সাক্ষাৎকার

আইটিতে বিশ্বে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ: হানিপ

‘ওরাকল, মাইক্রোসফট, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে একদিন নেতৃত্বে থাকবে বাংলাদেশিরা। এসব কোম্পানিতে কাজ করবে এদেশের লাখ লাখ মেধাবী তরুণ-তরুণীরা। আমেরিকার মতো দেশে বসে আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করে নিজেদের নিয়ে যাবে অন‌্যন‌্য উচ্চতায়। শুধু তাই নয়, চাইলে দেশে বসেই মার্কিন মুলুকের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করতে পারবে। নিজেদের ব‌্যক্তি উন্নয়নের সঙ্গে কাজ করবে দেশের জন‌্য, দেশের মানুষের জন‌্য। এজন‌্য দরকার আইটিতে দক্ষ মানবসম্পদ।’

এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ‌্যে আইটিতে দক্ষ জনবল গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন আমেরিকার আইগ্লোবাল ইউনিভার্সিটির সত্ত্বাধিকারী ও চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ। শুধু একাডেমিক কাজ করলে হবে না স্কিল ডেভেলপমেন্ট দরকার। নিজের সেই পরিকল্পনায় ‘স্কিল ডেভেলপমেন্টের মেথড’ নিয়ে নীরবে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন এই বাংলাদেশি। সম্প্রতি আমেরিকার স্বনামধন‌্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইগ্লোবাল ইউনিভার্সিটির মালিকানা নিয়েছেন তিনি, যা একজন বাংলাদেশি হিসেবে এই প্রথম। 

এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার হানিপ বলেন, ‘ভবিষ‌্যত পরিকল্পনা হলো- আমি এই ভার্সিটিকে ‘মানি মেকিং মেশিন’ বানাতে চাই না। আমি এটাকে সার্ভিস ওরিয়েন্টেড করতে চাই। সোশ‌্যাল প্রবলেমকে সমাধান করতে চাই। একদিন এই ভার্সিটি সবার জন্য মডেল হয়ে উঠবে। আমার এই মেথডটা স্ফ্রিঙ্গার নামে একটি পাবলিশিং কোম্পানিতে ছাপা হয়েছে। আমি মনে করি এই মেথড সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করবে।’

শিক্ষা জীবনে ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাচেলর করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে। এছাড়া কম্পিউটার সাইন্সে মাস্টার্স করেছেন নিউইয়র্ক ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে। 

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাইজিংবিডির সিনিয়র রিপোর্টার এসকে রেজা পারভেজ।

রাইজিংবিডি : আপনি আইটিতে দক্ষ জনবল গড়তে কাজ করছেন। কোন ভাবনা থেকে এই‌ ধরনের কাজে সংশ্লিষ্ট হতে উৎসাহ পেলেন?

আবুবকর হানিপ : আমি চুয়েট (চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ‌্যালয়) থেকে ইলেকট্রিক এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করে আমেরিকা যাই। সেখানে চাকরি পাচ্ছিলাম না। আমি অনুধাবন করলাম উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণের বিকল্প নেই। আমি সেখানে কম্পিউটারে মাস্টার্স করি। সেখানে প্রায় ৪.০ নিয়ে যখন বের হই, তখনও দেখি চাকরি নেই। যেখানে আবেদন করি তারা অভিজ্ঞতা চায়। আমার অভিজ্ঞতাও তো নাই। সেজন্য আমি কিছু স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স করি। সেখানে ভেন্ডর সার্টিফিকেশন অর্জন করি। জাভা, ওরাকল, সানসোলারিজ এমন অনেকগুলো সাবজেক্টের ওপরে ভেন্ডর সার্টিফিকেশন অর্জন করি। তারপর আমার চাকরি মেলে। যেখানে আমি বার্ষিক ৫০ হাজার ডলারে চাকরি খুঁজছিলাম। সেখানে আমার প্রথম চাকরি ৭৫ হাজার ইউএস ডলার! 

