রাইজিংবিডি স্পেশাল

যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনলো পর্যটনের দেশ মালদ্বীপ

ছোট-বড় মিলিয়ে হাজার দুয়েক দ্বীপ নিয়ে গঠিত ছোট্ট দেশ মালদ্বীপ। সমুদ্রের নীল জলরাশি ঘেরা দেশটিতে জনসংখ্যা ৫ লাখের কিছু বেশি। সারা বিশ্বে পর্যটনের ক্ষেত্রে ১ নম্বর স্বীকৃতি পাওয়া দেশ মালদ্বীপ। পর্যটন থেকে জাতীয় আয়ের ৭০ শতাংশ আসে। সারা বিশ্ব থেকে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ঢুকছেন দেশটিতে। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এই দেশটি করোনা নিয়ন্ত্রণে এনে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে।

মালদ্বীপের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার তৃতীয় ও চতুর্থ ঢেউয়ের সময় কঠোরভাবে বিধি-নিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানার সুফল ভোগ করছে দেশটি। বিশেষ করে, বিদেশি পর্যটকদের স্বাস্থ্য সনদ ও করোনা টেস্ট রিপোর্ট শতভাগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সফলতার মুখ দেখেছেন তারা। 

এ বিষয়ে মালদ্বীপের রাজধানী মালে শহরের আডিক হাসপাতালের বাংলাদেশি চিকিৎসক সানোয়ার আহমেদ বলেন, ‘সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং স্থানীয় ও প্রবাসীদের সহযোগিতার ফল মালদ্বীপের এই সাফল্য।’

তিনি বলেন, ‘এখানকার মানুষ এবং ট্যুরিস্টরা নিয়মকানুন মেনে চলছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য হচ্ছেন। এখানে আইন ভীষণ কড়া। সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তা গোপন রাখেননি। কোনো আইল্যান্ডে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বাড়লে সেই আইল্যান্ডকে পুরো মালদ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসাসেবা বাড়ানো হয়েছে।’

হুলহুমালে শহরে সাত বছর থেকে বাস করছেন বাংলাদেশি মনিরুল আলম। তিনি বলেন, ‘এখানকার আইন-কানুন খুবই কঠোর। সিসি ক্যামেরা এবং প্রশাসনের কড়াকড়িতে কেউ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করেননি। মাস্ক ছাড়া রাস্তায় কাউকে পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে এক হাজার রুফিয়া (বাংলাদেশি ৫ হাজার টাকা) জরিমানা করা হয়। তাই, সবাই স্বাস্থ্যবিধি এবং মাস্ক পরে চলাচল করেন সবাই।’

মালদ্বীপের পর্যটন নগরী হুলহুমালে, মাফুসি আইল্যান্ড এবং রাজধানী মালে শহরের সবখানেই দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধির সঠিক প্রয়োগ এবং মাস্কের ব্যবহার। স্থানীয় জনগণ, পর্যটক এবং প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যেও দেখা গেছে ব্যাপক সচেতনতা।

বিদেশি পর্যটকদের ক্ষেত্রে অনলাইনে আগাম স্বাস্থ্য ঘোষণাপত্র পূরণ করা ছাড়া মালদ্বীপে সম্পূর্ণভাবে প্রবেশ নিষেধ করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে ঢোকা এবং বেরোনোর সময় সবাইকে অনলাইনে ফরম পূরণ করতে হয়। মালদ্বীপ ছাড়া বিদেশি যেকোনো নাগরিককে https://imuga.immigration.gov.mv/ethd ওয়েবসাইটে ঢুকে ফরম পূরণ করতে হয়।

এই সাইটে ঢুকে পাসপোর্ট নম্বর এবং যাবতীয় স্বাস্থ্যগত তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি ৯৬ ঘণ্টার পিসিআর টেস্ট রিপোর্টের কিউআর কোড আপলোড করতে হয়। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হলে এই ওয়েবসাইট থেকে একটা অনুমতিপত্র দেওয়া হয়, যা ভ্রমণের সময় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মালে এয়ারপোর্টে ওই কিউআর কোড স্ক্যান করে তথ্য যাচাই করা হয়। এরপর সেখানে করোনা টেস্ট রিপোর্ট দেখে ওই নাগরিককে মালদ্বীপে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়।

মালদ্বীপ এয়ারপোর্টে কর্মরত ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজমুল বলেন, ‘বিমান থেকে এয়ারপোর্টে নামার পর ইমিগ্রেশনে ঢোকার আগ মুহূর্তে সব যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা অটোমেশিনের মাধ্যমে স্ক্যান করা হয়। কারও শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাকি হলে তাকে ভিন্ন লাইনে পাঠানো হয়। এরপর পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে করোনার কোনো লক্ষণ না থাকলে তাকে মালদ্বীপে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। আর লক্ষণ থাকলে ওই যাত্রীকে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়।’

গত নভেম্বর মাস থেকে বাংলাদেশি বেসরকারি এয়ারলাইন্স হিসেবে মালদ্বীপে যাত্রা শুরু করেছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। এয়ারলাইন্সটির মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাকালে সব দেশেই অনেক কড়াকড়ির মাধ্যমে যেতে হয়। মালদ্বীপ ভ্রমণের ক্ষেত্রে করোনার পিসিআর টেস্ট রিপোর্ট, মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য ঘোষণাপত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব ছাড়া মালদ্বীপে ঢোকা বা বের হওয়া যায় না।’