শিক্ষা

৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগ: ভেরিফিকেশন-এমপিওভুক্তি নিয়ে যা বললেন সচিব

পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভেরিফিকেশনের পাশাপাশি এসব শিক্ষককে নিয়োগের জন্য সুপারিশ দেওয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি কার্যকর করতে ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তারই ভিত্তিতে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বৈঠক হয়েছে।

পড়ুন: যেসব শর্তে নিয়োগ পাবেন ৩৮ হাজার শিক্ষক

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, যেহেতু মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেয়েছি খুব শিগগিরই আমরা তাদের চূড়ান্ত সুপারিশের কার্যক্রম শুরু করব। একইসঙ্গে সবাইকে চূড়ান্ত সুপারিশ পত্র দেওয়া হবে।

নিয়োগের জন্য প্রাথমিকভাবে সুপারিশকৃত শিক্ষকরা বলছেন এসবি অফিস থেকে আমাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের কি হবে। এমনটা জানতে চাইলে সচিব জানান, যাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম শেষ হয়েছে তারা ক্লিয়ার। তাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। আর যাদের এখনও ভেরিফিকেশন শেষ হয়নি তাদেরটা চলবে। এক্ষেত্রে আপত্তিকর কোনো রিপোর্ট না আসলে তাদের এটি নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।

প্রার্থীদের অনেকেই বলছেন, এসবি রিপোর্টের পর এনএসআই ভেরিফিকেশন হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছেন সবার এনএসআই ভেরিফিকেশন হবে না। যাদের সমস্যা শুধু তাদের হবে। এমনটা জানতে চাইলে সচিব বলেন, সবারই দুই সংস্থার ভেরিফিকেশন হবে। ভালো-মন্দ ভাগ করার সুযোগ নেই। কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় সুরক্ষা বিভাগ থেকে দুই সংস্থাকেই কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। এসবি প্রথমেই কাজ শুরু করেছে। এনএসআই পরে শুরু করেছে। কিন্তু সবারই দুই সংস্থা ভেরিফিকেশন করবে। এর ভিত্তিতে চাকরি স্থায়ীকরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

পড়ুন: ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই ৩৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগ

মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে নিয়োগ দিয়ে দিতে। এক্ষেত্রে যদি আপনার চূড়ান্ত সুপারিশ করে ফেলেন তাহলে এমপিওভুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহতু এটির মাউশির বিষয় এখনই এ বিষয়ে এখনই ক্লিয়ার কিছু বলতে পারছি না। তবে জয়েন্ট করার পর এমপিওভুক্তির আবেদন করতে করতে দুই এক মাস সময় চলে যায়। আমরা আশা করছি, তার আগেই সব ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট পেয়ে যাবো। এতে নিশ্চিত শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন।

ঠিক কবে নাগাদ আপনারা যোগদানপত্র দিতে পারবেন বলে আশা করছেন। এমনটা জানতে চাইলে সচিব বলেন, আমরা সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ বলতে পারছি না। তবে যেহেতু মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে আমরা কালক্ষেপণ করবো না। খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করা হবে।

জানা গেছে, মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো- নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্ত কোনো শিক্ষকের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি কর্তৃক ভেরিফিকেশনে কোনো আপত্তি উত্থাপিত হলে অবিলম্বে ওই সুপারিশপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

প্রার্থীর পুলিশ ভেরিফিকেশনে বিরূপ মন্তব্য পাওয়া গেলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে।

বিরূপ মন্তব্যসম্পন্ন শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রার্থীকে জানাতে হবে।

২০২১ সালের ৩০ মার্চ শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে ১৫ জুলাই প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ফল ঘোষণা করা হয়। ফল ঘোষণার প্রায় ছয় মাসেও যোগদান সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান। এসব প্রার্থী বারবার তাদের দ্রুত যোগদান করানোর দাবি জানাচ্ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সম্মতির বিষয়টি জানার পর প্রার্থীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত সুপারিশপত্র জারি করে তাদের যোগদানের ব্যবস্থা করার জন্য এনটিআরসিএর প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

সার্বিক বিষয়ে ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ প্রত্যাশী ফোরামের সভাপতি শান্ত আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, বিদ্যমান নিয়মে যেহেতু প্রার্থীদের আবেদন করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে অর্থাৎ তারা আর্থিকভাবে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  প্রার্থীদের মানবিক দিক বিবেচনায় যোগদানের পর যাতে এমপিও পেতে বিলম্ব না হয়। কোন ধরনের ঝামেলা যাতে না হয়, সেদিক বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ রইলো।

একইসঙ্গে প্রার্থীদের যেহেতু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকতে হবে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের কথা বিবেচনা করে হলেও এমপিও এর আবেদন ও প্রাপ্তি সহজ করার জোর দাবি জানান তিনি।