপিরাইট অফিসে অভিযোগ দায়েরের পর রোববার (১৪ জুন) এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া আবেদনকারীর কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনকরা প্রকাশিত বইগুলোর সংস্করন ও বিক্রিত কপির সংখ্যা এবং বিক্রয় মূল্যের হিসাব বিবরণী এ আদেশ জারির তারিখের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিল করতে কাজী আনোয়ার হোসেনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৪ জুন) বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী এ তথ্য জানান।
রায়ের কপি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কাজী আনোয়ার হোসেন তার বয়ানে বলেছেন, অভিযোগকারী অর্থাৎ শেখ আব্দুল হাকিম সেবা প্রকাশনী নিয়মিত চাকরি করতেন। চাকরিতে নিয়োজিত থেকে মালিকের নির্দেশে যে সব বই লেখায় তিনি স্বত্ত্ব হিসেবে অধিকার করতে পারেন না। মাসুদ রানা সিরিজ এবং কুয়াশা সিরিজ সব বইয়ের সর্বস্বত্ত্ব প্রকাশকের।
শেখ আব্দুল হাকিম তার বয়ানে বলেছেন, কাজী আনোয়ার হোসেন ২০১০ সালে কপিরাইট অফিসে এক জবাবে বলেছিলেন- তিনি মাসুদ রানা ও কুয়াশার একটি বইও লিখেননি। এখন টাকা না দেওয়ার কৌশল হিসেবে তিনি বলছেন চাকরি করা অবস্থায় লিখেছি। আমিসহ সেবা প্রকাশনীর অন্যান্য লেখকরা সেখানে ফ্রিল্যান্স হিসেবে কাজ করেছি। কাজী সাহেব আমার নিয়োগকর্তা নন, আমি তার চাকরি করিনি। বইয়ের ভেতর স্বর্বস্বত্ত্ব প্রকাশনের লেখা থাকলেই সেটা প্রকাশকের হয় না। কাজী আনোয়ার হোসেনও গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে মাসুদ রানা সিরিজের লেখকদের লেখক এবং নিজেকে সম্পাদনাকারী বলে উল্লেখ করেছেন। তাহলে বইগুলো তার কীভাবে হলো?
কপিরাইট অফিস তাদের পর্যবেক্ষণে অভিযোগকারীর বক্তব্য দেশের খ্যাতিমান প্রচ্ছদ শিল্পী হাশেম খানের লিখিত বক্তব্যের সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে যায়। যা অভিযোগকারীর দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে। এদেশের বিখ্যাত কয়েকজন লেখক ও সেবা প্রকাশনীতে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ব্যবস্থাপকের বক্তব্য এবং কাজী আনোয়ার হোসেনের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে প্রমাণীত হয় যে, অভিযোগকারী শেখ আব্দুল হাকিম সেবা প্রকাশনীতে রয়্যালিটির বিনিময়ে পান্ডুলিপি জমা দিতেন। উভয়ের মধ্যে লেখক-প্রকাশকের সম্পর্ক থাকলেও কোনো লিখিত চুক্তিপিত্র ছিল না। এর ফলেই এ দ্বন্দ্বের উদ্ভব। অভিযোগকারী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কপিরাইট আইনের ৭১ ধারা ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। এ প্রেক্ষাপটে অভিযোগকারীকে প্রথমত: তার দাবি অনুযায়ী রচিত বইগুলোর কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের জন্যে উপযুক্ত প্রমাণসহ আবেদন করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: মাসুদ রানা সিরিজের 'জাল' ও কুয়াশা সিরিজের ৩৪, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪২, ও ৪৩ নম্বর বইগুলো যেহেতু তার নামে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন সনদ ইস্যু হয়েছে, সেহেতু বইগুলোর রয়্যালটির দাবি ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে কপিরাইট বোর্ডে কিংবা দেওয়ানি আদালতে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
তৃতীয়ত: তার নামে কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনকরা বই কোনো স্টোর, বাজার বা গুদামজাত করা থাকলে তা জব্দ করার জন্য স্থানীয় থানা কিংবা কপিরাইট টাস্ক ফোর্সের কাছে আবেদন করতে পারেন।
চতুর্থত: দায়রা আদালতে কপিরাইট আইনের ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের প্রতিকার চাইতে পারেন অথবা উভয়পক্ষের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সুষ্ঠু ও সম্মানজনক নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন।
২০১৯ সালের ২৯ জুলাই শেখ আব্দুল হাকিম দেশের নন্দিত রহস্য-রোমাঞ্চকর উপন্যাস ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে মালিকানাস্বত্ত্ব দাবি করে সেবা প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী কাজী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কপিরাইট আইনের ৭১ ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘনের এক অভিযোগ বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে দাখিল করেন। ঢাকা/নূর/এসএম