আমি প্রথম দিনে অফিসে গিয়ে দেখি সেখানে বাংলাদেশি কেউ নেই। তখন আমার মাথায় এলো কীভাবে বাংলাদেশিদেরকে এসব চাকরিতে আনা যায়। তখন আমি আমার বন্ধু যারা চাকরি পায়নি তাদের অফার করলাম। তাদের বললাম কীভাবে চাকরি পেতে হয় আমি জানি। আই ক্যান হেল্প ইউ। এর মধ্যে অনেকে বললো আসলে কি সম্ভব? এদের মধ্যে একজন যে কম্পিউটার সাইন্সে ব্যাচেলর করেছে- চাকরি না পেয়ে ট্যাক্সির গ্যারেজ দিয়েছেন। তিনি আমার কথা শুনলেন এবং আমার অ্যাপার্টমেন্টে ছয় সপ্তাহ ট্রেনিং করলেন। ট্রেনিং করে তার প্রথম ইন্টারভিউ আইবিএমের সঙ্গে হলো। তিনি হ্যাজিটেট ছিলেন চাকরি হবে কি হবে না। আমি বললাম, অভিজ্ঞতার জন্য সেখানে যান। আপনার কাজে লাগবে। ইন্টারভিউয়ার্স খুব খুশি হয়ে তাকে টেবিলেই জব অফার দিলেন। সেটি ছিলো বার্ষিক একলাখ ডলার। এটা আমাদের অবাক করলো। আমরা দুজনই বিস্মিত হলাম। এ ঘটনার পর অনেকে আমার কাছে এলো। আমি তাদের আমার বাড়ির বেইজমেন্টে রেখে পড়ানো শুরু করলাম।

যখন পড়ানো শুরু করলাম, বিভিন্ন রাজ্য থেকে তারা এসে আমার এখানে রাতে থাকতো। তারপর পর্যায়ক্রমে প্রায় ৩০০ লোককে বিনা টাকায় চাকরি দিলাম। এরপর যখন এটি বাড়ছে তখন সেটা আমি ইনস্টিটিউশনাল আকারে করলাম। এর মাধ‌্যমে প্রায় সাত হাজার বাংলাদেশি আমেরিকার মেইনস্ট্রিমে চাকরি করছে, যাদের বেতন এক থেকে দুই লাখ ডলার বার্ষিক আয়। যারা ১৫ ডলার আওয়ার ইনকাম করতো অর্থাৎ বছরের ৩০ হাজার ডলার ইনকাম করেছে, ৫০ হাজার ডলার ইনকাম করেছে; তাদের ট্রেনিং করিয়ে এক লাখ ডলারে চাকরি দিয়েছি।

যারা সদ্য মাস্টার্স করলো সেখানে এন্ট্রি লেভেলের জব খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। তারা আমার প্রতিষ্ঠানে এসে টিউশন ফি দিয়ে চার মাস ট্রেনিং করে চাকরি পাচ্ছে।

রাইজিংবিডি : আপনি সম্প্রতি আমেরিকায় আইগ্লোবাল ইউনিভার্সিটির মালিকানা নিয়েছেন। একজন বাংলাদেশি হিসেবে বিদেশের মাটিতে কোনো বিশ্ববিদ‌্যালয় কিনলো কেউ। বিশ্ববিদ‌্যালয় কেনার কারণ কী?

আবুবকর হানিপ : আমেরিকায় ব্যাচেলর বা মাস্টার ডিগ্রি নেওয়ার পর ঘাড়ে ৭০-৮০ হাজার ডলারের লোন থাকে। এই লোন নিয়েও যারা এন্ট্রি লেভেলের জব খুঁজে পায় না তখন তারা হতাশায় ভোগে। দ্বিতীয় হলো, আপনি যদি কোনো কোম্পানির সিও বা ম্যানেজার হন। তখন এন্ট্রি লেভেলের লোকদের যখন হায়ার করবেন, তাদের বেতন দিলেন, টাইম ইউটিলাইজ করলেন এবং তাদের শেখাতে কর্মীদের নিয়োজিত করলেন। শেখানোর পর ছয়মাস বা একবছর পর শিখে অন্য কোম্পানি চলে গেলো বেশি বেতনের জন্য। যখন চলে যায়, তখন তো আপনার রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট আসছে না। কারণ তার জন‌্য আপনি ইনভেস্ট করলেন। ফিডব‌্যাক কী পেলেন? তখন আপনি আর এন্ট্রি লেভেলের জবের জন্য আর কাউকে নেবেন না। এজন্য আমেরিকার যেসব জব সার্চ ইঞ্জিন আছে সেখানে যে সিভি সাবমিট করা হয় ওসবে খুঁজে দেখবেন সেখানে এন্ট্রি লেভেলের জব পোস্টিং নেই। সবাই অভিজ্ঞ লোক চায়। তাহলে এটা আরো একটি সমস্যা।

