রাইজিংবিডি স্পেশাল

আকবরের মনোবলের কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধিতা

প্রতিবন্ধিতা জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের বেহুলা মধ্যপাড়ার আকবর হোসেন। তার মনোবলের কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা।

প্রতিবন্ধী আকবর নিজের আয়ের টাকা দিয়েই করছেন পড়ালেখা। পরিবারের পাশেও দাঁড়িয়েছেন তিনি। বাড়ি নির্মাণ করতে বাবা আব্দুল লতিবকে দিয়েছেন বড় অংকের টাকা।

আকবর হোসেন রাইজিংবিডির এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তার সংগ্রামের গল্প। তিনি বলেন, ‘অন্য দশজন শিশুদের মতোই বাড়ির পাশের বেহুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু হয় আমার। পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হই মহিপুর এসএএম উচ্চ বিদ্যালয়ে। সবকিছু ভালই ছিল সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ করে দুই পায়ে শক্তি কমতে থাকে। প্রাথমিকভাবে গ্রামের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেওয়া হলেও আগের মতোন হাঁটা-চলার শক্তি ফেরেনি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পরও স্বাভাবিক হয়নি আমার পা দুটো। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জিবিএস ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় পায়ের শক্তি কমেছে। প্রথমদিকে গ্রামের ডাক্তারকে না দেখিয়ে যদি ঢাকায় যাওয়া যেত, তাহলে আজ হাঁটতে পারতাম।‘   

আকবরের এমন অবস্থা দেখে তার মা জুলেখা বেগম দর্জির কাজ শেখানোর জন্য গ্রামের আজিজুল ইসলামের কাছে পাঠান তাকে। ছয় মাসের মাথায় আকবর শিখে ফেলেন কাজ। বাড়িতেই হুইলচেয়ারে বসে দর্জির কাজ করতে থাকেন তিনি। নিজের আয়ে ফের শুরু করেন পড়ালেখা।

মহিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন আকবর। দশম শ্রেণিতে উঠেই তিনি চলে যান চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে। মেসে থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ২০১১ সালে পাস করেন এসএসসি। নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৩ সালে পাস করেন এইচএসসি। একই কলেজেই স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন বাংলা বিভাগে। ২০২০ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। এখন ওই কলেজে স্নাতকোত্তর পড়ছেন আকবর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে থাকার পরও কিভাবে কাজ করতেন? এ প্রশ্নের জবাবে আকবর জানান, ‘শহরে থাকা অবস্থায় প্রতি সপ্তাহে এক দিন বাড়িতে আসতাম। ওই দিন পুরো সপ্তাহের জমে থাকা কাজগুলো করতাম। এতে সপ্তাহে আমার ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় হতো। সব মিলিয়ে মাসে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় হতো। অনার্স পড়ার সময় কলেজ গেটে মোবাইল ফোনের সিম বিক্রি করতাম। সেখানেও আমার ভালো আয় হতো। এসব টাকা দিয়েই আমি মেসের ভাড়া, খাওয়া ও পড়ালেখার খরচ জুগিয়েছি। ফলে, আমাকে বাড়ি থেকে টাকা নিতে হতো না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জমানো টাকা দিয়ে স্টক বিজনেস শুরু করেছিলাম। ধান কিনে রেখেছিলাম। সেই ধান বিক্রি করে যে টাকা লাভ হয়েছিল, সেখানে থেকে ৪-৫ লাখ টাকা আব্বাকে দিয়েছি বাড়ি বানাতে। আমি ১০ টাকা পেলে ওই টাকাকে কিভাবে ১৫ টাকা করব, সেই চিন্তা করি সব সময়। আগামীতে স্টক বিজনেস আরও বড় পরিসরে করার চিন্তা করছি।’

আব্দুল লতিব বলেন, ‘আকবর আমার বড় ছেলে। কষ্ট হলেও পড়ালেখা করেছে। কাজ করে পড়ার খরচ চালিয়েছে। বাড়িতেও টাকা দিয়েছে। সে এখন একটা সরকারি চাকরি খুঁজছে। দোয়া করি, তার স্বপ্ন পূরণ হবে।‘