পজিটিভ বাংলাদেশ

এলবিয়ন ফার্মা’র সাফল‌্যে একজন সৈকত

১৯৯১ সালে একটি ভাড়া করা ফ্যাক্টরিতে যাত্রা শুরু করেছিল চট্টগ্রামের ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠান ‘এলবিয়ন ফার্মাসিউটিক্যাল’। শুরুতে মাত্র ৭/৮ ধরনের ওষুধ তৈরি হতো। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আলহাজ্ব নিজাম উদ্দিন। সেই এলবিয়ন ফার্মা এখন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ৭ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে কোম্পানির ৩৯১ ধরনের ওষুধ উৎপাদনের অনুমোদন রয়েছে। উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে ২২৫ ধরনের ওষুধ। 

এলবিয়ন ফার্মার ওষুধ বাংলাদেশ ছাড়িয়ে এখন যাচ্ছে বিশ্ববাজারে। শুরুতে স্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই স্বপ্ন যাত্রার সূচনা করেছিলেন আলহাজ্ব নিজাম উদ্দিন, কিন্তু সেই যাত্রাকে দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন তার মেধাবী ছেলে রাইসুল উদ্দিন সৈকত। তিনি এর বর্তমান চেয়ারম্যান। 

যেভাবে শুরু

রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে রাইসুল উদ্দিন সৈকত জানান, ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামে এলবিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে নগরীর মুরাদপুর বন গবেষণা কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় ভাড়া ভবনে এবং পরবর্তী সময়ে নগরীর চাঁন্দগাঁও আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। উৎপাদিত ওষুধের মান, সফল পরিচালনা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে প্রায় ৭ একর নিজস্ব জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ণাঙ্গ ওষুধ কারখানা। ২০১০ সালে বাবার উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন রাইসুল উদ্দিন সৈকত। এরপর থেকেই এলবিয়নের ধনুক বেগে এগিয়ে যাওয়ার গল্প। 

বর্তমানে ২২৫ ধরনের ওষুধ উৎপাদন করছে। এর মধ্যে ৯০ ধরনের এনিমেল মেডিসিন রয়েছে। ওষুধ শিল্পের পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও ১০টি সিস্টার কনসার্ন। এগুলো হলো এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, এলবিয়ন অ্যানিমেল হেলথ লিমিটেড, এলবিয়ন কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড, এলবিয়ন স্পেশালাইজড ফার্মা লিমিটেড, এলবিয়ন ট্রেডিং করপোরেশন, ক্লিনজি ফর্মুলেশন লিমিটেড, ফেভারিটা লিমিটেড, ফেভারিটা প্লাস্টিকা লিমিটেড, এলবিয়ন ডিস্ট্রিবিউশন, ব্লু  একুয়া ড্রিংকিং ওয়াটার, সেগাফ্রেডো জেনেটি এসপ্রেসোর কার্যক্রম চলছে।

ওষুধ রপ্তানি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এলবিয়ন ফার্মা

সফল পরিচালনা, দেশের বাজারে হিউম্যান এবং এনিমেল মেডিসিনের সর্বোচ্চ কার্যকারিতা ও মান নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের ওষুধ প্রশাসন দপ্তরের শতভাগ শর্ত ও নীতিমালা অনুসরণ করে ওষুধ উৎপাদন করায় এলবিয়ন ফার্মার ওষুধের খ্যাতি বিস্তৃত হয় দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশকে সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত। বর্তমানে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, ভুটান, কম্বোডিয়ায় ওষুধ রফতানির অনুমোদন পেয়েছে কোম্পানিটি। এর মধ্যে আগামী কিছু দিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে যাবে এর উৎপাদিত ওষুধের বড় চালান। আফগানিস্তানের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওষুধের মূল্যও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বুঝে পেয়েছে এলবিয়ন। 

১৫০ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ, ১২ একর ভূমিতে স্পেশালাইজড ফার্মা

রাইসুল উদ্দিন সৈকত জানান, আফগান, ভুটান, কম্বোডিয়া ছাড়াও আগামীতে শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারেও ওষুধ রপ্তানি করবে এলবিয়ন। এছাড়া ভারতসহ অন্যান বড় ওষুধ উৎপাদনকারী দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারে প্রবেশের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এলবিয়ন। এই লক্ষ্যে ওষুধ শিল্পে নতুন করে আরও ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এই নতুন বিনিয়োগের আওতায় চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ডে ১২ একর জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে শতভাগ রপ্তানিমুখী 'এলবিয়ন স্পেশালাইজড ফার্মা'। এ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে উৎপাদন হবে স্টেরয়েড ও ইনজেকশন আইটেম। শুরুতে ইনজেকশন এবং চোখ ও নাকে ব্যবহৃত ড্রপের পর পর্যায়ক্রমে অ্যান্টিবায়োটিক, হৃদরোগ, নিউরোলজির পাশাপাশি জেনারেল মেডিসিন উৎপাদন করা হবে। এতে অন্তত নতুন করে আরও তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। চলতি বছরের জুন মাস থেকেই স্পেশালাইজড ফার্মার কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন রাইসুল।

  একজন স্বপ্নবাজ তরুণ রাইসুল উদ্দিন সৈকত

সৈকত ছোটবেলা থেকেই ছিলেন তুখোড় মেধাবী। ১৯৮১ সালে জন্ম। ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রামে সানশাইন গ্রামার স্কুল থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত অধ্যায়ন করেন চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ‌্যান্ড কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে রাইসুল উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সিডনিতে সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সাইন্সে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। 

সিডনিতে পড়াকালীন সময়েই ২০০৫ সালে এলবিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালের পরিচালক মনোনীত হন এবং ২০০৬ সালে দেশে ফিরে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ২০১০ সালে এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান মনোনীত হন সৈকত। তার স্ত্রীর নাম তাসনিন মাহমুদ।আহমেদ জায়ান এবং ইয়ারিকা ইলমেয়াত নামের এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের বাবা তিনি।