তৃতীয়ত, আমেরিকায় প্রতিবছর এইচওয়ানবি ক্যাটাগরির মাধ্যমে বা এমপ্লয়মেন্ট ভিসার মাধ্যমে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে যায়। অথচ আমেরিকায় গ্রিন কার্ড ও সিটিজেন হোল্ডার যারা ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স করে তারা এট্রি লেভেলের জব পাচ্ছে না। এর মানে তাদের স্কিল গ্যাপ। এটা যখন আমি বুঝতে পারলাম এমন যদি একটি ইউনিভার্সিটি থাকে যেখান থেকে ডিগ্রিও নেওয়া যাবে, আবার স্কিলডও অর্জন করা যাবে। তাহলে গ্রাজুয়েটদের আর এন্ট্রি লেভেলের জব খুঁজতে হবে না। সে মিড লেভেলের এবং সিনিয়র লেভেলে জব পাবে। সেই ধারণা থেকে খুঁজতে খুঁজতে ‘ইনোভেটিভ গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি’র মালিকানা নিয়েছি।

এক হার্ভার্ড গ্রাজুয়েট ২০০৮ সালে এই ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ওনার অনেক ছাত্রকে আমি চাকরি দিয়েছি, সেই সুবাদে আমার সঙ্গে পরিচয়। ওনার বয়স ৮৩ বছর। ওনার কাছ থেকে আমি কিনে নিয়েছি। সেটা এক বছর হলো। স্কিল ডেভেলপমেন্ট অংশটাকে আমি ইন্ট্রিগ্রেট করছি। ব্যাচেলর বা মাস্টার্স ডিগ্রি করবে যেটাতে বিজনেস, আইটি, কম্পিউটার সাইন্স, সাইবার সিকিউরিটি এসব কোর্সগুলোতে পাস করার সঙ্গে সঙ্গে যাতে চাকরি হয়, একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি স্কিল ডেভালপমেন্ট সংযুক্ত করেছি। ফলে তাদের আর হতাশ হতে হবে না। এজন‌্য এই ইউনিভার্সিটি নেওয়া। 

এই প্রতিষ্ঠানে ৭০-এর মধ‌্যে পিএইচডি প্রফেসর আছে, ফুল টাইম ও এডজ‌্যানক্ট এরকম মিলিয়ে; যাদের ইন্ডাস্ট্রি অভিজ্ঞতা আছে ৪ বছর থেকে ৩০ বছর প্লাস ওরা স্কলার। স্কলার প্লাস প্রাকটিশনার, দুটো জিনিসই আছে। রিয়েল লাইফে যেসব জিনিস তাদের জানা আছে সেগুলো তারা পড়ায়। আমি মনে করি এটা একটা নতুন উদ্ভাবনী মেথড।

রাইজিংবিডি : এই স্কিলড ডেভেলপমেন্টের মাধ‌্যমে আপনার ভবিষ‌্যত পরিকল্পনা কী?

আবুবকর হানিপ : আমি চাচ্ছি, বাংলাদেশিদের আরও প্রমোট করার জন্য। এক মিলিয়ন ডলারের স্কলারশিপ দিচ্ছি। ২০২২-তে এই এক মিলিয়ন ডলার স্কলারশিপের মধ্যে যারা এইচএসসিতে এ বা গোল্ডন এ+ পেয়েছে তারা আবেদন করতে পারে। যারা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে তাদের সরাসরি আমরা একশ ভাগ স্কলারশিপ দেবো।

