সাক্ষাৎকার

‘সামাজিক মাধ্যমে নয়, বইয়ে বেশি সময় দিন’

ড. জেবউননেছা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি এই বিভাগের প্রথম মহিলা সভাপতি হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে বিএসএস (সম্মান) এবং এমএসএস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি লাভ করেন। একই বিভাগ থেকে এমফিল ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি ভারতের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের গভর্ন্যান্স বিষয়ক পিএইচডি গবেষণা করেন।তিনি মালয়েশিয়ার পার্লিশ ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। তিনি প্রাবন্ধিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠক। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৩টি। সম্প্রতি ঢাকায় তার বাসায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ বরকতুল্লাহ।

সাইফ: আপনার লেখালেখির শুরুটা কীভাবে? ড. জেবউননেছা: শুরুটা যদি বলতে হয় তাহলে আমার বাবা কবি মু. জালাল উদ্দিন নলুয়া, আমার দাদুভাই তিনি হচ্ছেন পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি জাগো হুয়া সাভেরার অভিনেতা ছিলেন। তিনি বিয়ে করেছেন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের পরিচালক ও ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াহিদুল হকের পরিবারে। ওয়াহিদুল হক হচ্ছে আমার দাদির ভাতিজা। আমার দাদার ফুফাত ভাই নারায়াণগঞ্জের ৩০ দশকের কবি তার নাম এম এ মালেক। আমাদের বাড়িতে ১৯৫০ সালে মোশাররফ আলির প্রচেষ্টায় মুকুল ক্লাব গঠিত হয়। তার মানে এটা আমার বাবার জন্মের আগে আমাদের বাড়িতে সাহিত্যের একটা বিষয় ছিল। তখন হাতে লেখা একটি পত্রিকা ছিল। নাম ছিল হরকরা।  সেখানে মোশাররফ আলী কিশোর আন্দোলনের নলুয়া শিরোনামে দেখা যায় তার নাম জন্ম সাল ১৯৫০সালে। আমার ফুফু ষাট দশকে বাংলাদেশ বেতারে শিশু বিভাগে নিয়মিত কবিতা আবৃত্তি করতেন। এ সবই আমার জন্মের আগে।  আমার বাবা ৬০ দশক থেকে নাটক লেখেন। কিশালয় লেখক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। ৭০ দশকে ইমদাদুল হক মিলন আমাদের বাসায় আসেন।  আমার বাবা একটি নাটক লেখেন বাংলা আমার বাংলা এই নাটকটি একুশ ভিত্তিক।  এই নাটকে বাবা অ-বাঙালির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তখন আমার বয়স দুই বছর। বাবা উস্কখুস্ক চুলে অভিনয় করছেন সেইটা দেখে আমি দাদীর কোলে বসে আব্বু আব্বু করছি। যখন আমার বুলি ফুটলো আমার মা আমাকে কবিতা শিখাতেন। একুশ ভিত্তিক একটি অনুষ্ঠানে আমি সাড়ে ৫ বছর বয়সে কবিতা আবৃত্তি করি এবং প্রথম হই। ঢাকায় থানা পর্যায়ে জাতিয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা প্রথম হই। এই সাংস্কৃতিক জীবনের যাত্রা শুরু।

বাবা জালাল উদ্দিন নলুয়া, মা লুৎফা জালাল এবং জেবউননেছা- তিনজনই বাংলা একাডেমির সদস্যা। ছবি  বাংলা একাডেমিতে

সাইফ: বলা যায় আপনি সাংষ্কৃতিক পরিমণ্ডলেই বেড়ে উঠেছেন- জেবউননেছা: হ্যাঁ। ৮০ দশক থেকে মা কবিতা লেখা শুরু করেন।  তার প্রথম কবিতার নাম অলঙ্কার।  ১৯৮৯ সালে আমি কবিতা লেখলাম।  ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি তখন আমি প্রথম কবিতা লিখি। বাবা ওই কবিতায় আমাকে সাহায্য করেননি। ৭ম শ্রেণিতে আমার এ কবিতা নিয়ে সাক্ষাৎকার ছাপা হলো।  আমার প্রথম অনুগল্প অসহায় পথশিশু মিনুর গল্প ৯৪ সালে ছাপা হয়। ৯৪ সাল থেকে গল্প, প্রবন্ধ লেখা শুরু।  আমি বিভিন্ন জায়গায় সঞ্চালনার কাজ করেছি। কলেজে পড়া অবস্থায় মিনি পত্রিকা কাগজে প্রতিবেদন লিখতাম। 

