সাক্ষাৎকার

‘মনকে শান্ত করতে পাহাড়ে যাই’

মনিরুল ইসলাম ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। পেশায় একজন অ্যাকাউন্টেন্ট হলেও ছুটির দিনগুলোতে ভ্রমণ করে কাটাতেই পছন্দ করেন।  পাহাড়ের প্রতি রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম স্থান সানদাকফু।  দেশের ভেতরে সুযোগ পেলেই তাবু নিয়ে পাহাড়ে চলে যান ভ্রমণপিপাসু মনকে শান্ত করতে। ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখছেন ট্র্যাভেলগ। ভ্রমণের বিষয়ে কোনো তালিকা বা সংখ্যায় বিশ্বাসী নন।  ঘুরে দেখতে চান নিজের দেশের প্রতিটি জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো। এক আড্ডায় শুনিয়েছেন তার পর্যটক হয়ে ওঠার গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ বরকতুল্লাহ।

দামতুয়া জলপ্রপাত। ছবি: মনিরুল ইসলাম

সাইফ: আপনার ভ্রমণের নেশা কীভাবে হলো? মনিরুল ইসলাম: এইচএসসি পরীক্ষার পর আমি ও আমার বন্ধু, পরীক্ষা যেদিন শেষ হয়, ওইদিনই বের হয়ে যাই। ওই সময় আমরা চলে যাই সিলেটে। এটা ১৯৮৯ সালের ঘটনা। সেই সময় থেকেই ভ্রমণের শুরু।  এরপর যখন সিএ পড়তাম, ওই সময় বাংলাদেশের অনেক জায়গা ঘুরেছি।

সাইফ: এরপর? মনিরুল ইসলাম: এরপর পাহাড়ে ঘুরাঘুরি শুরু করি ২০১০-১১ সালে। এ বছর সিতাকুণ্ডে যাই। সেখানে ঝরনা দেখি।

সাইফ: আপনার কী ছাত্রজীবন থেকে ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল? মনিরুল ইসলাম: হ্যাঁ, পরিকল্পনা ছিল। বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে মনে হয়েছে ঘুরাঘুরি করা যায়। তখন থেকই আসলে ভ্রমণের বিষয়গুলো মাথায় আসে।

সাইফ: আপনি যে পাহাড়ে ভ্রমণ করছেন কেমন লাগে অনুভূতি? মনিরুল ইসলাম: পাহাড়ে আমার ট্র্যাকিং করতে ভালো লাগে।  পাহাড়ে হাঁটা, উঁচুতে উঠা, ঝরনা দেখা- সবই অন্যরকম অনুভূতি।

সাইফ: কেউ কাজের জন্য ভ্রমণ করে, কেউ নেশায় ভ্রমণ করে। এই যে আপনি ভ্রমণ করছেন, কেন ভ্রমণ করেন? মনিরুল ইসলাম: নিজের জন্য ভ্রমণ করি।  ভ্রমণে নিজের সঙ্গে কথা বলা যায়, নিজেকে সময় দেওয়া যায়। পাহাড়ে গেলে মনটা শান্ত হয়ে যায়।

সাইফ: কতগুলো জেলা ভ্রমণ করেছেন? মনিরুল ইসলাম: আসলে ওভাবে কাউন্ট করা হয়নি।  আট কিংবা নয়টা জেলা ছাড়া সব জেলায় ঘুরেছি। প্রজেক্ট করে ঘুরা হয়নি। যখন ভালো লাগছে তখনই ভ্রমণের জন্য বের হয়েছি।

সাইফ: আপনি তো ভিন্ন পেশায় (বর্তমানে কর্মরত একটি বেসরকারি হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ বিভাগের শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে) চাকরি করছেন।পাশাপাশি ভ্রমণ করেন। সময়ের সমন্বয় করেন কীভাবে? মনিরুল ইসলাম: ছুটির দিনগুলোতে ঘুরি।  যখন ছুটি থাকে, সাথে আরও কয়েকদিন ছুটি অ্যাড করে ভ্রমণে বের হই।

সাইফ: আপনি কী একা ভ্রমণ করেন না আপনার কোনো দল আছে? মনিরুল ইসলাম: আমরা চার পাঁচজন আছি।  যখন সময় পাই তখনই আমরা ভ্রমণ করি।

সানদাকফু -ফালুট ট্রেকে মনিরুল ইসলাম

সাইফ: বাংলাদেশের ভ্রমণ উপযোগী কেমন? পর্যটনগুলোর কী অবস্থা বিরাজমান? মনিরুল ইসলাম: বাংলাদেশর পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো নিয়ে সবাই কথা বলে। আমি পাহাড়ে বেশি ভ্রমণ করি। বিশেষ করে আমি কমিউনিটিবেস ট্যুরিজম পছন্দ করি।  আমাদের এখানে অবকাঠামোগত অবস্থা আরও উন্নত হতে হবে।  বাইরের দেশে ব্যবস্থাপনা অনেক ভালো। কিন্তু আমাদের এখানে তা নেই।  ডিজিটাইলাইজেশনের সর্বোচ্চ ব্যবহার আমরা করতে পারছি না। দেখুন ঢাকা ছাড়া অন্য কোনো জেলায় ট্র্যাভেল এজেন্সি কী আছে? হয়ত দু-একটা আছে, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।  শুধু তথ্য বাতায়নে কিছু তথ্য আছে।  কিন্তু সবার কাছে তা যাচ্ছে না। এজন্য প্রচুর প্রচারণা দরকার। অবকাঠামো পরিবর্তন দরকার।

সাইফ: বাংলাদেশে ট্যুরিজম ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।  ট্যুরিজমকে সরকার যদি ঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারে, বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলো আধুনিক সিস্টেমে গড়ে তোলা যায় তাহলে অর্থনৈতিকভাবেও শক্তিশালী হবে দেশ। এই বিষয়টা কীভাবে দেখেন? মনিরুল ইসলাম: বাংলাদেশে ট্যুরিজম নিয়ে ব্যাপক কাজ করা যেতে পারে। বিশেষ করে এটাকে যদি সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা যায় তাহলে ট্যুরিজম শুধু মানুষের বিনোদনের জন্য নয়, অর্থনৈতিকভাবেও এগিয়ে যাওয়া যাবে।  আমাদের পর্যটনের অবকাঠামো আরও উন্নত করা দরকার। বিশেষ সিকিউরিটি ইস্যু, ভ্রমণে নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও নজর দেওয়া উচিত।

সোনাদিয়া ক্যাম্পিং

সাইফ: আমি যতটুকু জানি, বাংলাদেশের মানুষ এখন প্রচুর ভ্রমণ করছেন। বিশেষ করে নারীরাও ভ্রমণ করছেন। এই বিষয়টি কীভাবে দেখেন? মনিরুল ইসলাম: এটি ভালো।  আমাদের দেশের লোকজন দেশে, দেশের বাইরেও ঘুরতেছে।

রাইজিংবিডি: সময় দেওয়ার জন‌্য আপনাকে ধন‌্যবাদ। মনিরুল ইসলাম: আপনাকেও ধন‌্যবাদ। রাইজিংবিডির পাঠকদের শুভেচ্ছা।

আরও পড়ুন

প্রশান্তির জন্য ভ্রমণ করি: তানভীর অপু

ভ্রমণপিপাসু নারীদের অনুপ্রেরণা মারজীয়া

হেরিটেজ ট্যুরিজম ডেসটিনেশন হবে বাংলাদেশ