রাইজিংবিডি স্পেশাল

পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি

করোনার চোখ রাঙানির মধ্যেই রোববার (১৪ নভেম্বর) শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এতে অংশ নিচ্ছে ২২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। মাস্ক পরে, হাতে স্যানিটাইজার নিয়ে তাদের ঢুকতে হয়েছে পরীক্ষাকেন্দ্রে। কেন্দ্রের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছে সব কার্যক্রম। কিন্তু, কেন্দ্রের বাইরে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখা গেছে।

করোনাকালে বৃহত্তম এই পাবলিক পরীক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন নিশ্চিত করতে সব কেন্দ্রে হাত জীবাণুমুক্ত করা ও তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। রাখতে হবে আইসোলেশন রুমও। পরীক্ষাকেন্দ্র এলাকায় অভিভাবকদের ভিড় না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশের আগে প্রথম দিকে পরীক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হলেও পরবর্তী সময়ে সেটা করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্রে ঢুকলেও বাইরে তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকরা ভিড় করছিলেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগেই স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে উদাসীন ছিলেন।

পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ যেন কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতরে প্রবেশ না করে, সে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই কেদ্র পরিদর্শনকালে অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষমান অভিভাবকদের উদাসীনতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একজনের বেশি অভিভাবক না আসতেও অনুরোধ জানান শিক্ষামন্ত্রী।

অভিভাবকদের ব্যাপক ভিড়ের কারণে পরীক্ষার্থী, পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে কেন্দ্রে ঢোকা কঠিন হয়ে পড়ে। স্কুলের সামনের প্রধান সড়কে তৈরি হয় যানজট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিভাবকদের সরে যেতে বললেও তাতে কাজ হয়নি।

সোয়া ৯টা থেকে এই কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা ঢুকতে শুরু করে। অভিভাবকদের উপচে পড়া ভিড় ঠেলে কেন্দ্রে প্রবেশ করা শিক্ষার্থীরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রাস্তায় তীব্র যানজটের কারণে অনেক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরেও কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ১০টা ২১ মিনিটে হলে ঢুকতে দেখা গেছে।

সোহেলী নামের ওই পরীক্ষার্থী বলেন, ‘সারা রাস্তায় জ্যাম। অনেক দূরে রিকশা থেকে নেমে দৌড়ে এসেছি। কেন্দ্রের কাছাকাছি এসেও অভিভাবকদের জটলার কারণে কেন্দ্রে ঢুকতেই বেশ সময় লেগেছে।’

আরেক শিক্ষার্থী মিতা বলেন, ‘গার্ডিয়ানদের কারণেই অনেক সমস্যা হচ্ছে। ভিড় ঠেলে অনেক কষ্টে হলে ঢুকতে হয়েছে। তাদের কারণে দেরি হচ্ছে। এত ভিড় যে, করোনার ভয় হচ্ছে।’

একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে একাধিক অভিভাবক কেন্দ্রে আসায় জটলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে স‌ুব্রত শেখর ভক্ত নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘সরকার যতই বলুক, পাবলিক পরীক্ষায় বাবা-মাকে তো আসতেই হয়। বাচ্চারা বের হয়ে তো গার্ডিয়ানকে খুঁজবে। মোবাইল নাই, দূরে থাকলে পাবে কী করে? তাই সবাই গেটের কাছেই ভিড় করছে। তবে, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্রে আসা উচিত।’

আরেক অভিভাবক ক্যামেলিয়া আহমেদ বলেন, ‘মেয়ের জন্য টেনশন হয়। সে পরীক্ষা দেবে, তখন তো আমি বাসায় বসে থাকতে পারি না। ওর বাবা এসেছেন, তারপরও সঙ্গে আমি এসেছি। মায়ের মন তো !’

নবীন হোসেন নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘এত শিক্ষার্থী একসাথে পরীক্ষা দিলে ভিড় তো হবেই। এটা আটকে রাখা সম্ভব না। তবে, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেন্দ্রে আসা উচিত।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দেরিতে হলেও পরীক্ষা দিতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। পরীক্ষার কারণে পড়াশুনায়ও গতি এসেছে। নিরাপদে পরীক্ষা দিতে পারছি, এতেই আমি খুশি।’

অভিভাবক মনসুর মাহমুদ বলেন, ‘কেন্দ্রের বাইরে জটলা আছে। কিন্তু ভেতরে তো দূরত্ব মেনেই পরীক্ষা হবে। গেট দিয়ে তো জীবাণুমুক্ত করেই বাচ্চাদের প্রবেশ করানো হচ্ছে। সেজন্য তেমন ভয় পাচ্ছি না।’

পারভীন রহমান নামের এক অভিভাবক বললেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে এবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষার্থীরারা পড়াশোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করছি।

তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন পর পরীক্ষাটা হচ্ছে, অ্যানাউন্সমেন্টের পরই মূলত পড়াশোনা শুরু হইছে। আগে তেমন পড়েনি। ফলে গ্যাপ পড়বে। এই গ্যাপটা সারা জীবন থেকে যাবে।’