টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার নথখোলা গ্রামের ৯০ বছর বয়সি ঈমান আলী। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও এখনও নিজের কাজ নিজে করতে পারেন। করোনা পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের তথ্য অনুযায়ি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেন। কিন্তু কিভাবে করোনার টিকা নেবেন, বুঝতে পারছিলেন না। গণটিকার উদ্যোগে তার সব দুর্ভাবনা কেটে গেলো। এখন তিনি ভ্যাকসিনেটেড।
ঈমান আলী জানান, কিভাবে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে, কিভাবে টিকা গ্রহণ করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। আবার বাড়ি পাশেই স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মীরা এসে টিকা দিবে, তাও ভাবেননি তিনি। বাড়ির পাশে বিনা খরচে টিকা গ্রহণ করতে পেরে তিনি খুব খুশি।
শুধু ঈমান আলী নয়, তার মতো টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার ৯৮টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভায় একযোগে টিকা গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে ৩টি করে কেন্দ্রে শনিবার পর্যন্ত ৬০০ ও তিন পৌরসভার ২৪টি কেন্দ্রে ২০০ করে টিকা দেওয়া হবে।
ঈমান আলী বলেন, জীবনের শেষ মুহূর্ত আমার। তারপরও করোনাভাইরাসের নিরাপত্তার জন্য টিকা গ্রহণ করতে পেরে খুবই খুশি। দেড় বছর আতঙ্কে থাকলেও আজ থেকে নিরাপদ হলাম। আমার মতো অনেক সাধারণ মানুষ সহজেই টিকা গ্রহণ করতে পারছেন। এমন সুবিধার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।
শনিবার (৭ আগস্ট) সকালে টাঙ্গাইলের বাসাইলে নথখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম। বাসাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মনজুর হোসেনের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম, কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান মির্জা রাজিক প্রমুখ।
এ দিকে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বিপিএম, সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান ও টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীর।
সরেজমিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আগ্রহী বয়স্ক নারী-পুরুষের উপস্থিতি। তবে নারীর সংখ্যাই বেশি। টিকা নিতে আগ্রহীরা মুখে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা নিচ্ছেন। হাতের কাছে টিকা পাওয়ায় অনেক খুশি গ্রামের সাধারণ মানুষ।
কাশিল ইউনিয়নের কামুটিয়া গ্রামের ৭০ বছর বয়সি রোকেয়া বেগম বলেন, এতোদিন শুনেছি করোনা নামে রোগ আছে। যে রোগে আক্রান্ত হলে অনেক বেশি কষ্ট, আবার অনেকেই মারাও যায়। এতো দিন শুনছি এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। আবার এক মাস যাবত জানছি যে এই রোগের টিকা নিলে সুস্থ থাকা যায়। সুস্থ থাকতেই আজ টিকা গ্রহণ করলাম।
আজাদ হোসেন বলেন, টিকা নেওয়ার জন্য এতো দিন রেজিষ্ট্রেশন করে অপেক্ষা করতে হতো। তবে অপেক্ষা করার সময় আমার ছিলো না। তাই টিকা গ্রহণ করেছিলাম না। কিন্তু আজকে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই টিকা নিতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়েছে।
টিকা নিতে আসা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য খন্দকার ছানোয়ার হোসেন বলেন, বাড়ি পাশে করোনাভাইরাসের টিকা পাবো এটা কখনও কল্পনাও করি নাই। বাড়ি পাশ থেকে কোভিড টিকা নিতে পেরে খুবই আনন্দিত। আমাদের সময় ও যাতায়াত খরচ উভয়ই সাশ্রয় হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মহসিনুজ্জামান বলেন, এলাকার মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধি ও বয়স্কদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমরা স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে সহযোগিতা করছি।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন জানান, ১২ টি উপজেলার ১১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯৮টি ইউনিয়নের ২৯৪টি কেন্দ্রে ৫৮ হাজার ৮০০ টিকা দেওয়া হচ্ছে। বাকি ১৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় শিশুদের রুটিন টিকা দেওয়ার কার্যক্রম থাকায় পরবর্তীতে সেখানে কোভিড এর টিকা দেওয়া হবে। ১১টি পৌরসভার মধ্যে টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৮টি কেন্দ্রে ৩ হাজার ৬০০ টিকা, মধুপুর ও গোপালপুর পৌরসভা এলাকায় ৬টি কেন্দ্রে কোভিড টিকা দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সকলকে টিকা দেওয়া হবে।