শিক্ষা

৬১ বছর পর স্মৃতি রক্ষার্থে ‘ভাষা শহীদ রফিক ভবন’

আশরাফুল ইসলামজবি, ২১ ফেব্রুয়ারি : ভাষা আন্দোলনে শহীদদের মধ্যে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ছাত্র শহীদ রফিক অন্যতম। ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘদিন পার হলেও এই শহীদের নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন স্মৃতি রাখা হয়নি। অবশেষে ঐতিহাসিক সেই প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপায়নের ৮ বছরের মাথায় মহান ভাষা আন্দোলনের ৬২ বছর পূর্তির প্রাক্কালে সম্মান প্রদর্শন ও স্মৃতি রক্ষার্থে একটি ভবন ‘ভাষা শহীদ রফিক ভবন’ নামকরণ করা হয়েছে।ঢাকা সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত ‘ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পুর্তি’ স্মারক গ্রন্থে জানা যায়, ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদ রফিক, পুরো নাম রফিক উদ্দিন। মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে ১ম ও ২য় বর্ষে লেখাপড়া করেন। ১৯৫০ সালে দেবেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষা দেন। এরপর ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন রফিক। আরো জানা যায়, ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকা জগন্নাথের ছাত্র ছিলেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সে রফিক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। শহীদ রফিক দেবেন্দ্র কলেজে বাণিজ্য বিভাগে পড়ালেখা করেছেন। জগন্নাথ কলেজে কোন বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে তিনি জগন্নাথ কলেজের নিয়মিত নয়; অনিয়মিত অর্থাৎ সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্র ছিলেন বলে জানা যায়।বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত আব্বাস উদ্দিন আহমদের লেখা ‘ভাষা শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ’ জীবনী গ্রন্থ মতে, ১৯৪৬ সালে কলকাতায় মহা দাঙ্গার পর রফিক দেশে ফিরে আসেন এবং বয়রা স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি তিনি মাঝে-মধ্যে পিতার প্রেসের ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।জানা যায়, শহীদ রফিকের বাবা একজন প্রেস ব্যবসায়ী ছিলেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং জামাতা মোবারক আলী খানের পরামর্শে বাবু বাজার এলাকায় আকমল খান রোডে ‘পারিল প্রিন্টিং প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন।যৌথ ব্যবসায়ে পিতা আবদুল লতিফের অপর অংশীদার ছিলেন রফিকের মামা ফেলু খাঁ। তিনিও কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন। তবে বছর দেড়েক পর উভয়ের মধ্যে ব্যবসা নিয়ে মত বিরোধ দেখা দেয় এবং দু’জনে আলাদা হয়ে যান।শ্যালক আলাদা ব্যবসা শুরু করাতে শহীদ রফিকের বাবার পক্ষে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকা এসে প্রেস দেখা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে তিনি প্রেসের যন্ত্রপাতি ও বন্টনকৃত মালামাল বিক্রি করে দেয়ার উদ্যোগ নেন। কিন্তু শহীদ রফিক পিতাকে পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ওই প্রেস ব্যবসা দেখাশুনা করবেন বলে জানান। পুত্রের বিশেষ আগ্রহের কারণে শহীদ রফিকের পিতা বাদামতলিতে ‘কমার্শিয়াল আর্ট প্রেস’ নামে নতুন প্রেস ব্যবসা শুরু করেন। রফিকের অক্লান্ত কর্মনিষ্ঠায় ব্যবসা সূচারুরূপে চলতে থাকে।ওই ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থেই তিনি জগন্নাথ কলেজের সান্ধ্যকালীণ কোর্সে ভর্তি হন। ওই সময় শহীদ রফিকের মত যারা পড়ালেখার পাশাপাশি অন্য কাজ করতেন তাদের কথা মাথায় রেখেই ওই কোর্সটি চালু করা হয়েছিল। যে কেউ চাইলেই ওই কোর্সে ভর্তি হয়ে কাজের পাশাপাশি স্বাচ্ছান্দ্যে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারতেন। শহীদ রফিকও ওই সুযোগ নিয়ে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) লেখাপড়া করেন বলে জানা যায়।এছাড়াও আবু সালেহ সেকেন্দার এর ‘ভাষা আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে একাধিক উৎস থেকে উল্লে¬খ করা হয়েছে ভাষা শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ জগন্নাথ কলেজের ছাত্র ছিলেন।তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) প্রাক্তন ছাত্র ও ভাষা শহীদ রফিকের স্মৃতি রক্ষার্থে ৬২ বছর পূতির আগ মূহূর্তে ২০ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার একাডেমিক কাউন্সিলে পুরাতন বিজেনেস স্টাডিজ ভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষা শহীদ রফিক ভবন’ নামকরণের প্রস্তাব করা হয়। এই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা হয়েছে।জানা যায়, নতুন নামকরণকৃত ‘ভাষা শহীদ রফিক ভবন’-এ বাংলা আর ইতিহাস বিভাগের কার্যালয় রয়েছে।উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘মহান ভাষা আন্দোলনে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও ভাষা শহীদ রফিকের নামে পুরাতন বিজেনেস স্টাডিজ ভবন ‘ভাষা শহীদ রফিক ভবন’ নামকরণ করার মাধ্যমে তার স্মৃতি রক্ষা পেল। এছাড়াও ভবিষ্যতে কোন হল নির্মিত হলে তা ভাষা শহীদ রফিকের নামে নামকরণ করা হবে।’

রাইজিংবিডি  / লিমন