পজিটিভ বাংলাদেশ

তালতলীর গোলের গুড় যাচ্ছে ভারতে

চলছে ভরা শীত মৌসুম। প্রতিবছর এই মৌসুমের শুরু থেকে উপকূলীয় জেলা বরগুনার তালতলীর গাছিরা গোলের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। 

এবছর গাছিদের মাঝে যুক্ত হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তালতলীর গোলের রস থেকে তৈরি গুড় যাচ্ছে ভারতে। হতদরিদ্র গোল গাছিদের জন্য তৈরি হয়েছে ৫ মাসের কর্মসংস্থান। উপজেলার অন্তত ৩ হাজার এই পেশার মানুষ ভোর রাত থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত রস সংগ্রহ করেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, তালতলী উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে গোল গাছের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। সব চেয়ে বেশি গুড় আসে বেহালা ও গেন্ডামারা গ্রাম থেকে। এক মৌসুমে প্রায় ১২ হাজার টন গুড় উৎপাদিত হয়। 

বেহালা গ্রামের গাছি সুকদেব বিশ্বাস রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রতিদিন ৩০০ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। গোলের এ রস প্রতি কলস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ও গুড় প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। এক কলস রস দিয়ে ৩ কেজি গুড় তৈরি হয়। 

আরেকজন গাছি সুজন সমাদ্দার বলেন, ভোর ৪টায় রস সংগ্রহ করা শুরু করি। প্রথমে গোলের রসের চাহিদা কম থাকলেও এখন চাহিদা বেড়েছে, দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। 

তিনি আরও জানান, প্রথমে ভারতের কলকাতায় থাকা তাদের কিছু স্বজনদের উপহার হিসেবে পাঠান গোলের গুড়। এরপর সেখানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই গুড়। এরপর সেই স্বজনরা তাদের কাছে গুড় কেনার কথা জানালে তারা বিক্রি শুরু করেন। প্রতি কেজি ২৫০ টাকা বিক্রি করলেও এখন ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন।

গেন্ডামারা এলাকার গাছি মো. রহমাতুল্লাহ বলেন, ডিসেম্বরে গাছ কাটা শুরু করলেও রস আসা শুরু করে জানুয়ারি থেকে। বাগানে আমি এবং আমার ছেলে প্রতিদিন ৭০০ গাছ থেকে রস সংগ্রহ করি। পরে বাড়িতে আমার স্ত্রী ও ছেলের বউয়ের সহায়তায় প্রতিদিনই রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করি। শীতের এ কয়েক মাসে গোল রস ও গুড় বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকার মতো আয় হয়। ভারতে ব্যক্তি উদ্যোগে গুড় না পাঠিয়ে যদি সরকার বাণিজ্যিকভাবে গুড় ব্যবসা করার সুযোগ করে দিতো, তাহলে বেশি লাভ করা যেতো। সরকারও রাজস্ব পেতো।

গাছি আবুল কালাম বলেন, আমরা অনভিজ্ঞ চাষি, আমাদের কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দিলে আমরা আরও পরিচ্ছন্নভাবে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করতে পারি। এক সময়ে এই এলাকার অনেক মানুষ হতদরিদ্র ছিল। আজ আমরা গুড় বিক্রি করে অভাব কাটিয়ে সচ্ছল হয়েছি। এতে কেউ সহায়তা করেনি। কৃষি অফিস থেকে আমাদের প্রশিক্ষণের দাবি জানাই।

তালতলী উপজেলা কৃষি অফিসার রেজাউল করিম জানান, গোল গাছের সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে, এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যেই উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথাও হয়েছে। গাছিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সুস্বাধু এই গুড় প্যাকেটজাত করে দেশের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের বাইরেও বাণিজ্যিকভাবে পাঠানোর বিষয়ে সুপারিশ করেছেন তিনি।