মতামত

তিনি ফিরে এলেন বীরের বেশে

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর জীবনে কী ঘটেছিল এ বিষয়ে লিখেছেন পাকিস্তানের সংস্কৃতি আন্দোলনের সংগঠক ও কবি আহমাদ সালিম। ‘ব্লাড বিটেন ট্রাক’ শিরোনামে লেখা গ্রন্থটি ঢাকাতেও প্রকাশ হয়েছিল, ২০ বছর আগে। আহমাদ সালিম ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় এসে একাধিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এবং ১৯৭১ সালের জোনোসাইডের জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং তাঁকে গ্রেফতারের সময়ের বিবরণ রয়েছে এ গ্রন্থে। আহমাদ সালিম লিখেছেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ গোপনে ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে লে. জেনারেল টিক্কা খানকে নির্দেশ দেন- ‘সর্ট দেম আউট’। কয়েক ঘণ্টা পরেই শুরু হয় কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ বাস্তবায়ন। কেন এ নির্বিচার হত্যাকাণ্ড? এর পক্ষে জুলফিকার আলী ভুট্টোর যুক্তি- সামরিক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পরদিন শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করতেন। [পৃষ্ঠা ২০] 

অন্যদিকে, টিক্কা খানের সাফাই- ‘জগন্নাথ হলে একদল দুস্কৃতি টহলদানরত সেনা সদস্যদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ কারণে আমি জগন্নাথ হলে কিছু সৈন্য পাঠিয়েছি। এটা ঠিক যে কিছু হিন্দু এ ঘটনায় নিহত হয়।’ [পৃষ্ঠা ২০-২১]

আহমাদ সালিম লিখেছেন, ২৫ মার্চ মধ্য রাতে পাকিস্তানের জান্তা মারাত্মক এক ভুল করে বসে। তারা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ বন্ধ করার আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুলিশ সদর দফতরে হামলা শুরু করে। এ কারণে শেখ মুজিব টেলিফোনে স্বাধীনতার ঘোষণা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান। বরার্ট পেইন লিখেছেন, রাষ্ট্রদ্রোহ অভিযোগ আনার জন্য এই একটি প্রমাণই যথেষ্ট ছিল এবং সামারি ট্রায়ালে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত।’ [পৃষ্ঠা ২৮] আহমাদ সালিম লিখেছেন, এর আগেও শেখ মুজিব অনেকবার গ্রেফতার হয়েছেন। প্রতিবার গ্রেফতারের সময় তিনি অনেক বই ও দিনপঞ্জি লেখার খাতা নিয়ে যেতেন। কিন্তু ২৫ মার্চ মধ্য রাতে গ্রেফতারের সময় তাকে এ সব নিতে দেওয়া হয়নি। বরং তাঁকে গ্রেফতারের ঘণ্টাখানেক পর আর্মির আরেকটি ট্রাক আসে, যারা দখলদার আর্মির মতো ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। [পৃষ্ঠা ৩০-৩১]

কেন শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হলো, এ প্রশ্নে টিক্কা খান বলেছেন, ‘আমার কো-অরডিনেশন অফিসার ২৫ মার্চ মধ্য রাতে একটি তিন ব্যান্ডের রেডিও নিয়ে ছুটে এসে বলেন, স্যার শোনেন- শেখ সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণা করছেন। আমি নিজেও তা শুনেছি। সুতরাং আমার কোনো বিকল্প ছিল না।’ [পৃষ্ঠা ৩২]

আহমাদ সালিম লিখেছেন, বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশে রাখার সাহস হয়নি, নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে। সেখানে তিনি ছিলেন সব ধরনের যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন। বই নেই, সংবাদপত্র নেই, পরিরারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সেলটি অন্ধকার, সংকীর্ণ। জানালা এতো উঁচুতে, যা দিয়ে কেবল আকাশ দেখা যায়। পাহারায় নিযুক্ত বন্দিরা জানত, এ বন্দী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যার জীবন হবে সংক্ষিপ্ত। কারাগারের প্রধান কর্মকর্তা প্রতি সপ্তাহে ইসলামাবাদে রিপোর্ট পাঠাতেন ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে এভাবে- বন্দী খাবার খেয়েছেন কিংবা বন্দী খাবার গ্রহণ করেননি। তিনি স্বল্প পরিসরের কক্ষে হাঁটছেন কিংবা ঘুমিয়েছেন অথবা ঘুমাননি ইত্যাদি। [পৃষ্ঠা ৩৪]

বঙ্গবন্ধুর বিচার করা হবে এবং তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কঠোর শাস্তি পেতেই হবে- জেনারেল ইয়াহিয়া খান এ ঘোষণা দেন ২৬ মার্চ সন্ধ্যার বেতার ভাষণে। এপ্রিল মাসে সামরিক সদর দফতরের এক সভায় জেনারেল গুল হাসান প্রশ্ন তোলেন শেখ মুজিবের ভাগ্য নিয়ে। ইয়াহিয়া খান সভায় উপস্থিত প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করেন- মুজিবকে বিচার করে, না-কি বিচার ছাড়াই শেষ করে দেওয়া হবে? উত্তরে বেশিরভাগ বলেন- উইথআউট ট্রায়াল। অনেক সিনিয়র সেনা অফিসার ২৫ মার্চ মধ্য রাতে গ্রেফতারের সময়েই কেন এই মন্দ লোকটিকে শেষ করে দেওয়া হয়নি, সে জন্য অনুশোচনা করেন।’ [পৃষ্ঠা ৩৫]

