আইন ও অপরাধ

দুদক চেয়ারম্যানকে ডিআইজি মিজানের হুমকি!

‘একটা অডিও ছেড়েছি, তাতেই দুদক চেয়ারম্যান ভয় পেয়ে গেছেন। আরও অডিও তো বাকি আছে।’

মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) আদালতে এভাবেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে হুমকি দিয়েছেন বরখাস্ত হওয়া পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান। দুদকের দায়ের করা দুই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন তিনি।

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় আজ ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান। অপর আসামিরা হলেন—ডিআইজি মিজানের স্ত্রী সোহেলিয়া আনার ওরফে রত্মা রহমান, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগ্নে মাহমুদুল হাসান। ডিআইজি মিজান এবং মাহমুদুল হাসান কারাগারে আছেন।

চার্জ শুনানির জন্য মঙ্গলবার কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয় ডিআইজি মিজানকে। দুপুর ১টার দিকে আসামিদের অব্যাহতির বিষয়ে শুনানি হয়। ডিআইজি মিজানের পক্ষে এহসানুল হক সমাজী এবং মাহমুদুল হাসানের পক্ষে শাহিনুর রহমান অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে মীর আহাম্মেদ আলী সালাম আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আবেদন করেন।

উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালতের নির্দেশে মীর আহাম্মেদ আলী সালাম আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনান। এরপর তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারা দোষী না নির্দোষ। এ সময় ডিআইজ মিজান কিছু বলতে চান। তখন দুদকের আইনজীবী তাকে বলেন, ‘উত্তর দিন— আপনি দোষী না নির্দোষ।‘ডিআইজি মিজান বলেন, ‘অবশ্যই নির্দোষ।’ মাহমুদুল হাসানও একই উত্তর দেন। এরপর তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তারা কি ন্যায়বিচার চান? ডিআইজি মিজান বলেন, ‘অবশ্যই ন্যায়বিচার চাই। তবে মিডিয়া ট্রায়াল যেন না হয়।’ এরপর বিচারক এজলাস থেকে নেমে যান।

ডিআইজি মিজানকে যখন কাঠগড়া থেকে নামানো হচ্ছিল, সে সময় তিনি বলতে থাকেন, ‘একটা অডিও ছেড়েছি, তাতেই দুদক চেয়ারম্যান ভয় পেয়ে গেছেন। আরও অডিও তো বাকি আছে।’ এ সময় আইনজীবীরা তাকে এসব কথা বলতে বারণ করেন। তারা বলেন, ‘এখানে সাংবাদিক আছে।’ তখন ডিআইজি মিজান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক, সঠিক তথ্য লিখবেন।’

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে গত ২৪ জুন দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ ডিআইজি মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ।

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।

মামলার পর আত্মগোপনে থাকা ডিআইজি মিজান গত ১ জুলাই হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলে তা নাকচ হয় এবং তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গত ২ জুলাই আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মাহমুদুল হাসান ৪ জুলাই একই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত ৩০ জানুয়ারি চার্জশিট দাখিল করেন দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ।