সাতসতেরো

‘তুমি যাবে ভাই– যাবে মোর সাথে..’

‘তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়/গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়/মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি/মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি/মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়/তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়।’ 

নিমন্ত্রণ- কবিতায় এভাবেই নগরসভার মানুষকে গাঁয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন কবি জসীম উদ্‌দীন। যাকে আমরা বলি পল্লীকবি।

আজ এই পল্লীকবির ১২০তম জন্মদিন। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর শহরতলীর কৈজুরী ইউনিয়নের ছায়াঢাকা পাখি ডাকা নিঝুম পাড়া গাঁ তাম্বুলখানা গ্রামে নানা বাড়িতে কবির জন্ম। বাবার নাম আনছারউদ্দীন মোল্লা, মায়ের নাম আমেনা খাতুন। 

জসীম উদ্‌দীন একাধারে কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক ও লেখক।  ঐতিহ্যবাহী বাংলা কবিতার মূল ধারাটিকে নগরসভায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব জসীম উদ্‌দীনের। তার নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাট বাংলা ভাষার গীতিময় কবিতার উৎকৃষ্টতম নিদর্শনগুলোর অন্যতম। 

জসীম উদ্‌দীন বাল্য বয়স থেকেই কাব্য চর্চা শুরু করেন।  ১৪ বছর বয়সে নবম শ্রেণিতে থাকাবস্থায় তৎকালীন কল্লোল পত্রিকায় তার একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাখালী। এরপর তার ৪৫টি বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তার ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ ১৯৪০ সালের মধ্যেই একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়ে বিশ্ববিখ্যাত হয়।  ১৯৬৯ সালে ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ ইউনেস্কোর অনুবাদ প্রকল্পের গ্রন্থ হিসেবে অনূদিত হয়।

কবির শিক্ষাজীবন শুরু ফরিদপুর শহরের হিতৈষী স্কুলে। সেখানে প্রাথমিক শেষ করে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে এসএসসি, ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি এবং একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন।  তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দেন। 

১৯৩৯ সালে তিনি মমতাজ বেগমকে বিয়ে করেন। কবির ৪ ছেলে কামাল আনোয়ার, ড. জামাল আনোয়ার, ফিরোজ আনোয়ার ও খুরশীদ আনোয়ার। ২ মেয়ে হাসনা মওদুদ ও আসমা এলাহী। তারা সকলেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বনামধন্য। 

কবি ১৯৭৬ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি.লিট উপাধি, ১৯৭৬ সালে ২১শে পদকে ভূষিত হন। 

জসীম উদ্‌দীন ১৯৭৬ সালের ১৪ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ি তাকে কবর দেওয়া হয়েছে ফরিদপুরে প্রিয় ‘দাদীর’ কবরের পাশে। যা আমাদের বারবার তার ‘কবর’ কবিতাটির কথাই মনে করিয়ে দেয়। যে কবিতায় তিনি লেখেন- ‘ওইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে/ তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে’ ।