পৃথিবীতে একেকটা মানুষ একেকরকম স্বভাবের। তার মধ্যে আমি অনেকটা একরোখা বলতে গেলে। যেটা মন চাইবে, সেটাই করতে হবে আমার, সেটা যে ধরনের ইচ্ছাই হোক না কেন।
২০২০ সালের জুন মাসে লকডাউনেই ছোট মামা বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেন। যেহেতু লকডাউন তাই খুব একটা ঘটা করে অনুষ্ঠান করা হবে না। আমরা শপিং করতে গিয়ে সবকিছু কেনার পর যখন নিজের জন্য ড্রেস কিনতে যাই, তখন মনে হলো আমার ভিন্ন কিছু লাগবে! এই যেমন খুব অল্প ডিজাইনের মধ্যে খুবই সাদাসিধে একটা ড্রেস। যেহেতু লকডাউন, তাই সবকিছু বন্ধ ছিল, অনেক ঘুরেও কোনো ড্রেস পছন্দ হচ্ছিল না। শেষে ফেব্রিক নিয়ে বাসায় ফিরলাম। ভাবলাম যেমনটা নিজের পছন্দ, ঠিক তেমনটাই বানিয়ে নেবো। এর আগে নিজের ডিজাইনের একটা মেশিন এমব্রয়ডারি করে ড্রেস তৈরি করেছিলাম। এবার আর সেটা হবে না, নিজের হাতেই ফুল তুলতে লাগলাম৷
ছোট ছোট রঙ-বেরঙের ফুল ড্রেসের সামনের দিকে একপাশে থাকবে এমন একটা ড্রেস। তারপর সেটা রেডি করে বিয়েতে পরে গেলাম, সবাই ড্রেসটা অনেক পছন্দ করেন। আর আমি মজার ছলেই বলেছিলাম মাকে, আমি এই ড্রেস ডিজাইনের বিজনেস করবো! কেমন হবে বলো তো? তিনি খুব একটা রাগ করেনি বা দ্বিমত পোষণ করেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘অবসরেই তো আছো, করলে করো। ভালোই হবে।’
যখন শুরু করেছিলাম অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছিল ফেব্রিক চিনতে। নিজে দেখে-শুনেই পাইকারি বাজার থেকে ফেব্রিক এনে ডিজাইন করতে করতে এখন আর কোনো সমস্যা হয় না ফেব্রিক চিনতে। স্বপ্ন অনেক দূর যাওয়ার। বাকিটা নিজের ধৈর্য আর পরিশ্রমের উপর নির্ভর করছে।
রাঙা শব্দের অর্থ রঙিন, আর সুঁদী অর্থ ফুল, অর্থাৎ রঙিন ফুল। মূলত কাজের সঙ্গে মিল রেখেই এই নামটা রাখা, যেমন আমার ডিজাইনগুলোতে খুব ছোট ছোট রঙ-বেরঙের ফুল থাকে।
জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে আমরা চাই নিজেদের রঙিন রাখতে। বসন্তের ছোট ছোট ফুল আর রঙিন পাতাগুলো আমাদের ভীষণ পছন্দ। আর সেই ভীষণ পছন্দের ফুল আর পাতাগুলো যদি আমাদের পোশাকে ফুটে ওঠে হাতের ছোঁয়ায়, তাহলে কেমন হয়? নিঃসন্দেহে খুব বেশি আকর্ষণীয় হবে!
সেদিকটা মাথায় রেখে আমার ‘রাঙাসুঁদী’র যাত্রা শুরু। যেখানে আপনারা পাবেন সুঁই-সুতা দিয়ে হাতের নকশা করা পোশাক। রাঙাসুঁদীর ড্রেসগুলো বর্তমানে কেবল অনলাইনেই পাওয়া যাচ্ছে, তবে খুব শিগগিরই অফলাইনেও পাওয়া যাবে। আপনারা ড্রেসগুলো পাবেন আমাদের ফেসবুক পেজ ‘রাঙাসুঁদী- RangaShudi’ এখানে।
রাঙাসুঁদীর ড্রেসগুলোর বিশেষত্ব হলো, পুরনো নকশীকাঁথার ডিজাইনগুলোকে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নতুন করে হাতের সাহায্যে ফুটিয়ে তোলা। হ্যান্ড-এমব্রয়ডারি ডিজাইনগুলাকে বিভিন্ন ড্রেসে পাঞ্জাবিতে, শাড়িতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকভাবে উপস্থাপন করাই হলো আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এ পর্যন্ত রাঙাসুঁদী কেবল কাস্টমাইজড ড্রেসই তৈরি করে আসছে, তবে অফলাইন মার্কেটে খুব দ্রুতই হাজির হবো বলে আশা করছি।
এই মহামারিতে সবাই নিজেদেকে নিরাপদ রাখার জন্য যতটা সম্ভব ঘরে বন্দি। ফলে নতুন নতুন ব্যবসায়ীরা অনলাইন ভিত্তিক বিজনেস শুরু করে। রাঙাসুঁদীর যাত্রাও অনলাইন থেকেই। তবে ইচ্ছা আছে অনেক দূর যাওয়ার।
প্রথমে অনেক বাধা আসবে, একটার পর একটা বাঁধা আসতেই থাকবে, কিন্তু আমরা যদি শুরুতেই হেরে যাই, তাহলে আর উপরে উঠার কোনো সম্ভাবনাও থাকবে না৷ তাই আমাদের উচিৎ নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজের জন্য, সমাজের জন্য এবং সর্বোপরি দেশের জন্য হলেও কিছু একটা করা৷ সরকারি চাকরি, বিসিএস এবং যত ধরনের করপোরেট জব আছে, সেসবের দিকে ঝুঁকে না পড়ে ব্যতিক্রম কিছু করা৷
লেখক: শিক্ষার্থী, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বত্বাধিকারী, রাঙাসুঁদী।