মতামত

স্বপ্ন সীমানায় বাংলাদেশের ক্রিকেট

টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের খুঁজে ফেরা বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ড দলকে ওদের ঘরের মাঠে ৮ উইকেটে পরাজিত করেছে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রলিয়া, ভারত, পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেট বন্ধুরা হয়তো চমকে যাবে এ কোন বাংলাদেশ। তুখোড় নিউ জিল্যান্ড দলের আঙিনায় ওদের অস্ত্রে ওদের বধ করে টেস্ট জয় করল!

নিউ জিল্যান্ড আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন। টেস্ট ক্রিকেট আঙিনায় বাংলাদেশের অর্জন সীমিত। খোদ নিউ জিল্যান্ডে খেলা এ যাবৎ সব ফরম্যাটে এটি ছিল ৩২ ম্যাচ। বাদ বাকি সব খেলায় বাংলাদেশে হেরেছে। এই তো সেই দিন বাংলাদেশের এই দলটি ঘরের মাঠে পাকিস্তান দলের কাছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। কেউ ভাবেনি, কেউ স্বপ্নেও দেখেনি বাংলাদেশ এভাবে আহত বাঘের মতো গর্জে উঠবে। মহাপরাক্রমশালী নিউ জিল্যান্ড দলকে এভাবে হারিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করবে।

ওরা বলছে ইবাদত, তাসকিন, শরিফুল এভাবে রিভার্স সুইং করবে, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা সাউদি, বোল্ট, জেমিসন, ওয়াগনারের অগ্নিগোলার মুখে বুক চিতিয়ে লড়াই করবে, এটি ওদের পরিকল্পনায় ছিল না। যে কোনো পরিমাপেই নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ৮ উইকেটে মুমিনুল বাহিনীর প্রথম টেস্ট জয় বিশাল অর্জন। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো এই অর্জনে ১১ জন খেলোয়াড় সবারই কোনো না কোনো অবদান আছে। এমনকি দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসাবে ফিল্ডিং করতে আসা তাইজুল ইসলামও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে শেষ ক্যাচটি লুফে নিয়ে অবদান রেখেছেন।

প্রথম ইনিংসে শরিফুল, মিরাজ, তাসকিন, ইবাদত উইকেট অনুযায়ী উপযোগী বোলিং করেছেন। সাদমান চারটি ক্যাচ ধরেছেন। লিটন অসাধারণ উইকেট কিপিং করেছেন। এমনকি মুমিনুল দুটি মূল্যবান উইকেট তুলে নিয়েছেন। সাদমান-জয় প্রথম উইকেট জুটির সাহসী ব্যাটিং বাংলাদেশ শিবিরে আশার আলো জাগায়। শান্ত-জয় জুটি এবং মুমিনুল-লিটন জুটির অসাধারণ ব্যাটিং সাম্প্রতিক সময়ে নিউ জিল্যান্ডে উঁচু মানের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে সেরা বলতে আমার কুণ্ঠা নেই। দ্বিতীয় ইনিংসে ইবাদত, তাসকিনের বোলিং আমাকে ওয়াসিম ওয়াকারকে স্মরণ করিয়েছে।

দলটিতে নানা কারণে সাকিব, তামিম, রিয়াদ নেই। মোস্তাফিজের টেস্ট খেলায় অনীহা। এই দলটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলকে এভাবে কোণঠাসা করে কোন জাদুমন্ত্রে হারিয়ে দিলো? তবে কি মুমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন দলটির রসায়ন পাল্টে গেছে দলে সিনিয়রদের অনুপস্থিতে?

আমি নিবিড়ভাবে খেলার ধারাভাষ্য শোনার সময় স্পষ্ট শুনছি ওরা বলছে, চলো দেশের জন্য কিছু করি। সাবাশ বাংলাদেশ, অসামান্য অর্জনের জন্য। আমরা চাইলেই পারি। আমাদের প্রতিভার কমতি নেই। আর নিউ জিল্যান্ড কিন্তু আমাদের ক্রিকেট বন্ধু। ওরা নানাভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নে হাত বাড়িয়ে রেখেছে।

সিরিজের আরো একটি খেলা বাকি আছে। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালের উইকেট সবুজ ঘাসে ভরা থাকবে। বাংলাদেশকে সাফল্যের জোয়ারে ভেসে গেলে চলবে না। মোমেন্টাম ধরে রেখে নিজেদের দুর্বল দিকগুলোতে নজর দিতে হবে।

জয় চোটাক্রান্ত, দুর্ভাগ্য ছেলেটার। আমি মনে করি বাংলাদেশকে অতিরিক্ত বোলার হিসাবে তাইজুলকে খেলানো উচিত। যদিও সবুজ উইকেটে বাড়তি পেসার নেওয়ার তাগিদ থাকবে। ইবাদত-তাসকিনের বোলিং খেলার কৌশল নিয়ে ব্ল্যাক ক্যাপরা অনেক পরিকল্পনা করবে। হয়তো ম্যাট হেনরি খেলবেন। স্যান্টনার বা এজাজ প্যাটেল দলভুক্ত হলেও বিস্মিত হবো না। মরণ কামড় দিবে ওরা।

লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ক্রিকেট বিশ্লেষক।