সারা বাংলা

বাগেরহাটে বেড়েছে বাল্যবিয়ে

করোনাকালে বাগেরহাটে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে বাল্যবিয়ে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী করোনাকালে জেলায় ৩ হাজার ১৭৮ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, করোনা শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে চলতি বছরের ১২ সেপ্টম্বর পর্যন্ত জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ১৭৮জন শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে কচুয়া উপজেলায় ৫১৬ টি বাল্যবিয়ে হয়েছে।  পরেই রয়েছে বাগেরহাট সদর উপজেলার অবস্থান। এই উপজেলায় ৪৯৭টি বিয়ে হয়েছে। এছাড়া চিতলমারীতে ৪০৭, ফকিরহাটে ৩৯১, মোল্লাহাটে ৩৪৪, মোরেলগঞ্জে ৩৫৫, রামপালে ২৩৭, মোংলায় ২১৮ এবং শরণখোলায় ২১৩টি বাল্যবিয়ে হয়েছে। 

জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর করোনাকালীন সময়ে কি পরিমান বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছে ১০ দিনেও সেই তথ্য দিতে পারেননি বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মনোয়ারা খানম। 

দেড় বছরে বাগেরহাট জেলায় বিপুল সংখ্যক বাল্যবিবাহ হওয়ার বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবকে দায়ী বলে মনে করছেন সচেতন মহলের লোকরা। 

বাগেরহাট মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও নারী অধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট শরিফা খানম বলেন, করোনাকালীন সময়ে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে।  সেই সঙ্গে বন্ধ ছিলো দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সচেতনতার অভাব ও দারিদ্রের কারণে বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এ বিষয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য আইনের প্রয়োগের সঙ্গে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। 

বাগেরহাট পৌরসভার নারী কাউন্সিলর তানিয়া খাতুন বলেন, করোনাকালে বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য সচেতনতামূলক কোন কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। যার ফলে বাল্যবিবাহ আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষ ও বস্তিবাসীকে সচেতন করতে পারলে বাল্যবিয়ে কমবে। এছাড়া বাল্যবিবাহের নেতবিাচক দিকগুলো ফলাও করে প্রচার করতে হবে। 

বাগেরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ভবিষ্যতে বাল্যবিবাহ থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে আমরা নানা উদ্যোগ নিয়েছি। ’ 

জেলা বিবাহ রেজিষ্ট্রার মনিরুল হাসান বলেন, ‘যারা রেজিষ্ট্রার কাজী রয়েছেন তারা বিয়ে পড়ানোর আগে বয়স প্রমাণ হিসেবে বৈধ কাগজপত্র দেখে বিয়ে পড়ান।  নিকাহ রেজিষ্ট্রার বা কাজীদের বাল্যবিবাহ নিবন্ধনের কোন সুযোগ নেই। এরপরও যদি কোন কাজী অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বা অবহেলা করে বাল্যবিবাহ নিবন্ধন করেন সেক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য বিবাহ নিবন্ধনকে ডিজিটালাইজেশন করা প্রয়োজন। ডিজিটালাইজেশন হলে প্রত্যেকটি বিয়ে অনলাইনে নিবন্ধিত হবে। এক্ষেত্রে কোন অভিভাবক ভুয়া বয়স দিলে নিকাহ রেজিষ্ট্রাররা তা শনাক্ত করতে পারবেন। ডিজিটালাইজেশন হলে বাল্যবিবাহের সঙ্গে প্রতারণামূলক বিয়েও কমে যাবে বলে দাবি করেন তিনি। 

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘বাল্যবিয়ের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে।  আমরা ইতোমধ্যে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বাল্যবিবাহ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। যেখানেই বাল্যবিবাহের খবর পাবে সেখানে তাৎক্ষনিকভাবে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করবেন। এছাড়া নিকাহ রেজিষ্ট্রার ও স্থানীয় ইমামদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদি কোন নিকাহ রেজিষ্ট্রার বাল্য বিবাহের সাথে জড়িত থাকেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।