পজিটিভ বাংলাদেশ

মুখরোচক ৮ ইঞ্চি গুড়ের মুরালি! 

৮ ইঞ্চি মুরালি! শুনলেই একবার হলেও দেখার আগ্রহ জাগবে। তারপর ইচ্ছে হবে স্বাদ নেওয়ার। সাধারণত চিনি ও গুড় দিয়ে বানানো ২ থেকে আড়াই ইঞ্চির মুরালি হরহামেশাই পাওয়া যায়। কিন্তু ৮ ইঞ্চি সুস্বাদু গুড়ের তৈরি মুরালি বিরল। দেখলেই জিভে জল আসে। ভোজন রসিকরা দেখলে লোভ সামলাতে পারবেন না নিশ্চিত। এমন দৃশ‌্য দেখা যায় কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার ইকুরদিয়া বাজারে। 

ইকুরদিয়া বাজারে আলী হোসেনের হোটেল। সেখানে মজাদার ও মুখরোচক খাবার খেতে ভিড় থাকে হরহামেশাই। খাবার তৈরি আর বিক্রিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় আলী হোসেনকে। এই হোটেলের মাধ‌্যমে তিনি নিজে যেমন স্বাবলম্বী, তেমনি তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সংসার চলে আরও ৪ কর্মীর।সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের ভিড় থাকে তার হোটেলে।

গ্রামের হোটেল, তাই ভাতসহ সিঙ্গারা, ডালের বড়া, চা সবই বিক্রি হয়। তবে বিশেষ করে যে খাবারটি খেতে লোকজন বেশি আসেন, সেটি হলো সুস্বাদু মুরালি। এই একটি খাবার তার ব‌্যবসার প্রচার ও প্রসার দুটিই বাড়িয়ে দিয়েছে। মুরালির খবর ছড়িয়ে পড়েছে আশেপাশের গ্রাম-উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলায়ও। তাইতো যাত্রীরা নৌকা থেকে নেমেই প্রথমে তার এই গরম গরম মুরালির খোঁজ করেন।

জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষা ইকুরদিয়া গ্রাম। নদীর ওপারেই হবিগঞ্জ জেলা। প্রতিদিনই এপার-ওপারের মানুষের যাতায়াত। কেউ বসে খেয়ে যান, কেউ বা আবার পরিবারের সদস‌্যদের জন‌্যও নিয়ে যান। এখানকার মানুষজন কোথাও বেড়াতে গেলেও মিষ্টির জায়গায় মুরালি নিয়ে যান।

আলী হোসেনের হোটেলে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় গুড়ের এই মুরালি। প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ১০টি করে মুরালী ওঠে প‌্যাকেটে। যদি কেউ দূরে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে টাটকা রাখতে সুন্দর করে কাগজে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কেজি বিক্রি হয়। তবে গ্রামে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবে এর কদর বেড়ে যায় দিগুণ থেকে তিনগুণ। 

হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার কামাল মিয়া সপ্তাহে একদিন আসেন অষ্টগ্রাম। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ব‌্যবসায়িক কাজে প্রতিসপ্তাহে এখানে আসি। ঘাটে নৌকা ভেড়ানোর সাথে সাথে আলী ভাইয়ের দোকানে আসি। তার এই মুরালি দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু ও ভেজালমুক্ত। তাইতো লোভ সামলাতে পারি না, প্রতিবারই খেয়ে যাই আবার বাড়িতেও নিয়ে যাই। এমন বড় মুরালি আমি আর কোথাও দেখিনি।

হোটেলের কর্মী ফরিদ উদ্দিন জানান, প্রায় ৫ বছর ধরে তিনি সেখানে কাজ করছেন। প্রতিদিন সকালে, দুপুরে ও সন্ধ‌্যায় মুরালি বানাতে হয়। এপর্যন্ত কোনোদিন একটি মুরালি বাড়তি হয়নি। তাদের কিছু নিয়মিত ক্রেতা আছেন, যারা প্রতিদিনই কিনে নিয়ে যান। আর এখানে কাজ করে তিনিও বেশ ভালো আছেন। বেচাকেনা ভালো, তাই মালিকও তাকে ভালোই রাখছেন।

আলী হোসেন বলেন, আসলে গ্রামের মানুষ যেমন ঝাল খেতে পছন্দ করেন, তেমনি মিষ্টি। আমি চেয়েছিলাম একটু ভিন্ন কিছু করার। তাই মুরালির আকৃতি ও স্বাদের প্রতি নজর রেখে ৮ ইঞ্চির মুরালি বানানো শুরু করি। যেদিন থেকে এটি বানানো শুরু করেছি, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমাকে পরের দিনের জন‌্য কোনো মুরালি রাখতে হয়নি। মানুষ অনেক পছন্দ করে। 

তিনি আরও বলেন, আমার এই মুরালিতে কোনো ভেজাল নাই। শতভাগ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে এটি তৈরি করা হয়। তাছাড়া খাটি গুড় ব‌্যবহার করা হয়। তাইতো যারা বেড়াতে আসেন, তারা খেয়ে সাথে করেও নিয়ে যায়।

ঘন ও খাঁটি গুড়ের পরিমাণ বেশি থাকায় স্বাদেও অনেক ভিন্নতা থাকে। তাইতো অষ্টগ্রামের এই মুরালি এখন জেলার অনেকের মুখে মুখে। এমনকি অনেকে বানানো শেখার জন‌্যও তার কাছে আসেন।