মার্চ স্পেশাল

বাংলাদেশ সেদিন রেসকোর্স ময়দানে ছিল: সোহেল রানা

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ইকবাল হল থেকে খুব বেশি দূরে নয় রেসকোর্স ময়দান। আমি সেই সময় ইকবাল হলের ভিপি ছিলাম। এলাকাজুড়ে লোকে লোকারণ্য। সেদিনের সমাবেশে থাকাটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। আমি বলব- বাংলাদেশ সেদিন রেসকোর্স ময়দানে ছিল। একজনের পিঠের সঙ্গে অন্যজনের বুক লাগিয়ে যতজন পেরেছে রেসকোর্স ময়দানে অর্থাৎ আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেছে। গাদাগাদি করে যতজন সম্ভব ওখানে ছিল। সুতরাং এটা খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন- ছিল না কে?

৭ মার্চের দিনটি কেমন ছিল? আমার মনে হয়, এই পঞ্চাশ বছরে আমার মতো অন্তত ৫০ হাজার লোক সেদিনের স্মৃতি বর্ণনা করেছেন। আমি নতুন করে কী বলব খুঁজে পাচ্ছি না। আগুন যেখানে জ্বলে, সেখানে হাত দিলে পুড়ে যায়- এটা সবাই জানে। সবাই এ কথাই বলবে।

তখন সারা বাংলাদেশ উত্তাল ছিল। দেশের প্রতিটি মানুষ কান পেতে বসেছিল অধীর আগ্রহ নিয়ে- বঙ্গবন্ধু কী বলেন শোনার জন্য। তিনি কি দিকনির্দেশনা দেন সেটাই ছিল সেদিন মানুষের মনের কথা। তাঁর দিকনির্দেশনা মানার জন্য মানুষ উন্মুখ হয়ে ছিল।  

বঙ্গবন্ধুকে যখন স্টেজে নেওয়া হচ্ছে তখন মানুষকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে জায়গা তৈরি করতে হয়েছে। স্টেজ তখন পূর্ণ। কোনো রকমে একটু জায়গা তৈরি করে তাঁকে স্টেজে তোলা হয়েছে। মানুষের প্রচণ্ড চাপ- সে এক অবর্ণনীয় দিন। সেই চাপের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু হেঁটে স্টেজে উঠেছেন।

পৃথিবীতে বড় গেরিলা লিডার যারা মাও সে তুং থেকে শুরু করে চে গুয়েভারা- তারা সারাজীবন যুদ্ধ করার পরও যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তার চেয়ে হাজারগুণ ভালো এবং সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ছিল ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। একজন মানুষ কীভাবে কোনো লেখা ছাড়া এভাবে শব্দচয়ন করে। এখনও যারা গেরিলা যোদ্ধা আছেন তারাও এই ভাষণ মান্য করেন। কারণ এখানে এমন কথা তিনি বলে গেছেন; এর চেয়ে বড় বা ভালো দিকনির্দেশনা আজ পর্যন্ত কেউ দেয়নি। আগেও যারা ছিলেন তারাও এটা টপকাতে পারেননি। অনেকেই পরে এ কথা স্বীকার করেছেন। এ কারণেই কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি। আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি।’

ফিদেল কাস্ত্রোর মতো লিডার যখন এ কথা বলেন, তখন আমাদের মতো লোকেদের এ নিয়ে আর কিছু বলার থাকে না। বঙ্গবন্ধু আনপ্যারালাল। তাঁর চেয়ে বেটার আগেও কেউ ছিল না এবং পরেও কেউ হয়নি। এত সহজ, সরল ভাষায় মানুষের হৃদয়ে তিনি মূল বার্তা সেদিন ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন যে সেই বিস্ময় আমার আজও কাটেনি। এই দিকনির্দেশনার পর মানুষ তা পালন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সবাই তার অর্ডারগুলো ফলো করার চেষ্টা করেছিলেন। যখন ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন তখন এবং পরে ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের কাজে লেগেছে। অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

 

অনুলিখন: রাহাত সাইফুল