আঁখি। বয়স ১৭। খুলনার রূপসা চরের বাসিন্দা। মানুষের কল্যাণে কাজ করে বড় স্বীকৃতি পেয়েছে বিশ্ব দরবারে। তিনি জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ খেতাব পেয়েছেন।
আঁখির বাবার নাম মাসুদ মোল্লা। তিনি অসুস্থ। আখিঁর মা আনোয়ারা বেগম মাছ কোম্পানিতে কাজ করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আঁখি দ্বিতীয়।
বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি জাতিসংঘ আঁখিসহ বাংলাদেশের চারজনকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। মহামারি করোনার শুরুতে মাস্ক তৈরি করে স্বল্প মূল্যে বিক্রি ও গরিব মানুষের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করে এই স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
আঁখির বড় স্বীকৃতি পাওয়াতে খুশি তার পরিবারের লোকজন। বিবিসি থেকে শুরু করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তার স্বাক্ষাতকার এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। আঁখিকে নিয়ে গর্বিত তার মা-বাবা।
আঁখিরা তার খালার জমিতে বসবাস করেন। নিজেদের কোনো জমি জমা না থাকায় সেখানে তারা থাকেন।
পরিবারের লোকজন জানান, আঁখি স্থানীয় বামগারা দক্ষিণ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। কিন্তু অভাবের কারণে ৪-৫ বছর আগে সেও বড় বোনের সঙ্গে মাছ কোম্পানিতে কাজ নেন। পরে কাপড় সেলাইয়ের কাজ শেখেন। এখন কাপড় সেলাই করে সংসারে অবদান রাখছেন।
আঁখি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস শুরুর দিকে বাজারে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খুঁজে পাওয়া গেলেও দাম ছিল অনেক। আমাদের এলাকার গরিব লোকজন তা কিনতে পারছিলেন না। তখন আমি নিজেই মাস্ক তৈরি করে কম দামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেই। যাতে এলাকার সবাই মাস্ক পরতে পারে। আবার যারা কিনতে পারে না তাদের মধ্যে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করি।’
আঁখি তার ভবিষ্যৎ স্বপ্নের বিষয়ে বলেন, ‘ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভবিষ্যতে একটি পোশাক কারখানা গড়ে তুলতে চাই। অসহায় শিশুদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।’ তার ইচ্ছা পূরণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য (খুলনা-৪) সাবেক ফুটবলার ও শিল্পপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী প্রতিনিধি পাঠিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেও জানান আঁখি।
আখিঁর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এ অবস্থায় থেকে আমার মেয়ে এমন সুনাম আনবে আমি ভাবতেও পারিনি। ওর বাবা অনেক অসুস্থ। হাটতে-চলতে পারে না। আমিও মাছ কোম্পানিতে কাজ করি।’ আঁখি যেন ভবিষ্যতে দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু করতে পারে সেই দোয়া করি।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আঁখি এখন রূপসা তথা খুলনাবাসীর গর্ব। এ কারণে তাকে ২৬ আগস্ট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এছাড়া, তার ইচ্ছা পূরণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের সাধ্যের মধ্যে সবকিছু করা হবে।’
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ থেকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়া বাংলাদেশের অন্য তিন যুবক হলেন, প্রাক্তন ডাকসু সদস্য তানবীর হাসান শৈকত, ব্র্যাকের প্রকৌশলী রিজভী হাসান ও অনুবাদক সিফাত নূর।