শত্রু রাষ্ট্রে প্রিয় স্বদেশে কী ঘটছে, সেটা জানতেন না বঙ্গবন্ধু। তবে সব কিছু বুঝতে পারার অনন্য ক্ষমতা ছিল তাঁর। রবার্ট পেইন লিখেছেন, তিনি উপলব্ধি করতেন- যদি তাঁর দল আওয়ামী লীগ আত্মসমর্পণ করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। আর যদি তাকে জিম্মি রেখে কোনো স্বার্থ হাসিল করা সম্ভব হয়, ইয়াহিয়া খান তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবেন। সোনার বাংলা থেকে অনেক অনেক দূরে থেকেও তিনি জনগণের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ হারাননি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। রবার্ট পেইন এটাকে বলেছেন- মুজিবের টেলিপ্যাথি। তিনি বলেছেন- আমার মন বলছে আমাদের বিজয় হবেই। আমার জীবন চলে গেলেও জনগণ আমার সূচিত স্বাধীনতা সংগ্রাম যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে। আমার একটাই প্রার্থনা- মৃত্যুর সময় যেন সুমধুর ধ্বনি জয় বাংলা বলতে পারি। [পৃষ্ঠা ৩৮-৩৯]

জুলফিকার আলী ভুট্টো বুঝতে পেরেছিলেন, বাংলাদেশে সামরিক অভিযানকে বিশ্ব ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। শেখ মুজিবকে প্রহসনের বিচারে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হলে বিশ্বে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হবে। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করে তিনি বলেছিলেন, মুজিব ওয়াজ টু বিগ এ ম্যান টু বি কিলড। উত্তরে ইয়াহিয়া বলেন, আপনি কী মনে করেন না যে আই অ্যাম নট বিগ এনাফ টু কিল হিম? আলোচনার সময়ে ইয়াহিয়া খান ‘পূর্ব পাকিস্তানে’ সামরিক অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনায় জুলফিকার আলী ভুট্টোর সম্মতির বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন। 

আহমাদ সালিম লিখেছেন, ভুট্টো জানতেন যে শেখ মুজিব শহীদের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। তাঁর কবরের ওপর বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটবে। ৩ আগস্ট (১৯৭১) ইয়াহিয়া খান টেলিভিশন ভাষণে শেখ মুজিবের বিচার শুরুর ঘোষণা দিয়ে বলেন- নির্বাচনের সময় তিনি স্বায়ত্তশাসনের দাবি করেছিলেন। কিন্তু পরে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে চলেন। এটা রাষ্ট্রদ্রোহ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য সামরিক আদালতে তাঁর বিচার হবে। [পৃষ্ঠা ৪৩]

বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ১২টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়, যার ৬টিতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। এর যে কোনো একটিতে দোষী সাব্যস্ত হলেই তাঁকে এ ধরনের সর্বোচ্চ দণ্ড প্রদান করা হতো। আহমাদ সালিমের গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পারি যে, বিচারের সময় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রদানের জন্য ঢাকা থেকে দু’জন সাংবাদিককে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ দুজন কারা ছিলেন, সেটা বলেননি। এখনও কিন্তু এ নিয়ে অনুসন্ধান হতে পারে।

আদালতে বঙ্গবন্ধু নীরব থাকার কৌশল গ্রহণ করেন। তিনি কেবল বলেন, এ আদালত অবৈধ। আমি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি। সামরিক আদালতে আমার বিচার হতে পারে না। বিচার চলাকালেই ইয়াহিয়া খান ফ্রান্সের লা ফিগারো পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ মুজিব পাকিস্তানের দুশমন। ১ ডিসেম্বর বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। আহমাদ সালিম লিখেছেন, ৪ ডিসেম্বর আদালত  সর্বসম্মত রায় ঘোষণা করে বলেন, ‘মুজিব সকল অভিযোগে অপরাধী। তাঁকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হলো। তবে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক দ্বারা এ দণ্ড অনুমোদন হতে হবে।’

