দেহঘড়ি

ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে গেছে বুঝবেন যেভাবে

অনেক কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) দুর্বল হয়ে যেতে পারে। জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে কিছু কারণকে আমরা চাইলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, যেমন- খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ও ঘুমের পরিমাণ।

অন্যদিকে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়ার এমনও কিছু কারণ আছে, যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, যেমন- কেমো ড্রাগস ও ক্যানসারের অন্যান্য চিকিৎসা, মনোনিউক্লেওসিস, মিজলস, এইচআইভি/এইডস এবং অটোইমিউন ডিসঅর্ডার।

যুক্তরাষ্ট্রের শার্প হেলথ কেয়ারের ফ্যামিলি মেডিসিন ফিজিশিয়ান আবিসোলা ওলুলেড বলেন, ‘ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে কোনো জাদুকরী ট্যাবলেট নেই। বরং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে মনোযোগী হতে হবে। অ্যালকোহল ছাড়তে হবে, পর্যাপ্ত শরীরচর্চা করতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে ও ধূমপানকে না বলতে হবে।’

কিছু লক্ষণ দেখে দুর্বল ইমিউন সিস্টেম শনাক্ত করা যায়। এখানে দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লক্ষণ ও পুনরায় শক্তিশালী করার উপায় সম্পর্কে বলা হলো।

দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের লক্ষণ

ডা. ওলুলেড বলেন, ‘ইমিউনিটি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) কমেছে কিনা কিছু লক্ষণের ভিত্তিতে ধারণা করা যেতে পারে।আপনার ঘনঘন সংক্রমণ হলে, সংক্রমণ থেকে সুস্থ হতে দীর্ঘসময় লাগলে অথবা ক্ষত শুকাতে দেরি হলে অনুমান করতে পারেন যে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে গেছে।’ কারো ইমিউন সিস্টেম শক্তিমত্তা হারালে সাধারণত তিনটি লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে- ঘনঘন ঠান্ডা লাগে, ঘনঘন অন্যান্য সংক্রমণ হয় এবং ক্লান্তি/দুর্বলতায় ভুগেন।

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে দুই-তিন বার ঠান্ডা (কমন কোল্ড) লাগা স্বাভাবিক,  কিন্তু এর হার আরো বাড়লে তথা ঘনঘন ঠান্ডা লাগলে ধরে নিতে পারেন যে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে অন্যান্য সংক্রমণেও ঘনঘন ভুগতে পারেন, যেমন- ইনফ্লুয়েঞ্জা, কোভিড-১৯, নিউমোনিয়া, ব্রনকাইটিস ও মেনিনজাইটিস। দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো- ক্লান্তি/দুর্বলতা। প্রতিনিয়ত ক্লান্তি লাগলে অথবা সজাগ থাকতে সমস্যা হলে তা দুর্বল ইমিউন সিস্টেমকে নির্দেশ করতে পারে।

কারো ইমিউন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হলে উপরোক্ত তিনটি লক্ষণ ছাড়াও অন্যান্য সমস্যায় ভুগতে পারেন, যেমন- পরিপাকতান্ত্রিক সমস্যা হতে পারে। ডায়রিয়া, গ্যাস, পেটফাঁপা, পেট কামড়ানো এবং এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যও এই ইঙ্গিত দিতে পারে যে ইমিউন সিস্টেম ভালোমতো কাজ করছে না।

রক্তপরীক্ষায়ও ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা শনাক্ত করা যায়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অন্তর্গত নিউট্রিশন সায়েন্স এডুকেশনের ডক্টরাল রিসার্চার আলেক্স রুয়ানি বলেন, ‘আপনি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার ইমিউন সিস্টেমের অবস্থা জানতে পারবেন। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিবডি (ইমিউনোগ্লোবিউলিন), প্লাটিলেট ও রোগপ্রতিরোধ কোষ/শ্বেত রক্তকণিকা আছে কিনা জানতে রক্তপরীক্ষা করতে পারেন।’

ইমিউন সিস্টেম বা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উপায়

কীভাবে ইমিউন সিস্টেমের শক্তিমত্তা বাড়ানো যায় তা নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, খাবার ও শরীরচর্চায় গুরুত্বারোপ করে এবং মানসিক চাপ কমিয়ে ইমিউন সিস্টেমের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলা যায়।সকলের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য নয়। কারণ ভিত্তিতে ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা স্থায়ীও হতে পারে। এখানে ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো।

* ব্যালেন্সড ডায়েট খান: আপনার ডায়েটে বেশি করে ফল, শাকসবজি, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, পেঁয়াজ-রসুনের মতো প্রিবায়োটিক এবং দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক সংযোজন করলে ইমিউন সিস্টেমের শক্তিমত্তা বাড়বে। প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে আপনার ডায়েটে এসব খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন- সাইট্রাস ফল, শাক, লাল ক্যাপসিকাম, দই ও আদা। ডা. রুয়ানি বলেন, ‘ইমিউন ফাংশনকে সাহায্য করতে ফাইবার, প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক ছাড়াও পর্যাপ্ত প্রোটিন, ওমেগা ৩ ফ্যাট, ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, আয়রন, ক্যালসিয়াম, সেলেনিয়াম ও জিংকের প্রয়োজন আছে।’

* পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান: ঘুমের সময় আমাদের শরীর নিরাময় শক্তির প্রকাশ ঘটায়, যাকে প্রোটেক্টিভ সাইটোকিনস বলে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে প্রোটেক্টিভ সাইটোকিনসের সংখ্যা কমে যায়, যার ফলে শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে তেমন লড়তে পারে না।

* মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন: অস্বাভাবিক মাত্রার মানসিক চাপে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়তে পারে। মানসিক চাপ কমানোর কিছু কার্যকরী উপায় হলো- শরীরচর্চা, ধ্যান, যোগব্যায়াম, হাসিখুশিতে থাকা ও ডায়েরিতে প্রাত্যহিক জীবনের চুম্বকাংশ লিখে রাখা।

* স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন: ইমিউন সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির চর্চা করা। নিয়মিত হাত ধুতে হবে- খাবার প্রস্তুতের পূর্বে, খাবার খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পর ইত্যাদি। কাশি-হাঁচির সময় মুখ ঢেকে ফেলতে হবে। ক্ষত বা কাটাছেঁড়াকে পরিষ্কার রাখতে হবে ও ব্যান্ডেজ বাঁধতে হবে।

* নিয়মিত শরীরচর্চা করুন: শরীরচর্চার কাজ শুধু হাড়কে মজবুত করাই নয়, এটি ইমিউন সিস্টেমকেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক সক্রিয়তা ফুসফুস ও শ্বাসনালির ব্যাক্টেরিয়া বের হয়ে আসতে সাহায্য করে। এর ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। গবেষকরা জানান, যারা আলস্যে দিনযাপন করেন তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার ও উপসর্গের তীব্রতা বেশি।