রাইজিংবিডি স্পেশাল

সাধারণের ভরসা টিসিবি, অভিযোগও কম নয়

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে চাল, তেল, চিনি, ডাল, মাংসসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম। এমন অবস্থায় মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষের অন্যতম ভরসা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের ওপর।

কিন্তু এই টিসিবির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগও কম নয়। কম সংখ‌্যক নারীকে পণ্য দেওয়া, বিক্রয় কার্যক্রম অল্প সময় চালানো, পচা পেঁয়াজ বেশি করে কিনতে বাধ্য করাসহ নানা অভিযোগ ক্রেতাদের।

আগামীকাল থেকে টিসিবির পণ‌্য বিক্রি কার্যক্রমে সাময়িক বিরতি থাকবে। নভেম্বরের ৫-৬ তারিখে আবারও খোলাবাজারে বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে টিসিবির পরিবেশক আলম স্টোরের মালিক মো. আলম।

টিসিবি জানিয়েছে, ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে চিনির পাশাপাশি মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। সংস্থাটির ট্রাক থেকে প্রতি কেজি চিনি পাওয়া যাবে ৫৫ টাকায়। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি কিনতে পারবেন। প্রতি কেজি মসুর ডাল পাওয়া যাবে ৫৫ টাকায়। একসঙ্গে সর্বোচ্চ ২ কেজি ডাল কেনা যাবে। পেঁয়াজ পাওয়া যাবে ৩০ টাকা দরে। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১০০ টাকা দরে বিক্রি করবে টিসিবি। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল নিতে পারবেন।

কিন্তু রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় টিসিবির বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে বিভিন্ন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিনি এবং মসুর ডাল ২ কেজির বদলে ১ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে। তেল দিচ্ছে ২ লিটার করে। পেঁয়াজ ৩ কেজি দেওয়ার কথা থাকলেও ৫ কেজি করে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। নইলে তেল আর চিনি দিচ্ছে না। প্রতি প্যাকেজের দাম নিচ্ছে ৪৬০ টাকা।

আদাবর এলাকা থেকে আসা সিমকি খানম বলেন, ‘ডাল আর চিনি ২ কেজি করে দিলে ভালো হতো। দিচ্ছে ১ কেজি করে। পেঁয়াজ ৫ কেজি না নিলে তেল দিচ্ছে না। এত পেঁয়াজ নিলে পচে যায়।’

শ্যামলীর বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘পেঁয়াজ কম দিলে ভালো হতো। এবারের পেঁয়াজ মিশরের। পেঁয়াজের মান ভালো না। তারপরও নিতে হচ্ছে। নাহলে অন্য জিনিস দেয় না।’

বাবর রোড থেকে আসা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘তেল বাড়তি থাকলে ওরা নিয়ে যায়। সকালে আসার কথা থাকলেও এসেছে ২টার পরে। চিনি, তেল, ডাল বেশি চাইলেও দেয় না। অথচ নষ্ট পেঁয়াজ ৫ কেজি করে নিতে হচ্ছে। বিকেলের দিকে পেঁয়াজের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেবে। নইলে তেল দেবে না।’

মোহনপুর (হক সাহেবেরে গ্যারেজ) থেকে আসা সাবিহা আক্তার বলেন, ‘সকাল থেকে মালামাল দিলে ভালো হয়। ওনারা আসেন দুপুরের পরে। পুরুষদের তুলনায় কম মহিলাকে পণ‌্য দেয়। দুজন পুরুষকে দেওয়ার পর একজন মহিলাকে দেয়। আমরা বাসার সব কাজ ফেলে লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করি। তেলের টাকা বাঁচাতে গিয়ে আমাদের পচা পেঁয়াজ নিতে হচ্ছে। ভালো পেঁয়াজ যখন দেয়, তখন ৩ কেজির বেশি দেয় না।’  

পণ্যের মান এবং পরিমাণের বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির খিলগাঁও এলাকার পরিবেশক মো. আলম বলেন, ‘এবারের পেঁয়াজ কোল্ড স্টোরে থাকায় একটু ভেজা, তবে নষ্ট নয়। এগুলো মিশর থেকে আমদানি করা। আমরা যখন যেটা পাই, সেটাই বিক্রি করি। টিসিবির নিয়ম মেনেই পণ্য সরবরাহ করি। আজ রাস্তায় জ্যামের কারণে একটু দেরি হয়েছে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে সেটা পুষিয়ে দেবো। আজ ৩০০ জনকে দেওয়ার মতো পণ্য নিয়ে এসেছি।’