অর্থাৎ পুরো চার বছর কোনো টিউশন ফি লাগবে না। যারা তার থেকে নিচে রয়েছে, তাদের ৫০ ভাগ থেকে ১০০ ভাগ স্কলারশিপ দেওয়ার চিন্তা করছি। আমাদের একাডেমিক টিম আছে, ওরা এটা বিবেচনা করবেন। আর যারা মাস্টার্স করতে যাবেন, তাদের জিপিও যদি ৩.৫ এর ওপরে থাকে, তাদেরকেও আমরা কনসিডার করব। যেন ৫০ থেকে ১০০ ভাগ স্কলারশিপ পায়। আমার উদ্দেশ্য হলো, যারা গোল্ডেন এ+ পেল তারা অবশ্যই ট্যালেন্টেড স্টুডেন্ট। তারা যদি আমেরিকাতে যায়, তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে এক্সপার্ট করলে দেখবেন যে, তারাই এরপর গুগল, অ্যামাজন, ওরাকলসহ বড় বড় ফরচুন ১০০ কোম্পানিতে চাকরি করবে। কোনো এক সময় এরা দেখবেন এই সব কোম্পানি লিড করতে পারবে। ওখানে লিড করা মানে আমাদের দেশে আউটসোর্সিং প্রজেক্টও আসবে। কারণ ওরাই তখন বাংলাদেশ কোম্পানিগুলোকে বেশি কাজ দিতে পারবে। যেভাবে ভারত করছে।

একই সঙ্গে আমাদের একটা ভিজিবিলিটি সেই সব কোম্পানিতে তৈরি হবে। এই ট‌্যালেন্টগুলোকে যদি আমরা নিতে পারি তাহলে এরা আমাদের লিড করবে। এটা আমার একটা স্যাক্রিফাইস টু দ্যা কান্ট্রি। এই এক মিলিয়ন ডলারের স্কলারশিপ আমি পে করবো। সত্যিকার অর্থে প্রতি বছরই আইগ্লোবাল ইউনিভার্সিটি থেকে এই এক মিলিয়ন ডলার স্কলারশিপ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো।

রাইজিংবিডি : বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কীভাবে এই সুযোগ নিতে পারবে?

আবুবকর হানিপ : আমাদের টিউশন ফি সবচেয়ে কম। যেমন ব্যাচেলর করতে ৫৬ হাজার ডলার লাগে চার বছরে। মাস্টার্স করতে ২২ হাজার ডলার লাগে দেড় থেকে দুই বছরে। এর মধ্যে আবার আমরা প্রথম কোয়ার্টারে ৫০ ভাগ স্কলারশিপ দিচ্ছি বাই ডিফল্ড। দ্বিতীয় কোয়ার্টার থেকে মেধাভিত্তিক স্কলারশিপ আছে যেটা ৩০ ভাগ পাবে।

এছাড়াও রয়েছে আলাদা মিলিয়ন ডলার স্কলারশিপ। যারা এদেশ থেকে যাবে তারা এই সুবিধাগুলো নিতে পারবে। আমরা তাদের সেভাবে গড়ে তুলব। যেন তারা স্কিলড হয়ে সেখানে কাজ করতে পারে। এখন ধরেন বাংলাদেশ থেকে যারা যাবে, তারা যদি দেশে ফিরে আসতে চায় কর্পোরেট অভিজ্ঞতা অনুসারে তারা তাদের অর্জিত টেকনোলজিক‌্যাল জ্ঞান কাজে লাগাতে পারবে। কারণ আমেরিকায় ওপিটি-অপশনাল প্রাকটিক‌্যাল ট্রেকনিক‌্যাল মাধ‌্যমে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। সিপিটি-কারুকুলার প্রাকটিক‌্যাল ট্রেকনিংয়ের মাধ‌্যমেও ওখানে কাজ করার সুযোগ আছে। এইচওয়ানবি’র মাধ‌্যমে ওখানে কাজ করার সুযোগ আছে। কেউ যদি ওখানে কাজের অভিজ্ঞতাগুলো অর্জন করে সেটা বাংলাদেশে এসে বড় বড় কোম্পানিগুলোতে লিড করতে পারবে।

রাইজিংবিডি : আপনার এই স্কিলড ডেভেলপমেন্ট মেথড বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ‌্যালয়ে প্রয়োগের প্রয়োজনীয় দেখেন কি না?

