ক্যাম্পাস

স্টেম সেল থেরাপির আদ্যপ্রান্ত

প্রকৃতির সেরা জীব বলা হয় মানুষকে। সেই সেরা মানুষ প্রাচীন কাল থেকে নানা জরা-অসুখকে মোকাবিলা করে আসছে। প্রথম দিকে বিভিন্ন ভেষজ গুণসমৃদ্ধ গাছ, লতাপাতা দিয়ে শরীর ও মনের চিকিৎসা করলেও সময়ের পরিক্রমায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইসব চিকিৎসা ব্যর্থ হয়।

গবেষণার মাধ্যমে ঔষুধ আবিষ্কার করে মানুষ। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হয়। কিন্তু এমন অনেক রোগ আছে, যাতে ওষুধও ঠিক মতো কাজ করে না। সেক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে অনেক বিষয় বেরিয়ে আসে। হয়তো আপনি স্টেম সেলের কথা শুনেছেন। স্টেম সেল থেরাপি আমাদের কাছে নতুন একটি বিষয়। ধীরে ধীরে একদিন এটি আমাদের কাছে পরিচিত হবে। আসুন এ বিষয়ে আজকে জেনে নেই কিছু তথ্য।

১৯০৮ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ম্যাক্সিমভ স্টেম সেলের ধারণা দেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুগান্তর এনেছে স্টেম সেল থেরাপি। স্টেম সেল হলো অবিভাজিত জীবকোষ, যা আজীবন আরও অনেক সেল তৈরি করতে পারে। এটাকে কোষ তৈরির কাঁচামাল বলা যেতে পারে। নতুন কোষ তৈরি করার জন্য এরা বিভাজিত হয়। এই এক কোষ থেকে অনেক কোষ তৈরি হয় দুইভাবে।

১. বিভাজন (একটা কোষ থেকে দুটি কোষ তৈরি হওয়া)।

২. পৃথকীকরণ (এক ধরনের কোষ থেকে অন্য ধরনের কোষ তৈরি হওয়া)।

কয়েকটি স্টেম সেল নাম ও পরিচয়

অনেক ধরনের স্টেম সেল আছে, যেগুলো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়। এমব্রায়োনিক স্টেম সেল; ৩ থেকে ৫ দিন বয়সের মানব ভ্রুন থেকে এই কোষগুলো আসে। তবে এক্ষেত্রে নারীর শরীরের বাইরে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন করা হয়।

এডাল্ট স্টেম সেল; শরীরের সুগঠিত অঙ্গে এবং কিছু টিস্যুতে এই কোষ পাওয়া যায়। মজার বিষয় হচ্ছে এদের শরীরের যে অংশে পাওয়া যায়, সেখানে ড্যামেজ সেল সারিয়ে তুলতে সর্বদা কাজ করে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল বোন ম্যারোতে থাকে। এরা নতুন লোহিত এবং শ্বেত রক্ত কণিকা তৈরি করে।

ইনডিউসড প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল (iPSCs): বিজ্ঞানী রা iPSCs তৈরি করার জন্য এডাল্ট স্টেম সেলকে এমনভাবে জেনেটিক্যালি প্রোগ্রাম করে যে, তারা এমব্রায়োনিক স্টেম সেলের মতো কাজ করে। এরা নতুন ধরনের কোষ তৈরি করতে সক্ষম।

কর্ড ব্লাড স্টেম সেল; অম্বিকাল কর্ড থেকে এই সেল তৈরি হয়। সেল ব্যাংকে এই স্টেম সেলগুলো সংরক্ষণ করা যায়। শিশুদের ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসায় এটি সফলভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

এমাইনোটিক ফ্লুইড স্টেম সেল; এমাইনোটিক ফ্লুইডে এই কোষ পাওয়া যায়। এই তরল পদার্থ মায়ের পেটে সদ্য বেড়ে ওঠা ভ্রুনকে ঘিরে রাখে। যদিও এগুলো নিয়ে আরো গবেষণা করা দরকার।

এবার আসি চিকিৎসা ক্ষেত্রে এই স্টেম সেলের ব্যবহারের ব্যাপারে। যদিও স্টেম সেল থেরাপি অনেকের কাছে অপরিচিত এখনও। হার্ট অ্যাটাকে মৃত পেশীতে গিয়ে স্টেম সেলের প্রোটিন নতুন হৃদকোষ তৈরি করতে পারে। পায়ের শিরা পচে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলেও তৈরি করতে পারে নতুন শিরা। রক্তের ক্যানসার, কিছু বিশেষ ধরনের রক্তাল্পতা বা রশ্মি চিকিৎসায় অস্থিমজ্জা নষ্ট হয়ে গেলে, নতুন অস্থিমজ্জা তৈরতেও সে সক্ষম। তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় এই স্টেম সেল থেরাপি কি কোন কাজে আসবে? সে বিষয়ে আমাদের নতুন নতুন গবেষণা করতে হবে।

ভাইরাসের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। কখনও কখনও তারা অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রচুর পরিমাণে সাইটোকাইন রাসায়নিকের প্রবাহ শুরু হয়, যাকে বলে সাইটোকাইন স্টর্ম। এদের মধ্যে কিছু রাসায়নিক প্রদাহ ঘটিয়ে ফুসফুসের প্রচুর ক্ষতি করতে পারে। প্রদাহ কমাতে এবং অকেজো হয়ে যাওয়া অঙ্গ প্রতঙ্গ সারিয়ে তুলতে স্টেম সেল ব্যবহার করা যায় কিনা,  আমরা ভেবে দেখতে পারি। তবে Stem Cell দিয়ে চিকিৎসার অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে কোথা থেকে নেওয়া হচ্ছে এটি, কীভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে, কোন রোগে এটি দেওয়া হচ্ছে এবং কীভাবে দেওয়া হচ্ছে।  সফলতার জন্য প্রতিটি পয়েন্টই গুরুত্বপূর্ণ।

যেকোনো স্থান থেকে সংগৃহীত সেল সব জায়গায় কাজে লাগবে না, সেল সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলি রয়েছে। স্টেম সেল থেরাপির অপার ভবিষ্যৎ হয়তো রয়েছে আমাদের দেশে। স্টেম সেল থেরাপি নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে, কিন্তু এ বিষয়ে অনেক সচেতনতা জরুরি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ (৩য় বর্ষ), যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

 

যবিপ্রবি/হাকিম মাহি