বাঙালিরা তখনও জানতেন না যে তাদের নেতা কোথায় আছেন এবং কেমন আছেন। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে, আপামর জনগণের কাছে তিনি এ লিজেন্ড, লার্জার দ্যান লাইফ। তিনি অনুপস্থিত, এ কারণে আর বেশি করে সঙ্গে আছেন। তাঁর নাম নিয়ে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধে গেছেন, মৃত্যুর সময় বলেছেন জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। মৃতুদণ্ডাদেশ প্রদানের পর বঙ্গবন্ধুকে লায়ালপুর জেল থেকে মিনাওয়ালি জেলে স্থানান্তর করা হয়। তাকে এ জেলে আনা হয়েছে, এমন সংবাদ জানাজানি হওয়ার পর একদল বন্দী তাদের ব্যারাকের ছাদে উঠে গালাগালি শুরু করে এবং তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ও জুতা নিক্ষেপ করে। এতে কয়েকজন পাহারাদার আহত হয়। স্পষ্টতই উন্মত্ত একদল বন্দী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কয়েকজন দাগী অপরাধীকে এ জন্য পাঠানো হয়েছিল। জেলের সুপার এই বলে তাদের নিবৃত্ত করেন, ‘শেখ মুজিবের ফাঁসি কার্যকর করার জন্য এই জেলে আনা হয়েছে।’ [পৃষ্ঠা ৫৩]

আহমাদ সালিম লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন যে বাঙালিরা সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হার মানেনি বলেই তিনি বেঁচে আছেন।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেস কোর্স ময়দানে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তখনও জানেন না যে অনুপস্থিতকালেই তাঁকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এটাও জানতেন না যে ২০ ডিসেম্বর থেকে তিনি জেনারেল ইয়াহিয়া খানের পরিবর্তে জুলফিকার আলী ভুট্টোর বন্দী। সামরিক ফরমান বলেই তিনি নতুন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে তাকে নিজের প্রচণ্ড ক্ষমতাপ্রাপ্তির কথা জানিয়ে প্রস্তাব দিলেন- পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো এক ধরনের বন্ধন রাখার ব্যবস্থা করুন। রবার্ট পেইন জানিয়েছেন- জুলফিকার আরী ভুট্টোর বিশ্বাস ছিল যে ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্য মুজিব লিখিত অঙ্গীকারে রাজী হবেন। কিন্তু বিশ্ব থেকে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থেকেও বঙ্গবন্ধু ঘটনবলী উপলব্ধি ও বিশ্লেষণ করতে পারছিলেন। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, আমি সর্বাগ্রে বাংলাদেশে যেতে চাই এবং যে কোনো বিষয়ে জনগণের মতামত নিতে চাই। ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন, একটি চার্টার্ড বিমান ইসলামাবাদ বিমান বন্দরে অপেক্ষা করছে। ঢাকার পথে ৮ জানুয়ারি লন্ডন পৌঁছে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন জানায়, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি প্রথমেই বলেন, ‘তোমরা বেঁচে আছ? মা কেমন আছে?’ তিনি জানতেন না যে তাঁর দুই পুত্র কামাল ও জামাল মুক্তি বাহিনীর বীর সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করার জন্য মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা তিনি ঘোষণা করেছিলেন, সেই দেশকে শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করায় তাঁর পুত্ররাও লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে লড়েছে, পিতার জন্য এর চেয়ে গৌরবের আর কী-ই বা হতে পারে।

লন্ডন থেকে ঢাকা ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু দিল্লিতে কিছু সময় অপেক্ষা করেন। তাকে বিপুল সংবর্ধনা প্রদান করার সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং মন্ত্রিসভার সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে কিছু বলার জন্য ইন্দিরা গান্ধী অনুরোধ করলে তিনি ইংরেজিতে শুরু করেন। কিন্তু সমবেত জনতা বাঙালির প্রিয় নেতার কাছে বাংলায় বক্তৃতা শুনতে চাইলে তিনি তাতে সাড়া দেন। দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বল্প সময়ের আলোচনাকালে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য ভারতের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের বিষয়টি উত্থাপন করেন এবং এ বিষয়ে পূর্ণ নিশ্চয়তা পেয়ে যান। ১০ জানুয়ারি তিনি লাখ লাখ মানুষের সংবর্ধনায় সিক্ত হয়ে স্বাধীন দেশের রাজধানীতে পা রাখেন। যে রেস কোর্স ময়দানে ৭ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, যে ময়দানে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছিল, সেই ময়দানে তিনি বলেন, আমি ফিরে আসার আগে ভুট্টো সাহেব পাকিস্তানের সঙ্গে সামান্য হলেও বন্ধন রাখা যায় কিনা, সে বিষয়ে অনুরোধ করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, আমার জনগণের সঙ্গে কথা বলব। আজ বলছি, ভুট্টো সাহেব, বাংলাদেশ স্বাধীন। আপনাদের সাথে আর না। একইসঙ্গে তিনি বলেন, দিল্লিতে শ্রীমতী গান্ধীর সাথে আলাপ হয়েছে- যখনই বলব, ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাবে।

বঙ্গবন্ধু ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে আসেন ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৫২ তম জন্মবার্ষিকীর দিনে, তার আগেই বাংলাদেশ থেকে সকল ভারতীয় সৈন্য চলে গেছে স্বদেশে। ভারত প্রকৃত মিত্রবাহিনীর মতোই কাজ করেছে। প্রয়োজনের চেয়ে একটি বেশি দিনও তারা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থান করেনি।

লেখক: প্রাবন্ধিক