আবুবকর হানিপ : ভবিষ‌্যত পরিকল্পনা হলো আমি এই ভার্সিটিতে থ্রি এম বা মানি মেকিং মেশিন বানাতে চাই না। আমি এটাকে সার্ভিস ওরিয়েন্টেড করতে চাই। সোশ‌্যাল প্রবলেমগুলো সমাধান করতে চাই। এই ভার্সিটি একটা উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আমার এই মেথডটা স্ফ্রিঙ্গার নামে একটি পাবলিশিং কোম্পানিতে ছাপা হয়েছে। এই মেথডটা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করবে। আমাদের বাংলাদেশও এই সুবিধা নিতে পারে। আমাদের দেশে ১৬২ পাবলিক-প্রাইভেট ভার্সিটি আছে।

মেইন সমস‌্যা হচ্ছে এসব ভার্সিটি থেকে প্রতিবছর বিপুল সংখ‌্যক শিক্ষার্থী গ্রাজুয়েট হয়ে বের হয়। সবারই কিন্তু টার্গেট থাকে বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরি নেবে। বিসিএস দিতে গিয়ে দেখে অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার পছন্দ করে ফরেন সার্ভিস, পছন্দ করে পুলিশ ক্যাডার। এরা কিন্তু সরকারের টাকা খরচ করে ডাক্তার হয়েছেন অথচ ডাক্তারি পেশায় থাকছে না। তাহলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার্স যখন অন‌্য পেশায় যাচ্ছে ওনাদের কন্ট্রিবিশন কী হচ্ছে? এটা হচ্ছে চাকরির অপ্রতুলতা এবং স্কিল। অর্থাৎ ভার্সিটি লেভেলে স্কিলড ডেভেলপ হচ্ছে না। যদি হতো তাহলে বাংলাদেশে যে চাকরি থাকতে হবে এরকম কোনো কথা নেই। কারণ বাংলাদেশে বসেও গ্লোবালাইজড মার্কেটে চাকরি করতে পারে। এর জন‌্য ইংরেজি লাগবে, স্কিলড লাগবে; তাহলে এখানে বসেই চাকরি করতে পারবে।

তাহলে আমার এই মেথডটা এসব বিশ্ববিদ‌্যালয়ে ফলো করতে পারে। সরকার এখন দক্ষ জনবল গড়তে স্কিল্ড ডেভালপ করছে। সরকারের প্রচুর বাজেট আছে। যেহেতু সরকার ২৮টি আইটি পার্ক তৈরি করার উদ‌্যোগ নিয়েছে, সেখানে যখন ফরচুন ১০০ কোম্পানি যেমন- ওরাকল, মাইক্রোসফট, বা অ‌্যামাজন যখন আসতে চায়, তখন লোকাল মার্কেট থেকে অভিজ্ঞ লোক থাকতে হবে। অভিজ্ঞ লোক থাকলে তারা যখন আসবে তাহলে আইটি পার্ক চলবে। সরকার তাই ব‌্যাপকভাবে চেষ্টা করছে এক্সপার্ট লোক বানানোর। কিন্তু এই স্কিলডটা যদি বিশ্ববিদ‌্যালয়ে থাকা অবস্থায় করে ফেলতে পারে, তাহলে তারা হতাশও হলো না এবং এদের সময়ও নষ্ট হলো না। সেটাই আমি আমেরিকায় অ‌্যাপ্লাই করছি।

রাইজিংবিডি : দক্ষ জনবল গড়তে বাংলাদেশে আপনার মালিকানাধীন ‘পিপল এন টেক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আছে। এই প্রতিষ্ঠান কীভাবে স্কিলড ডেভেলপমেন্টে কাজ করছে?

আবুবকর হানিপ : বাংলাদেশে পিপল এন টেক ২০১৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে। এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজারের ওপরে আমরা চাকরি দিয়েছি। যাদের মধ‌্যে ২০০ জনের মতো এন্টারপ্রেনর বা উদ্যোক্তা রয়েছে। আমরা যখন চাকরি দেই আপওয়ার্কের মাধ‌্যমে বিভিন্ন জায়গায়, অনেক কাজ পাওয়ার কারণে সে অনেক সময় একা করতে পারে না। তাকে দেখা যায় আমাদের এখান থেকেই ৫-১০ জনকে হায়ার করতে হয়। কোম্পানি খুলে ওই কোম্পানিতে কাজ নিচ্ছে, এদের দিয়ে কাজ করাচ্ছে। এখানে আমাদের প্রায় ৭০ এর ওপরে সাবজেক্ট আছে। একশ’র ওপরে ট্রেইনার আছে। যারা এক্সপার্ট, বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে।

এছাড়া আমরা বাংলাদেশে কর্পোরেট ট্রেনিং দিচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ‌্য হচ্ছে ‘অ‌্যাজ মেনি এক্সপার্ট এজ উই ক্যান’ তৈরি করা। দেশের জন‌্য এই কাজগুলো আমরা করছি।

রাইজিংবিডি : বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহে কী এই মেথড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে?