সাইফ: মুক্তিযুদ্ধ বিষয় নিয়ে গবেষণা কীভাবে শুরু করলেন? জেবউননেছা: আমার নানা ছিলেন রাজনীতিবিদ।  নানা বাড়িতে ছোটবেলায় বঙ্গবন্ধুর বড় ছবি দেখেছি। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে নানা বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর ছবি ঝুলতো। আমাদের বাড়িতে বৈঠক খানায় ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শিরোনামে সাত বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি ছিল। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন সংখ্যাগরীষ্ঠতা পেলো তখন আমার বাবা একটা নাটক লিখলেন। নাটকের নাম ছিল ‘জয় নৌকা’। ওই নাটকটি ৭০ সালের ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জে মঞ্চস্থ হয়েছে। আমরা তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই বড় হয়েছি। ২০০১ সালে  আমাদের ইউনিয়নের কমান্ডার তমিজউদ্দিন আহমেদ আঞ্জু কাকার সাক্ষাৎকার নিলাম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। আমি ১৯৯৪ সালে একাত্তর নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করি আমি ১৯৯২-৯৩ সাল থেকে। ছড়া, কবিতা অনেক কিছু লিখেছি। ৯৫ সাল থেকে পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ শুরু করি।  বাবার ডায়রি থেকে লিখলাম। বাবার ডায়েরি সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখলাম ৬৯ সাল থেকে বাবা নিয়মিত দিনলিপি লিখতেন। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিলাম। যে কারণে আমি সাহিত্য ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আগ্রহী হই। এরপর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ১৮টি সংগঠনের সাথে যুক্ত হই। ৯৬ সালে আমাদের নারায়ণগঞ্জে আলী আহমেদ চুনকা মিলনায়তন, এখানে স্বরবর্ণ প্রকাশনী ছিল।  এখানে আমরা ভাইবোন বাব-মা, আমাদের পরিবার শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতার আয়োজন করতো। আবৃত্তি সন্ধ্যা হতো।  আমার জন্মই হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ চর্চার মধ্য দিয়ে।

সাইফ: আপনি গবেষণা শুরু করলেন, অনেক লেখালেখি করছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার প্রথম বই কোনটি? জেবউননেছা: এখানে একটা কথা আছে, ইন্টারমেডিয়েট পড়লাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসলাম, বিভিন্ন জায়গায় জড়িয়ে গেলাম, পড়ালেখা- তো একটা জীবন। এটা শেষ করার পর লেখালেখি তো চলছে। এরপর আমার এমফিল ডিগ্রি শেষ হয়ে গেল, তখন আমার মনে হলো বড়দের গল্প শোনে আমি একটি গ্রন্থ বের করবো, সম্পাদনা করবো। আমার প্রথম বই ছিল ‘মুক্তিযুদ্ধ: বুদ্ধিজীবীর দৃষ্টিকোন ও অভিজ্ঞতা’। এটাতে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার, রফিকুল ইসলাম স্যার ও জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যার লিখেছেন। আমার দ্বিতীয় বই হচ্ছে ‘আলোকিত নারীদের স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ’।

ড. জেবউননেছার রচিত গ্রন্থের প্রচ্ছদ

সাইফ: আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করছেন। বই বের হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য গ্রন্থও লিখছেন। গত কয়েক বছরে বাজারে দেখেছি প্রচুর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বই বের হয়েছে। কিন্তু কিছু সমালোচনা আছে, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য এসব গ্রন্থে আসছে না বা যারা লিখছেন এ বিষয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারছেন না।  আপনার মতামত জানতে চাই।   জেবউননেছা: মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের ঘটনাগুলো জানতে আমি ছুটে গিয়েছি সংশ্লিষ্ট সবার কাছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক ঘটনা অনেকে অনেকভাবে বলবেন, কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে যদি আমরা কাজ করতে পারি, তাহলে সেই ইতিহাসটি সত্যি ঘটনা। 

