অন্য দুনিয়া

অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচানো ইঁদুরটি আর নেই

ল্যান্ডমাইন বা স্থলবোমা শনাক্ত করে অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচিয়ে দেওয়া আলোচিত ইঁদুর ‘মাগাওয়া’। কম্বোডিয়ান এই ইঁদুরটি কিছুদিন আগে মারা গেছে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে। ইঁদুরটির বয়স হয়েছিল আট বছর।

বিবিসি জানায়, কম্বোডিয়ায় দীর্ঘ ৫ বছর ধরে মাইন শনাক্তের কাজে নিযুক্ত ছিল ‘মাগাওয়া’ নামের এই ইঁদুরটি। কর্মজীবনে ১০০টির বেশি স্থলমাইন ও অন্য বিস্ফোরক খুঁজে বের করে অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচানোয় বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছিল প্রাণিটি। 

কম্বোডিয়ায় আনুমানিক ৬০ লাখ মাইন পুঁতে রাখা আছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। দেশটিতে মাইন সরানোর কাজে যুক্ত কম্বোডিয়ান মাইন অ্যাকশন সেন্টারের (সিএমএসি) অধীনে কাজ করত মাগাওয়া।

প্রাণঘাতী মাইন খুঁজে বের করতে আফ্রিকান জায়ান্ট পাউচড জাতের ইঁদুরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে বেলজিয়ামের দাতব্য প্রতিষ্ঠান অ্যাপোপো। এ ধরনের ইঁদুরকে বলা হয় ‘হিরো র‌্যাটস’। প্রশিক্ষণের পর মাইন খুঁজে বের করতে অ্যাপোপোর সব ইঁদুরের মধ্যে মাগাওয়াকে সবচেয়ে সফল বলে মনে করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের মতে, মাগাওয়াকে ছেড়ে দিলে সে তার আশেপাশের এক লাখ ৪১ হাজার স্কায়ার মিটারের মধ্যে কোনো মাইন থাকলে সেটি খুঁজে বের করতে পারতো। যা প্রায় ২০টি ফুটবল মাঠের সমান। টেনিস খেলার একটি মাঠের সমান কোনো জায়গায় মাইন আছে কি না, তা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে খুঁজে বের করতে কোনো মানুষের এক থেকে চার দিন লাগে। অথচ এই কাজটি মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে করতে পারত মাগাওয়া। 

মানুষের প্রাণ বাঁচানোর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২০ সালে মাগাওয়া পিডিএসএ স্বর্ণপদক অর্জন করে। প্রাণীদের সাহসী কর্মকাণ্ডের জন্য এ স্বর্ণপদক দেওয়া থাকে। অ্যাপোপোর ৭৭ বছরের ইতিহাসে মাগাওয়াই প্রথম প্রাণী, যে পিডিএসএ পদক অর্জন করে।

গত বছর জুনে দায়িত্ব থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছিল মাগাওয়াকে। অ্যাপোপো এক বিবৃতিতে জানায়, গত সপ্তাহেও মাগাওয়ার শরীর ভালো ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সে নড়াচড়া কমিয়ে দেয়, বেশির ভাগ সময় ঘুমাত। শেষ কয়েক দিন খাবারের প্রতিও তার আগ্রহ ছিল না। সে শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। মাইন শনাক্তের মতো যে অসাধারণ কাজ সে করে গেছে, তার জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ।