ক্যাম্পাস

ঘরে বসে আইএলটিএস এর প্রস্তুতি 

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি প্রথমেই ভাবনায় আসে তা হচ্ছে আইএলটিএস। এটি ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরীক্ষা যার পূর্ণরূপ হচ্ছে International English Language Testing System. 

আইএলটিএস নিয়ে শিক্ষার্থীদের থাকে নানা ভাবনা। এসব ভাবনা সহজ করতেই ঘরে বসে কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়- এ বিষয়ে নিজ অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন জার্মানিতে অধ্যরনরত George-August University of Gottingen এর শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা সোনিয়া। তার অভিজ্ঞতা রাইজিংবিডির পাঠকদের জন‌্য তুলে ধরা হলো-

কেউ যদি বাইরের দেশে পড়তে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেন, তাহলে তার জন্য আইএলটিএস করাটা হচ্ছে প্রথম ধাপ।  আমার যেহেতু উচ্চতর ডিগ্রির জন্য বিদেশ যাওয়ার লক্ষ্য ছিল, তাই উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর থেকেই আমি প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। লক্ষ্য অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকাটা বেশ জরুরি নয়ত বিক্ষিপ্তভাবে থাকলে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। অনেকে বলেন কোচিংয়ে ভর্তি না হলে ভালো স্কোর তোলা যায় না। 

আমি বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষার্থী ছিলাম এবং আমি কোন কোচিংয়ে ভর্তি হইনি। নিজের প্রতি মোটামুটি আত্মবিশ্বাস থাকলে কোচিংয়ে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।  আমার আইএলটিএস স্কোর ছিল ৭.০০। আমার জন্য এটা যথেষ্ট ছিল। 

প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা কী পড়বেন, কীভাবে পড়বেন, পরীক্ষার প্রতিটি অংশের জন্য কোন ইউটিউব চ্যানেল বা কোন অ্যাপ কার্যকরি ইত্যাদি ঘাটতে ঘাটতেই অনেক সময় চলে যায়। তাছাড়া কোথায় পরীক্ষা দিব এটাও থাকে চিন্তার বিষয়। ব্রিটিশ কাউন্সিলে নাকি আইডিপিতে- এই অনিশ্চয়তায় যারা আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনারা চোখ বন্ধ করে আপনার সুবিধা মতো যেকোনো এক জায়গায় রেজিট্রেশন করে ফেলবেন। নির্দিষ্ট কোন সেন্টারে পরীক্ষা দিলে নম্বর কম বা বেশি আসবে এ জাতীয় ভাবনা ভিত্তিহীন।  তবে আমি ব্রিটিশ কাউন্সিলে পরীক্ষা দিয়েছিলাম।

এবার আসি কাজের কথায়। প্রস্তুতির জন্য সবার সঙ্গে আমার নিজ অভিজ্ঞতাই সহজভাবে শেয়ার করতে চাই।  1. প্রথমেই Cambridge Series এর ৭-১৪ ভলিউম কিনে নিন এবং প্রথম হতে শেষ অবধি পড়ে শেষ করে ফেলুন। শেষ হয়ে গেলেও প্রতিনিয়ত রিভিশন দিতে ভুলবেন না। 

২. ইউটিউবে আইএলটিএস এর জন্য অনেক চ্যানেল আছে।  সমস্যা একটাই, ভিডিওগুলো অনেক লম্বা।  ধৈর্য ধরে দেখতে হবে।  আমার কাছে যেগুলো সেরা মনে হয়েছে সেগুলো হচ্ছে Liz IELTS, Emma IELTS, Jay IELTS । Liz এর সবগুলো ভিডিও দেখবেন এবং প্রয়োজন মনে করলে খাতা কলম নিয়ে বসে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট নোট করে নিবেন।

৩. রাইটিংয়ের জন্য IELTS Up দেখাই যথেষ্ট।

৪. এছাড়াও ইউটিউবে এই চ্যানেলগুলোও দেখবেন- Papa English, ETJ English, Anna English, Let's Talk, Ellen Show.

৫. স্পিকিংয়ের জন্য প্লে স্টোর থেকে Open talk অ্যাপটা নামিয়ে নিন। এই অ্যাপের মাধ্যমে আপনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে কথা বলতে পারবেন। বলা বাহুল্য, আপনাকে ইংরেজিতেই কথা বলতে হবে। সুতরাং, যারা স্পিকিংয়ের জন্য পার্টনারের খোঁজে সামাজিক মাধ্যমের এখানে সেখানে পোস্ট বা কমেন্ট করছেন তারা খোঁজা বাদ দিয়ে অ্যাপ ডাউনলোড করুন।

৬. ielts-mentor.com এই ওয়েবসাইটটা আমার খুব কাজে এসেছিল। বিশেষ করে স্পিকিং এর জন্য। কারণ, ইংরেজি বলা নয়, উদ্ভট টপিকগুলোতে আমি কি উত্তর দিব তা আমি ভেবে খুঁজে পেতাম না। মানে Run out of idea যাকে বলে। এখানে মডেল উত্তর দেওয়া আছে। প্রতিদিন ১০-১৫টা পড়তে পারলে খুব কাজে আসবে।

৭. যে কদিন প্রস্তুতি নিচ্ছেন সে কদিন বাসায় The Daily Star পত্রিকাটা রাখুন।

৮. ইংরেজি গান শুনুন, মুভি দেখুন। ৯. নিজেকে প্রস্তুত মনে করলে Mentors-এ গিয়ে ১০টা মক-টেস্টের জন্য রেজিস্ট্রেশন করে ফেলুন। মক-টেস্টে যা পাবেন ফাইনালে কম করে হলেও তার চেয়ে ০.৫ পয়েন্ট বেশি আসবে।

পরিশেষে, আইএলটিএস তেমনটা ভীতিকর মনে হয় আসলে ততটাও ভীতিকর নয়। যেহেতু এটা একটা টেকনিক্যাল পরিক্ষা; তাই ভালো স্কোর তুলতে প্রয়োজন পড়ে প্রচুর প্র্যাকটিসের। আমার সোর্স এগুলোই ছিল। আমি মনে করি মন দিয়ে পড়লে দুমাসের প্রস্তুতিই যথেষ্ট।  সবার জন্য রইল শুভকামনা।