সাইফ: আপনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কাজ করছেন, সামনে আরও করবেন। এই কাজগুলো তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা। আগামী প্রজন্ম যারা আসবে তারা এই গ্রন্থগুলো পড়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারবে। কিন্তু এখন যারা নতুন, তরুণ যারা গবেষক হিসেবে কাজ করতে চান- তাদের জন্য করণীয় কী? জেবউননেছা: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করতে হলে তিনটি বিষয় সাথে রাখতে হবে- বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধ। এই তিন বিষয়ে জানতে হবে। প্রচুর বই পড়তে হবে। সামাজিক মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কে কি লিখল-এগুলো না পড়ে আমাদের যারা উত্তরসূরী তারা কি লিখে গেছেন- সেগুলো পড়তে হবে। আমি এখন যা করছি তা হলো, যারা যারা এই বিষয়গুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাদের বিষয়ে আমি কাজ শুরু করেছি। প্রচুর বই সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। আমি চাই আমার ছেলে বা পরের প্রজন্ম যারা তারা সত্যিকার ইতিহাসটা জানুক। আমি তরুণদের বলব, ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়ার জন্য।

সাইফ: মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পার করছি। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু পরিবার এবং এসব বিষয় নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে এবং হচ্ছে। এখন কী বিষয় নিয়ে লেখা দরকার বা যে বিষয়টি এখনো কারো লেখায় উঠে আসেনি? জেবউননেছা: আমি তো মনে করি এই দেশে বীরবিক্রম, বীরউত্তম, বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছেন তাদের বাড়িতে সব সময় বাংলাদেশের একটা পতাকা থাকবে- অর্থাৎ পতাকা থাকলে মনে করতে হবে এটা বীরবিক্রমের বাড়ি, বীরউত্তমের বাড়ি। তাদের কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, তাদের ইতিহাসের পাতায় তুলে রাখা এটার জন্য কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ ফারুক ইকবাল।  রাজধানীর ব্যস্ততম মৌচাক মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মারক ফারুক ইকবাল- তসলিম স্মৃতি সমাধি সৌধ।  ফারুক ইকবাল ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। আমি সেদিন গিয়েছিলাম সেটা দেখার জন্য। এই কবরের ভগ্নদশা অবস্থা-এটা নিয়ে আমি ঢাকা জেলা প্রশাসককে বলেছি। অনুসন্ধানি হতে হবে। ধানমন্ডি গার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ধানমন্ডি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়) সেখানে ১৯৭১ সালে ক্যাম্প ছিল, সেই ক্যাম্পে মহিলাদের জন্য একটা রুম ছিল, সেই রুমে মহিলাদের আটকিয়ে রাখা হতো- এগুলো আমরা কেউ জানতাম না। আমি বের করেছি। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। এরকম অনেক ঘটনা আছে জানি না।  অনুসন্ধান করে এগুলো বের করতে হবে।

সাইফ: আপনি শিক্ষকতা করছেন, লেখালেখি করছেন, সামাজিক কাজ করছেন। সাথে সংসারও আছে। এই যে এতগুলো কাজ একসঙ্গে করছেন- কীভাবে বিষয়গুলো সমন্বয় করেন? জেবউননেছা: প্রত্যেকটা মেয়ে তার মায়ের কাছ থেকে শিখে। আমি আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি। আমি এমন একটা মেয়ে ছিলাম ভাত রান্না করতে জানতাম না।  হলে আমার একজন বড়বোন ছিলেন, তাকে আমি বলতাম ভাত আবার রান্না করতে হয় নাকি! সেই মেয়ে এখন সবকিছু করি। সব রান্না করি। নারী হিসেবে আমি বলতে চাই- এই সমাজে একজন নারীকে কেউ জায়গা করে দেয় না, ক্ষমতায়ন দেয় না। সব নিজের করে নিতে হয়। সমাজে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন থাকলেও মানসিক ক্ষমতা, সামাজিক ক্ষমতা খুবই কম। মানসিক ক্ষমতা অর্জনের জন্য নারীকে হতে হবে অর্থনৈতিক এবং আত্মনির্ভরশীল। সেই জায়গাটা আমার আছে। যে কারণে আমি সংসার, বাচ্চা, লেখালেখি সব জায়গায় সময় দিচ্ছি।  আমার ঘুম ভাঙে প্রত্যুষে। ঘুম থেকে উঠে রান্না শেষ করে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতাম। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলাম। আমি এখন ২৫টি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। আমি প্রচণ্ড নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। তীক্ষ্ম হতে হবে। প্রায়রিটি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। প্রত্যেক মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হবে। পারফেক্ট হওয়ার চিন্তা থাকতে হবে। পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে। আমি সবকিছু পরিকল্পনা করে করি। একজন নারী যদি পুরোপুরিভাবে পরিকল্পিত না হন তাহলে তার নিজের জীবন পুরোটাই রান্না ঘরে কেটে যাবে।

