সারা বাংলা

বীজতলায় পচন, শঙ্কিত গাজীপুরের কৃষক

ফলন ভালো হওয়ার আশায় গাজীপুরের চাষিরা ব্রি-৫১ ধানের জাত আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু বীজতলা পঁচে যাওয়ায় অধিকাংশ কৃষকের সেই আশার গুড়ে বালি। পচে যাওয়ার মধ্যেও যেসব চারা ভালো রয়েছে সেগুলো রোপণের পর ধান বের হওয়ার সময় সে গাছও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে।

এ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গাজীপুরের অনেক চাষি। অল্প জমিতে ভালো ফলনের আশায় বেশিরভাগ চাষি এবার ব্রি-৫১ জাতের ধান আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

শ্রীপুর উপজেলার টেংরা গ্রামের চাষি জাহাঙ্গীর আলম জানান, ব্রি-৫১ ধানের বীজতলা রোগাক্রান্ত হয়ে পচে যায়।  শুধু যে বীজতলা আক্রান্ত হয় তাই-ই নয়, টিকে থাকা ভাল চারা জমিতে রোপণের পর গাছে ধান বের হওয়ার সময়ও গাছ আক্রান্ত হয়।

তিনি জানান, এ রোগের কারণেই ব্রি-৫১ ধান করতে তারা নিরুৎসাহিত হন। কিন্তু অন্যান্য জাতের ধানের চেয়ে ফলন ভালো হওয়ায় আবাদের লোভও সামলাতে পারেন না।  বীজতলা বা ধান গাছে পঁচন ধরলে চারা বা ধান গাছ হলুদ ও ধূসর বর্ণ ধারণ করে মাটিতে মিশে যায়।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত এবং ঋণ নেওয়া ৫ একর ৩৫ শতক জমি আবাদ করবেন এবার। সেই লক্ষ্যমাত্রায় বীজতলা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বীজতলা পচন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় অনেক চারা নষ্ট হয়েছে।  তাই বাইরে থেকে ধানের চারা ক্রয় করে জমিতে রোপন করতে হবে। এতে ধানের বীজ ভাল হবে কি না তা ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

টেংরা উত্তরপাড়া গ্রামের লেহাজ উদ্দিন জানিয়েছেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিদর্শনে এসে ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দেন।  সে অনুযায়ী গত ২৫ জুলাই ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো উন্নতি দেখছেন না। বরং আরও নষ্ট হচ্ছে। এখন ধানের চারা কিনে রোপণ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই তার।  দুই একর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যে ব্রি-৫১ এবং রঞ্জিত জাতের ধানের বীজতলায় বীজ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু তার দুটো জাতের চারা-ই পচে গেছে।  ৩০ কেজি ধানের বীজতলায় তিন কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেছিলেন। ধানের চারা প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার পর সব জ্বলে-পুড়ে গেছে।

অন্যদের মতো কৃষক মুজিবুর রহমানের বীজতলায়ও পচন ধরার কারণে এবার অন্য জায়গা থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করতে হবে।  

মুজিবুর জানান, এ বছর ১ একর ৭০ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণের জন্য বীজতলা তৈরি করেন।  ধানের চারা প্রাপ্তবয়স্ক হলেই পাতা মরে চারা গাছ ছোট হয়ে আসে।  ব্রি-৫১ জাতের ধানের চারা দিয়ে রোপণ করতে না পারলে রঞ্জিত ধানের চারা দিয়ে ১ একর জমি আবাদ করবেন।  

চারার সঙ্কট হলে অন্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে হবে বলে জানিয়েছেন চাষি সাহাব উদ্দিন।

তিনি বলেন, ব্রি-৫১ এবং রঞ্জিত দুটো জাতের বীজতলা রোপণ করেন প্রায় দেড় মাস আগে।  কিন্তু ব্রি-৫১ তে পচন ধরলেও রঞ্জিত ধানের বীজতলা অক্ষত রয়েছে।  গত কয়েকবছর একই নিয়মে বীজতলা তৈরি করে আসছেন।  দেড় মাস আগে গোবর দিয়ে ৪/৫টি চাষ দিয়ে বীজতলা তৈরি করেন।  ধানের বীজগুলো গত বছর তিনি নিজের জমি থেকেই সংগ্রহ করেছিলেন।

চাষি পারভেজ মোশারফ বলেন, বীজতলায় ইউরিয়া সার প্রয়োগের পর ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। ধানের চারা বড় হওয়ার জন্য ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেন।  এলাকার অধিকাংশ বীজতলায় পচন ধরেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, জেলায় এবার রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা কমপক্ষে ৪২ হাজার হেক্টর।  শ্রীপুরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫শ ৩৫ হেক্টর।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ এস এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, প্রণোদনা ও রাজস্বসহ অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের উফসী নতুন জাতের ভ্যারাইটি বীজ দেওয়া হয়েছে।  সকলে তাদের পরামর্শ মতো আদর্শ বীজতলা তৈরি করেছেন।  কিছু কিছু জায়গায় গত কয়েকদিন আগে বৃষ্টির কারণে বীজতলার অনুপযোগী নিচু জমিতে পানি জমে থাকায় বীজতলায় এই পচন দেখা দিয়েছে।