সারা বাংলা

সবুজ মাল্টায় বাবা-ছেলের রঙিন স্বপ্ন

ঝোপের মতো সবুজ গাছ। সেসব গাছে গাছে ঝুলে আছে কাঁচা-পাকা বা আধাপাকা মাল্টা। কোনোটার রঙ আবার গাঢ় সবুজ। তবে কাঁচা আর পাকার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য বোঝা যায় না। সবুজ পাতার আড়ালে থোকা থোকা মাল্টা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী পাহাড়ি এলাকার বাবা-ছেলে মাল্টার বাগানে গেলে এমন দৃশ‌্যই চোখে পড়ে। এ বছর মাল্টার ব‌্যপক ফলনে তাদের মুখে প্রশান্তির হাসি দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। দিন দিন সবুজ এই মাল্টা ঘিরে তাদের স্বপ্ন রঙিন হয়ে উঠছে। কেউ বাগান দেখতে গেলে তারা উচ্ছ্বাস নিয়ে মাল্টা বাগানের গল্প করেন।জানান তাদের কষ্টার্জিত সাফল‌্যে কথা।

সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার গোলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আব্দাল মিয়া ২০১৬ সালের মে মাসে অল্প কিছু জমিতে ৯০টি মাল্টার গাছ রোপণ করেছিলেন। সেসময় স্থানীয় কৃষি বিভাগ তাকে এ বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছিল। এমনকি বারী-১ জাতের এই মাল্টার চারাও সরবরাহ করেছিল কৃষি বিভাগ। সেই থেকে শুরু। তখন থেকে আব্দাল মিয়ার সঙ্গে ছিলেন  তার ছেলে উজ্জল মিয়া।

প্রথমদিকে বাবা-ছেলে মাল্টা বাগানে রাতদিন পরিশ্রম করেছেন। সেসময় গাছ ছোট থাকাতে ফলন আশানুরূপ হয়নি। কিন্তু এক বছরপর ২০১৮ সালে তারা বাজারে মাল্টা বিক্রি করতে সক্ষম হন। এসময় তারা ২০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। এরপর ২০১৯ সালে ৪০ হাজার টাকার মাল্টা হয়েছে। এবছর তারা এরই মধ‌্যে ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করে ফেলেছেন। এখনও বাগানে যে পারিমাণ ফল রয়েছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর বাজারদর এখনকার মতো থাকলে তারা এক লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতেন পারবেন।

এ বিষয়ে কথা হলে কৃষক আব্দাল মিয়া বলেন, ‘মাল্টা চাষে আমরা কোনো রকম বিষ দেই না।তবে গোবর ও কিছু পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হয়।এতে আমাদের খরচ খুব কম হয়। তাছাড়া, পাহাড়ে মাল্টা চাষ করার জন‌্য উপযোগী আবহাওয়া থাকায় এখানে মাল্টার ব‌্যাপক ফলন হয়।গত বছরের তুলনায় ফলন এসেছে প্রায় দ্বিগুণ।আশা করছি এবছর লাখ টাবার উপরে মাল্টা বিক্রি করতে পারবো।’ 

আব্দাল মিয়ার ছেলে উজ্জল মিয়া বলেন, ‘গাছ রোপণের সময় এগুলো ছোট ছিল। প্রথম বছর তেমন ফল আসেনি। তখন মনে হয়েছে এতো টাকা খরচ করে বাগান করে ভুল করলাম না-তো? এসময় স্থানীয় কৃষি বিভাগ আমাদের পাশে ছিল। তারা আমাদের গাছ দেওয়া থেকে শুরু করে পরিচর্যা করার পদ্ধতি পর্যন্ত শিখিয়ে দেয়। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী করাজ করে আজ  আমরা বাবা-ছেলে সফল। আমাদের মাল্টার স্বাদ ও তাজা ঘ্রাণ যে কারও মনকে আকৃষ্ট করবে। এখনকার বাজারে প্রতিকেজি মাল্টা ১০০ থেকে ১২০ টাকাতে বিক্রি হচ্ছে। আমাদের এই মাল্টা যদি দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা যায় তো এখান থেকে আরও আয় করা সম্ভব।’ সামনের বছর আরও একটি মাল্টা বাগান করারও ইচ্ছা পোষন করেন তিনি।

উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব মজুমদার জানান, আব্দাল মিয়া ও তার ছেলে উজ্জল মিয়া এলাকার সফল মাল্টা চাষি। তাদের সফলতা দেখে আশপাশের চাষিরাও বাণিজ‌্যিকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করার কথা ভাবছেন। অনেকে শুরুও করেছেন। তাদের সবাইকেই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল আউয়াল  জানান, চেষ্টা আর পরিশ্রম করলে যেকোনো কাজে সফলতা অর্জন করা যায়। কৃষক আব্দাল মিয়া ও তার ছেলেই তার প্রমাণ। আমি আশা করি তাদের দেখে এলাকার আরও অনেকে মাল্টা চাষে আগ্রহী হবেন। বিশেষ করে বেকার যুবকরা একাজে এগিয়ে আসতে পারেন।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মো. জালাল উদ্দিন জানান, কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে পাহাড়ে উৎপাদিত এ সবুজ মাল্টা। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করে সফল হওয়ার চেষ্টা করছেন। এটা অবশ্যই ভালো সংবাদ।জেলার পাহাড় অঞ্চলে ব্যাপকহারে মাল্টা চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এবং এ ব‌্যপারে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় চাষিদের পাশে রয়েছে।