আবুবকর হানিপ : আমেরিকায় যে সাত হাজার জনকে আমি চাকরি দিয়েছি- গড়ে তাদের বেতন যদি এক লক্ষ ডলার বার্ষিক বেতন হয় এবং এর ২০ ভাগ টাকাও যদি বাংলাদেশে আসে তাহলে ১৪০ মিলিয়ন ডলার বছরে আসছে। প্রায় ১২’শ কোটি টাকা আমাদের দেশে আসছে। এটা আমাদের কন্ট্রিবিউশন। একই সঙ্গে ওরা আমেরিকার মেইন স্ট্রিমে কাজ করছে। শুধু তাই নয়, তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের ভালো জায়গায় পড়াতে পারছে। ওরাই সেরা বিশ্ববিদ‌্যালয়ে যাচ্ছে। আমাদের সেই জেনারেশন সব জায়গায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। তারা বছর বছর তাদের সন্তানদের এদেশে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের যে মূল‌্যবোধ-সংষ্কৃতি এগুলো দেখাতে পারছে।

মূল বিষয় হলো- আমি প্রথম জেনারেশন আমি এদেশে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছি কিন্তু আমার সেকেন্ড জেনারেশন তো রেমিটেন্স নাও পাঠাতে পারে। কারণ তারা বলতে পারে, আমি আমেরিকান। তারা সেখানে থাকছে। তাহলে আমরা লস্ট ট্রেজার করছি, তাদের হারিয়ে ফেলছি। আর এই দেশে বছর বছর ঘুরে গেলে এদেশের প্রতি তাদের মায়া বাড়বে। ওরাও এদেশে ইনভেস্ট করবে, টাকা পাঠাবে। এরা যখন আমেরিকার সিনেটর, কংগ্রেসম‌্যান বা ইলেকট্রেড অফিসিয়াল হবে, তাহলে তারা বাংলাদেশের জন‌্য লবিং করবে, বাংলাদেশেকে প্রেজেন্ট করবে। কেউ যদি অল্প বেতন পায়, সে তো নিজেই চলতে পারবে না। দেশে কী ইনভেস্ট করবে? তাই এটা সুদূর প্রসারী চিন্তা।

রাইজিংবিডি : বিদেশের মাটি যারা উল্লেখযোগ‌্য জায়গায় রয়েছেন। দেশের জন‌্য তাদের অনেক কিছু করার দায়িত্ব রয়েছে। আপনাকে দেখে তারা অনুপ্রাণিত হবে বলে মনে করেন?

আবুবকর হানিপ : আমেরিকায় অনেক মেধাবী রয়েছেন, যারা আমেরিকার মূলধারায় অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে কাজ করছেন। তারা নিজেদের আলিনিয়েটেড না করে তাদের মাতৃভূমির প্রতিও চিন্তা করা উচিত। আপনি যখন দেশে পড়াশোনা করেছেন তখন আপনার প্রতি কিন্তু সরকারের ভর্তুকি আছে, জনগণের কাছে আপনার দায় আছে। তাহলে আপনি যদি দেশের বাইরে গিয়ে কিছু না করেন তাহলে এটা বলা যায় ব্রেন রেইড। আমি বলি যে ব্রেন কন্ট্রিবিউট অ‌্যাগেইন। আপনি পৃথিবীর যে জায়গায় থাকেন দেশকে নিয়ে ভাবেন, দেশের জন‌্য কিছু করেন। সরকারের একার পক্ষে সব সম্ভব নয়, আপনি প্রতিনিধিত্ব করে, বিনিয়োগ করেন, দেশে এফডিআই নিয়ে আসেন। আপনাকে দেখে দেখে আবার অনেকেই এটা করবে।