রাইজিংবিডি স্পেশাল

বাণিজ্য মেলার পর্দা উঠছে আজ, থাকবে বিআরটিসির বিশেষ সার্ভিস

ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার (ডিআইটিএফ) ২৬তম আসরের পর্দা উঠছে। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময়ের নানা উদ্যোগ ও চেষ্টার পর এবার স্থায়ী ভেন্যুতে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা। পূর্বাচল নতুন শহরে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী মেলা চলবে।

এবার মেলা দেখতে যেতে হবে শেরে বাংলা নগরের আগের স্থান থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। সেজন‌্য মেলায় আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে প্রথমবারের মতো থাকছে বিআরটিসির বিশেষ বাস সার্ভিস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে মাসব্যাপী বিআরটিসির ৩০টি বাস সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যাতায়াত করবে। এসব বাসে ন্যূনতম ভাড়া ২৫ টাকা। এছাড়া মতিঝিল থেকে চলাচল করা বিআরটিসির বাসগুলোও কুড়িল হয়ে মেলায় যাবে।  

বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখানে ৫০টি বাসের প্রয়োজন হলেও দেয়া হবে। রাস্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কা কেটে গেছে। পূর্বাচলের যাবার জন্য ১০ কিলোমিটার সড়ক ঠিক হয়ে গেছে। মেলা আয়োজনের মূল দায়িত্ব পালনকারী রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আশা করছে, মেলা চলাকালে বিআরটিসির বাসের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

এবার মেলা সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মাথায় রেখে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (১ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় ভার্চুয়ালি আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করবেন।

বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন থেকে শুরু হচ্ছে বাণিজ্য মেলা। তবে করোনার কারণে গতবছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা অনুষ্ঠিত হবে। দর্শনার্থীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন মোকাবেলায় একটু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এবারের বাণিজ্য মেলায় ১১টি দেশের ২২৭টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে মেলায় কমানো হয়েছে স্টলের সংখ্যা। এছাড়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম।

২০২০ সালে ৪৮৩টি ছোট-বড় স্টল ও প্যাভিলিয়ন ছিল। সে সংখ্যা কমিয়ে এবার করা হয়েছে ২২৫টি। এর মধ্যে বিদেশি ৬টি স্টল ও ৪টি মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। ২০২০ সালের মেলায় মোট ২১টি দেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছিল। এবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কম।

এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ইরান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ভারত, পাকিস্তানের স্টল থাকবে। সরাসরি দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও তুরস্ক অংশ নিচ্ছে মেলায়। এছাড়া দেশি এজেন্টের মাধ্যমে অনেক দেশের প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ব্রাজিল থেকে আসতে চেয়েছিল, কিন্তু ওখানে করোনার প্রকোপ বাড়ায় তারা আসতে পারেনি।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান বলেন, করোনার ধাক্কা সামলে এবার মেলা আয়োজন করাটাই ছিল আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। তাই মেলা যাতে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। মেলায় যেন অতিরিক্ত দাম না রাখা হয় সেই বিষয়টিও লক্ষ রাখা হবে।

স্থায়ী কমপ্লেক্সের মোট ফ্লোর স্পেস ৩৩ হাজার বর্গমিটার। এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরে ও সামনের ফাঁকা জায়গা মিলিয়ে স্টল থাকবে। এতে দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। শেরে বাংলা নগরের মতো এখানেও প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, জেনারেল স্টল, ফুডকোড, মিনি স্টল, প্রিমিয়ার স্টল ক্যাটাগরি রয়েছে। মিলনায়তনের ভেতরে নিজস্ব একটা ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ৫০০ লোক বসে খাবার খেতে পারবেন। স্থায়ী ভেন্যুর পাশে পাশে নদীও আছে। অনেকে মেলায় এসে ঘুরতেও পারবেন আশেপাশে।

এবার গেটের থিমে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে মেগা প্রকল্পকে। মেলায় চারটি প্রবেশপথ রাখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেলের মতো গোল করা হয়েছে প্রবেশপথ। ওপরে সেতুবন্ধন হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে পদ্মাসেতুর প্রতীকী কাঠামো। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মেট্রো রেলের প্রতীকী কাঠামোও থাকছে।

অন্যান্য বছরের মতো মাসব্যাপী এ মেলা সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত (সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত)। মেলার প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকা, শিশুদের ২০ টাকা।

এবার মেলায় প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ-সামগ্রী, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, ষ্টেশনারী, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্ত-শিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০২২ উপলক্ষে শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইপিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

টিপু মুনশি বলেন, বাণিজ্য উন্নয়নের অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে পণ্য উন্নয়ন ও পণ্যের বাজার সৃষ্টি। আর পণ্যের বাজার সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কৌশল হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন ও মেলায় অংশগ্রহণ। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় বাণিজ্য মেলার নবনির্মিত এই স্থায়ী ভেন্যুতে এবারের মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে যুক্ত হতে যাচ্ছে এক নতুন অধ্যায়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। এরপর থেকে মেলার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব বাড়ছে। তবে করোনার কারণে শুধু গত বছর মেলা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এবার স্থায়ী ভেন্যুতে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি একটি সফল স্বপ্ন পূরণ বলে মনে করছে ইপিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।