করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সরকারি নির্দেশে রবিবার থেকে পুনরায় চালু হচ্ছে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সে অনুযায়ী সিরাজগঞ্জে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খুলবে রবিবার। শেষ হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো ধোয়া মোছার কাজ।
কিন্তু বন্যায় সিরাজগঞ্জে ১২৫টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বেশির ভাগেরই চারদিকে উঠেছে পানি। কোনো কোনো স্কুলের পানি নেমে গেলেও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশরই যাতায়াতের রাস্তাগুলো এখনো তলিয়ে রয়েছে বন্যার পানিতে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়গুলিতে শিশুদের পাঠানো ঝঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন অভিভাবকেরা।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় পাঁচিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে। তারা বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠের চারদিকে পানি। এ অবস্থায় বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ্। পানি না শুকানো পর্যন্ত সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো নিয়ে তারা শঙ্কায় আছেন।
পাঁচিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সালেহা খাতুন বলেন, ‘সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা স্কুল খোলার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছি। বাচ্চাদের আমরা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেব। স্কুলের পাশে আমরা দু-একজন শিক্ষককে পাহাড়ায় রাখবো যাতে কোনো বাচ্চা পানির আশপাশে না যায়।’
একই উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের বেলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি থাকলেও এর উঁচু ভবনটিতে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা কবলিত ছয়টি পরিবার। রাত পোহালে বিদ্যালয় খোলার ঘোষণা থাকলেও তার কোনো নমুনা চোখে পড়েনি বিদ্যালয়টিতে।
বিদ্যালয়টির কক্ষে আশ্রয় নেওয়া ফজল করিম বলেন, ‘বন্যায় তাদের বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। তিন-চারদিন ধরে পানি নামতে শুরু করলেও এখনো আমার বাড়িতে ওঠা পানি কমেনি। পানি শুকাতে আরো ৪/৫ দিন সময় লাগবে। এ কয়দিন স্কুল ঘরেই থাকতে হবে।’
সদর উপজেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবিদা সুলতানা বলেন, রবিবারর পাশের কোনো বাড়িতে হলেও স্কুল চালানো হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোনগাছা ইউনিয়নের ভাটপিয়ারী, সয়দাবাদ ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচ ঠাকুরী, কাজিপুর উপজেলার খাস-রাজবাড়ি ইউনিয়নের কালিকাপুর, মাইজবাড়ি ইউনিয়েনের মল্লিকপাড়া, চৌহালী উপজেলার উমারপুর ইউনিয়নের পাথরাইল, হাফানিয়া ও পাথরাইল উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালসহ জেলার নিম্নাঞ্চলের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। এর মধ্যে ১০৫টির মতো প্রাইমারি স্কুল ও ২০টার মতো মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
পানি নেমে গেলেও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশরই যাতায়াতের রাস্তাগুলো এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন অভিভাবকরা। তবে সংশয় দূর করে বিদ্যালয়গুলিতে পাঠদান কার্যক্রম নিরাপদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা।
চৌহালী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, এ উপজেলাটি এমনিতেই দুর্গম। তার ওপর ২৫টার মতো স্কুলে পানি উঠেছিল। এখন পানি নেমে গেছে। আমরা সব স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিয়েছি।
জেলা সহকারি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আল-এমরান খন্দকার বলেন, জেলার ১০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পানি উঠেছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সবগুলো বিদ্যালয় মাঠের পানিই নেমে গেছে। বিদ্যালয়গুলো ধোয়া মোছার কাজ শেষ। আশা করছি সবগুলো স্কুল একযোগে খোলা সম্ভব হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল্লাহ বলেন, জেলার ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি উঠেছিল। এখন সবগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পানি নেমে গেছে। পাঠদান কার্যক্রম চালাতে আর কোনো সমস্যা হবে না।