দেহঘড়ি

শীতে নবজাতকের যত্ন

যারা নতুন মা হয়েছেন, তাদের অনেকেই আসলে বুঝতে পারেন না ঠান্ডার দিনে কীভাবে বাচ্চার যত্ন নিতে হবে। যেসব শিশু প্রথমবারের মতো শীতকাল অতিক্রম করছে তাদের সুস্থতায় কী করণীয় তা ভেবে নতুন মায়েরা উদ্বিগ্ন থাকেন। নিঃসন্দেহে এসময় অল্পবয়সী শিশুদের প্রতি বাড়তি খেয়ালের প্রয়োজন আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নবজাতক বা অল্পবয়সী শিশুদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী নয় এবং তারা সহজেই রোগাক্রান্ত হতে পারে। তাই ঠান্ডার দিনে পিতামাতাকে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। এখানে শিশুর প্রথম শীতে তাকে সুস্থ রাখতে যা করা উচিত তা উল্লেখ করা হলো।

* নবজাতক ও এক বছর অনুর্ধ্ব শিশুকে নরম ও আরামদায়ক শীতের পোশাক পরানো উচিত। এমন কাপড় পরাতে হবে যা শিশুকে উষ্ণ রাখবে। কটনের প্যান্ট পরাতে হবে, কারণ নবজাতকের ত্বক খুবই সংবেদনশীল। তাকে যেমন তেমন কাপড়ে জড়ালে ত্বকে সমস্যা হতে পারে। ঘনঘন ডায়াপার পাল্টাতে হবে, তা না হলে ত্বকে র‍্যাশ উঠতে পারে এবং শরীরের তাপমাত্রা কমে যেতে পারে। যা মারাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

* শিশুকে অসুস্থ ব্যক্তি থেকে দূরে রাখতে হবে। ঠান্ডা, ফ্লু, কোভিড ও অন্যান্য সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে কেউ ঘরে আসলে তাকে যথেষ্ট ভদ্রতা সহকারে নবজাতকের সংস্পর্শ থেকে বিরত রাখুন। শিশু জীবনের প্রথম কিছু মাস রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, কারণ ইমিউন সিস্টেম ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। নবজাতক/অল্পবয়সী শিশুর সংক্রমণের উপসর্গ থাকলে চিকিৎসক দেখাতে দেরি করবেন না।

* শিশুকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে যথাসময়ে টিকা দিতে হবে। কখন কোন টিকা দিতে হবে তা জেনে রাখুন। এক্ষেত্রে অবহেলার সুযোগ নেই।টিকা শিশুকে রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা দিয়ে থাকে।

* নবজাতককে উন্মুক্ত পরিবেশে বা উঁচু স্থানে নিয়ে যাবেন না, কারণ এসব স্থানে ঠান্ডা বেশি থাকে। ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে শিশুরা সহজেই অসুস্থ হতে পারে। তাই নিতান্ত প্রয়োজন ব্যতীত শিশুকে ঠান্ডা পরিবেশে আনবেন না। পিতামাতার ঘুরে বেড়ানোর অভ্যাস থাকলেও অল্পবয়সী শিশুকে নিয়ে যেখানে সেখানে যাওয়া উচিত নয়।

* নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে তা স্বাভাবিকে আসা কঠিন। তাই রাতে শিশুর শরীর বুক থেকে পা পর্যন্ত পাতলা কম্বলে ঢেকে রাখতে হবে। অল্পবয়সী শিশুর মুখ, নাক ও মাথা কম্বলে আবৃত করবেন না। অন্যথায় সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিন্ড্রোম (এসআইডিএস) বা মৃত্যুর ঝুঁকি আছে। রাতে ঘনঘন শিশুকে পর্যবেক্ষণ করুন, যেন শিশুর মুখমণ্ডল আবৃত হয়ে দুর্ঘটনা না ঘটে।

* অল্পবয়সী শিশুর শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে দক্ষ নয়। তাই তাকে যথাসম্ভব ঠান্ডার সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ঠান্ডা বেশি পড়লে এসআইডিএসের ঝুঁকি কমাতে ঘরের রুমের তাপমাত্রাকে সহনীয় করুন। প্রয়োজনে হিটার ব্যবহার করতে পারেন।

* নবজাতকের পিঠ ও মাথায় হাত দিয়ে তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। যদি তার ঘাড়ে ঠান্ডা অনুভব করেন, তাহলে বুক থেকে পা পর্যন্ত বাড়তি গরম কাপড়ে আবৃত করুন অথবা আরেকটি পাতলা কম্বলে ঢেকে দিন।

* নবজাতককে (প্রথম মাসে) পানিতে ভিজিয়ে গোসল করাবেন না। কিন্তু তার শরীরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কুসুম গরম পানিতে কটনের কাপড় ভিজিয়ে মাথা ও শরীরের অন্যান্য অংশ মুছে নিন। সপ্তাহে ২/৩ বারের বেশি নয়। এই পানিতে কয়েক ফোঁটা অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন দিলে অসুস্থতার ঝুঁকি কমবে। এক বছর অনুর্ধ্ব অন্যান্য শিশুকে একদিন পরপর কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে গোসল করাতে পারবেন, তবে ঠান্ডা বেশি পড়লে সপ্তাহে দুই দিন।

* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পর শিশুর ত্বকে তেল, ম্যাসাজ ক্রিম বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের শীতকালীন সমস্যা এড়ানো যাবে। শিশুর নিতম্বে জিংক ও ক্যাস্টর অয়েল অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা ভালো। শিশুর ত্বকে কেবল শিশুদের প্রোডাক্টস ব্যবহার করবেন। এসময় হালকা ম্যাসাজ করলে রক্ত চলাচল বাড়বে ও শিশু প্রাণবন্ত থাকবে।

তথ্যসূত্র: মম স্প্রেসো