 জেবউননেছার সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন কথাসাহিত্যিক সাইফ বরকতুল্লাহ

সাইফ: আপনি তো ৮০ দশক দেখেছেন, ৯০ দশক দেখেছেন। সেই সময়ের নারীদের সঙ্গে বর্তমান সময়ের নারীদের কীভাবে দেখেন? জেবউননেছা: আমি লেখাপড়া শেষ করে যখন গবেষণায় আসলাম, যখন নতুনভাবে পৃথিবীটাকে জানতে শিখলাম, বুঝতে শিখলাম।  আমার কাছে মনে হলো নারীদের ক্ষমতা অনেক দরকার। আমরা এখনো নারীদের ক্ষমতায়ন করতে চাই না। আপনি যে একজন নারী আপনাকে সব সময় মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। 

সাইফ: আপনার জন্মদিনগুলোতে (ছোটবেলায়) আপনাদের বাড়িতে সাহিত্য আড্ডা হতো। আপনাদের বাসায় আপনার বাবা মাসে একটা সাহিত্য আসর করতেন। সেই সময়গুলোতে অনেক সাহিত্য আড্ডা হতো। সেই আড্ডার মাধ্যমে অনেক লেখক, সাহিত্যিক সংস্কৃতিমনা লোক তৈরি হতো। এখন কিন্তু তা হারিয়ে গেছে।   জেবউননেছা: আমার বাবা অনেক তরুণ লেখক তৈরি করেছেন। আপনি বাবার সঙ্গে কথা বলে মুগ্ধ হয়ে যাবেন। আমার বাবার বন্ধু হচ্ছে তরুণরা, যুবকরা। বাবা আমাকে শিখিয়েছেন ‘দেখ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে মানুষ বুড়ো হলে চুল পাকে, দাঁত পড়ে, কিন্তু কবিরা কখনো বুড়া হয় না’।  এখনো কোনো অনুষ্ঠানে গেলে বাবা নতুন লেখক, তরুণ কবিদের ধরে বলেন কবিতা পড়তে। এখনো আমাদের বাড়িতে সাহিত্য আড্ডা হয়। আমাদের বাড়িতে একটা স্মৃতিকক্ষ (নারায়ণগঞ্জে) আছে।  সেখানে এখনো আড্ডা হয়।

সাইফ: আপনার বাবা যে কাজগুলো করেছেন তা অনুসরণীয়, অনুকরণীয়। আপনার কী কোনো প্ল্যান আছে বাবার মতো এরকম আলোকিত কিছু করার? জেবউননেছা: বাবা তো নিজেই আমাদের আলোকিত করে দিয়ে গেলেন। আমি মনে করি একটা মানুষের ধ্যানে, জ্ঞানে স্বপ্নে যদি তার দেশ না থাকে তাহলে সে প্রকৃত নাগরিক হতে পারে না। আমি নিজেকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রচুর বই পড়ছি। বাংলাদেশ নিয়ে গবেষণা করছি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করছি। পরিণত বয়সে আমি যে লেখাগুলো লিখেছি রাষ্ট্র, দেশ ও সমাজ নিয়ে-সেসব নিয়ে একটি গ্রন্থ আসছে সামনে। এখানে ১০০টি প্রবন্ধ রয়েছে। নাম ‘সোনালী বাংলাদেশের প্রত্যাশায়।’ এটা তরুণদের জন্য করছি। তরুণদের বলব, দেশটাকে জানতে হলে সামাজিক মাধ্যমে নোটিফিকেশন দিয়ে জানার কোনো সুযোগ নাই। বইয়ের পাতা উল্টাতে হবে, বইয়ের ঘ্রাণ নিতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে নয়, বইয়ে বেশি সময় দিন। দেশটাকে জানতে হলে সামাজিক মাধ্যমে নোটিফিকেশন না, প্রসিদ্ধ লেখকদের গ্রন্থ পড়ার জন্য আমি তরুণদেকে পরামর্শ দেই। আমি চাই আমার প্রজন্ম থেকে এমন কিছু লেখা দিয়ে যেতে যেটা তরুণ প্রজন্মের জন্য কাজে লাগবে।