ভ্রমণ

এ সময় কুয়াকাটা যেতে চাইলে

করোনাসৃষ্ট মহামারির কারণে দীর্ঘ লকডাউন ও বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দি ছিল দেশ। বন্ধ ছিল দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। প্রকৃতি বুঝি এই ফাঁকে বিশ্রামের সুযোগ পেয়েছে। প্রকৃতির নিজস্ব স্বাধীনতায় ছিল না কোনো বাধা। যার প্রমাণ মিলবে কুয়াকাটা সৈকত দেখলে। মনে হবে, সেখানে যেন প্রকৃতি নতুন রূপে সেজেছে। বিস্তৃত সৈকতের বালুচরে নতুন করে বিস্তার ঘটেছে সৌন্দর্যের।

সরকারি নির্দেশনার মধ্য দিয়ে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রের মতো খুলে দেওয়া হয়েছে কুয়াকাটা। দর্শনার্থীরা পুনরায় আসছেন এখানে। কিন্তু এখানকার সজিব পরিবেশ করোনার ভয়কে দূরে ঠেলে ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করছে। প্রাকৃতিকভাবেই বর্তমানে সমুদ্রের ঢেউগুলো বড়। পরিচ্ছন্ন সৈকতে আছড়ে পড়ছে সেই ঢেউ। যা দেখলে কিছুটা ভয় মনে ভর করতে পারে বৈকি! সেই ভয়কে জয় করে পর্যটকরা নামছেন সমুদ্র স্নানে। দেখলে মনে হবে, ইট-পাথরের বন্দি জীবনে এ যেন মুক্তির আনন্দ।  

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ ১২-১৫ বছর আগে সৈকতে প্রচুর সাদা ঝিনুক দেখা যেত। আস্তে আস্তে সেই ঝিনুক প্রায় বিলুপ্ত হতে বসেছিল। তবে কুয়াকাটার সৈকতে এখন চোখে পড়ছে সাদা ঝিনুক। ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের বালিয়ারিতে দেখা মেলে সাগর লতার। সৈকতের কোলাহল ছেড়ে একটু পূর্ব বা পশ্চিমে হাঁটলেই দেখা যাবে কাকড়ার খুনসুটি। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি দেখা মিলবে গঙ্গা কবুতর আর সাদা বকের। সুন্দরের সমাহার নিয়ে হাজির হয়েছে সৈকত লাগোয়া নারিকেল বীথি। নতুনভাবে সবুজে সেজেছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। আগের মতো সমুদ্রের পানিতে ভাসে না প্লাস্টিকের বোতল কিংবা চিপসের প্যাকেট।

শুধু সৈকতের দৃশ্য নয়, এখন কুয়াকাটা ভ্রমণে এলে দেখা যাবে আরো অনেক কিছু। জেলেদের জাল-নৌকার কর্মব্যস্ততা দেখতে দেখতে বিচের পশ্চিম দিকে দুই কিলোমিটার হেটে গেলে দেখা যাবে উপকূলীয় শুঁটকি পল্লী। লকডাউন শেষে সেখানেও বেড়েছে কর্মব্যস্ততা। সৈকতের পাশের রাখাইন পল্লীতে রাখাইনদের তাঁতে বোনা পোশাক জমেছে অনেক। তাই সাধ্যের মধ্যেই কেনা যাবে এসব পণ্য।

এ ছাড়াও লাল কাকড়ার চর, চর গঙ্গামতি, ঝাউ বন, লেবুর চর, ফাতরার বন, কাউয়ার চরেও মিলবে প্রকৃতির নব যৌবনা রূপ। দেখা যাবে পরিচ্ছন্ন কুয়াকাটার কুয়া, বৌদ্ধ মন্দির ও শতবর্ষী নৌকা। কুয়াকাটার প্রাণ-প্রকৃতির সর্বত্রই লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। স্থানীয়রা চাইছেন, করোনাকালে প্রকৃতি যেভাবে আপন রূপে সেজেছে তা যেন অসচেতনতার কারণে নষ্ট না হয়।

কুয়াকাটায় কী খাবেন

সমুদ্র অঞ্চল বলে এখানে মাছ পাওয়া যায় পর্যাপ্ত। ইলিশ, পোমা, রূপচাদা, চিংড়ি, ট্যাংরা, টুনা, কোড়ালসহ নানা জাতের সামুদ্রিক মাছ মিলবে প্রতিটি রেস্তোরাঁয়। এ ছাড়াও শুঁটকি রান্না ও মাছ ভর্তার হরেক পদ তো রয়েছেই। সন্ধ্যার পর থেকেই সৈকতে মিলবে কাকড়া ফ্রাই ও মাছের বারবিকিউ। এসব খাবার যেন সমুদ্র ভ্রমণের অপরিহার্য অংশ।

কোথায় থাকবেন 

কুয়াকাটায় থাকার মতো শতাধিক আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে ৫০০ টাকা থেকে দশ হাজার টাকা ভাড়ায় কামরা পাবেন। পাঠকের সুবিধার্থে কয়েকটি হোটেলের যোগাযোগ নম্বর দেওয়া হলো। হোটেল খান প্যালেস- ০১৭৪৬৪৪৩০৬৭, হোটেল কানসাই ইন ০১৮৫২৯৫৭৫৯১, সাগর কন্যা রিসোর্ট- ০১৭৪৮৪২৪৭২৯, ইলিশ পার্ক-০১৭১৬৭৩৩১৮৭। 

যাতায়াত

ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলি থেকে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় একাধিক বাস ছাড়ে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে। ভাড়া জনপ্রতি ৬০০-৮০০ টাকা। যারা লঞ্চ ভ্রমণ করতে চান, তারা বরগুনার আমতলি রুটের লঞ্চে যেতে পারবেন। ঢাকা সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় ছেড়ে যাওয়া এসব লঞ্চ আমতলি পৌঁছবে সকাল ৭টার দিকে। ডাবল কেবিনের ভাড়া ২২০০ টাকা। সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১২০০ টাকা। ডেকের ভাড়া ২৫০ টাকা। আমতলি থেকে স্থানীয় যানবাহনে যেতে হবে কুয়াকাটা পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে খরচ হবে আরও ১০০ টাকা। 

ছবি: আসদুজ্জামান মিরাজ