সারা বাংলা

মুক্তিযুদ্ধে অর্ধশত ভারতীয় সৈনিকের আত্মত্যাগের ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’

মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় জীবন উৎসর্গ করেছিলেন অর্ধশত ভারতীয় সৈনিক। তাদের আত্মত্যাগের স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে স্থাপিত হয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ ভাস্কর্য।

চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে জীবনদানকারী অর্ধশতাধিক ভারতীয় সৈনিকের স্মৃতি রক্ষায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের উদ্যোগ ও অর্থায়নে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী এই ভাষ্কর্যের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে ১২ ডিসেম্বর থেকে বিজয়ের দিন ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পাহাড়ের পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বিত বাহিনীর তুমুল সম্মুখযুদ্ধ চলতে থাকে। যুদ্ধ করতে করতে ১৬ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সীতাকুণ্ডের কুমিরায় পৌঁছান। এতে পিছু হটতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনী। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে বিজয়ের ঘোষণা আসলে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাস শুরু করেন। কেউ কেউ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান। ঠিক এমনি সময়ে অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকা ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় পাকিস্তানিরা। এতে সীতাকুণ্ডে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধ চলে ১৭ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ের টানা যুদ্ধে নিহত হন অর্ধশতাধিক ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সৈনিক ও বেশ কয়জন মুক্তিযোদ্ধা। ভারতীয় সৈনিকদের বড় আত্মত্যাগের মাধ্যমে ১৭ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় সীতাকুণ্ড। সে সময় এসব ভারতীয় মুক্তিবাহিনীর বীরদের মৃতদেহ সৎকার করা হয় সীতাকুণ্ড পৌরসদর চন্দ্রনাথ মহাতীর্থের গজারিয়া দীঘির পাড়ে। তাদের স্মৃতিরক্ষায় একই এলাকায় স্থাপন করা হলো ভাস্কর্য ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’।

নব নির্মিত ভাস্কর্য উদ্বোধন করতে এসে ভারতীয় হাই কমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুর্ত্বপূর্ণ সম্পর্ক শুধু ঐতিহাসিক ও সংস্কৃতিগত নয় এটি রক্তসম্পর্ক। আমি নিজে গর্ববোধ করছি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনারা একসঙ্গে প্রাণ বিসর্জন করেছেন এ এলাকায়। আমি গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাই সীতাকুণ্ড উপজেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় সেনাদের। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন পাইলট হিসেবে। তাই আমি খুব গর্বিত।  বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চিরঞ্জীব হবে বলে মন্তব্য করেন ভারতীয় হাই কমিশনার।’