জাতীয়

১০৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন

১০৯৬ কোটি ৫২ লাখ টাকায় ৮ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। 

সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।

সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৩তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৮তম সভা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় সংক্রান্ত  কমিটির অনুমোদনের জন্য ৮টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।  প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১টি, বিদ্যুৎ বিভাগের ১টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১টি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৮টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১,০৯৬ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬০ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো বিস্তারিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন জানাবেন।

সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২: এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ নং ডব্লিউডি-১৪ এর পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।  প্রকল্পের আওতায় সড়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং রক্ষণাবেক্ষণ কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৭টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ৫টি রেসপনসিভ হয়।  দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুপারিশ করেছে।  প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৫১ কোটি ৬০ লাখ ৮৮ হাজার ৬২৪ টাকা।

তিনি বলেন, সভায় কুমিল্লা পুলিশ লাইনস্ এলাকায় ১৫তলা ১টি আবাসিক ভবন নির্মাণ কাজের দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা পুলিশ লাইনস্ এলাকায় ১৫তলা ১টি আবাসিক ভবন নির্মাণকাজ যৌথভাবে ডিইউ-এটিআই-টিইসি-এর নিকট থেকে ৬৬ কোটি ৪৫ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪২ টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিসিজিপি সভায় উপস্থাপন করা হলে একক দরপ্রস্তাব দাখিল হওয়ায় আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তাবটি সভা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।  পরবর্তী সময়ে টিইসির সুপারিশ বাতিল করে উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি দরপত্র জমা পড়ে যার সবগুলো রেসপনসিভ হয়।  দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) টিবিইএএল (২)এসটিআই এবং (৩) টিইসি কে সুপারিশ করে।  প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৫ কোটি ৯৮ লাখ ১ হাজার ৬১ টাকা।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক, দাখিল এবং কারিগরি (ট্রেড) স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের আওতায় যথাসময়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ইবতেদায়ি (১ম ও ২য় শ্রেণি), মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণি, দাখিল স্তরের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণি এবং কারিগরি (ট্রেড) স্তরের ২০৮টি টেন্ডারে ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৫৩ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪২৪টি দরপত্র জমা পড়ে।  তার মধ্যে ৩৭৬টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়।  টিইসি কর্তৃক ২০৮টি টেন্ডারের বিপরীতে ২০টি টেন্ডারে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন ১১টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ কোটি ৭ লাখ ৫২ হাজার ৮৪০ কপি বই সংগ্রহ করা হবে।  এতে ব্যয় হবে  ২৫ কোটি ৭ লাখ ৩০ হাজার ২১৯ টাকা।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, কুমিল্লা জোন প্রকল্পের প্যাকেজ নং জিডি-১: লট-২ এর আওতায় টার্নকি ভিত্তিতে নির্মাণ কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যে এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ৪টি রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স চায়না এনার্জি গ্রুপ আনহুই নং.১ ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটডের নাম সুপারিশ করে।  প্রকল্পে ব্যয় হবে ১২৫ কোটি ৪২ লাখ ৩৩ হাজার ২৮১ টাকা।

সভায় ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় (তিন পার্বত্য জেলার জন্য) ১০০ ওয়াট পিক ক্ষমতা সম্পন্ন ৪০ হাজার সোলার হোম সিস্টেম ও ৩২০ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন ২ হাজার ৫০০ সোলার কমিউনিটি সিস্টেম স্থাপনের একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফেক্টরি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এজন্য ব্যয় হবে ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে সৌদি বেসিক ইন্ডাষ্ট্রিজ করপোরেশন, সৌদি আরব থেকে ২য় লটে ৩০ হাজার মে.টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।  প্রতি মে.টন ৪৭০.১৬ মার্কিন ডলার হিসেবে মোট ১ কোটি ৪১ লাখ ৪ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৯ কোটি ৮২ লাখ ২ হাজার ৭৬০ টাকা ব্যয় হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সভায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে ৩য় লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার অনুমোদন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৪৩৬ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট ১ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১১ কোটি ১১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ব্যয় হবে।

তিনি জানান, সভায় ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড- এর জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) ফসফরিক এসিড আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জন্য ৩০ হাজার মে.টন (+১০%) ফসফরিক এসিড ৩টি লটে আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করা হলে ২টি দরপত্র জমা পড়ে যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান (১) মেসার্স জেনট্রেড এফজেডই, ইউএই (লোকাল এজেন্ট: মেসার্স দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন, ঢাকা) ২টি লটে ২০ হাজার মে.টন ১২৮ কোটি ৭৮ লাখ ১১ হাজার ৭৮ টাকায় এবং (২) মেসার্স সান ইন্টারন্যাশনাল এফজেডই, দুবাই, ইউএই (লোকাল এজেন্ট: এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনপুট, ঢাকা) হতে ১টি লটে ১০ হাজার মে.টন ফসফরিক এসিড ৬৪ কোটি ৩৯ লক্ষ ৫ হাজার ৫৩৯ টাকায় সর্বমোট ৩০ হাজার মে.টন ফসফরিক এসিড আমদানিতে মোট ১৯৩ কোটি ১৭ লাখ  ১৬ হাজার ৬১৬ টাকা ব্যয় হবে।

এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।  সভায় ‘ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা’ এক্সপ্রেসওয়ে এর টোল আদায় কার্যক্রম, ইন্টেলিজেন্স ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস) কার্যক্রম পরিচালনা এবং এক্সপ্রেসওয়ের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সার্ভিস প্রোভাইডার নিয়োগের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  

আরও পড়ুন: ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আইটিএস, ৫ বছরে সার্ভিস চার্জ ৪২৫ কোটি