রাইজিংবিডি স্পেশাল

চলতি সপ্তাহেই ইতালির ভিসা আবেদন শুরু

ইতালিতে কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশসহ আরো বেশ কিছু দেশ থেকে ৬৯ হাজার ৭০০ জন অভিবাসীকর্মী আনার অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার। এরই মধ্যে ভিসা গেজেট প্রকাশ হয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে নন সিজনাল ওয়ার্কার, স্টার্ট আপ বা উদ্যোক্তা ভিসায় ইটালিতে আসতে আগ্রহীরা নির্দিষ্ট দপ্তরে আবেদন করতে পারবেন।

রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, মৌসুমি ভিসা (সিজনাল) এবং নিয়মিত ভিসা (নন-সিজনাল) পাওয়ার জন্য আগ্রহীরা আবেদন করতে পারবেন।

এদিকে, ইনফো মাইগ্রেন্টস এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানায়, বাংলাদেশসহ আরো বেশ কিছু দেশ থেকে ৬ হাজার ৭০০ জন অভিবাসীকর্মী আনার অনুমতি দিয়ে ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর একটি ডিক্রি জারি করে ইটালির শ্রম ও সামাজিক পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যেখানে কোন খাতে কতজন এবং কোন কোন দেশ থেকে আসতে পারবেন সেটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

জারিকৃত ডিক্রিটি গ্যাজেট আকারে প্রকাশিত হয় চার দিন আগে, ১৭ জানুয়ারি। প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী নন সিজনাল ওয়ার্কার, স্টার্ট আপ বা উদ্যোক্তা ভিসায় ইটালিতে আসতে আগ্রহীরা ২৭ জানুয়ারি থেকে সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তরে আবেদন করতে পারবেন। আর সিজনাল বা মৌসুমি ভিসার আবেদন করা যাবে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। উভয় ক্ষেত্রে আবেদনের সময়সীমা থাকবে ১৭ মার্চ পর্যন্ত।

এই কাজের ভিসাগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, বসনিয়া ও হ্যারৎসেগোভিনা, উত্তর কোরিয়া, আইভরি কোস্ট এবং মিশর থেকে আসা অভিবাসী কর্মীদের দেয়া হবে।

ইতালির শ্রম ও সামাজিক পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মোট ভিসার মধ্যে ১৪ হাজার কোটা কৃষিখাতের মৌসুমি বা সিজনাল ভিসার জন্য নির্ধারিত থাকবে। এছাড়া ২৬ হাজার কোটা স্পন্সর ও উদ্যোক্তা ভিসার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে যার মধ্যে ২০ হাজার কোটা নির্মাণখাত, সড়ক ও যোগাযোগ এবং হোটেল রেস্তোরাঁর জন্য বরাদ্দ থাকবে।

রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম কল্যাণ) মো. এরফানুল হক বলেন, এটি বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর। এ প্রক্রিয়াতে বাংলাদেশিরা সহজে বৈধভাবে ইত্যাদি প্রবেশ করার সুযোগ পাবে।

গত ১৭ জানুয়ারি রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস ইতালির ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, শুধুমাত্র ইতালিতে বসবাসরত নিয়োগকারী বা মালিক তার জন্য নির্ধারিত এসপিআইডি (পাবলিক ডিজিটাল আইডেন্টিটি সিস্টেম) ই-মেইল থেকে যাকে তিনি নিয়োগ করতে চান তার নাম, পাসপোর্ট ও অন্যান্য তথ্য উল্লেখ করে ইতালির স্থানীয় প্রশাসনিক অফিসে (Prefettura) ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নিয়োগকারী বা মালিকের আয় ও অন্যান্য বিষয়াদি বিবেচনা করে যোগ্য বিবেচিত হলে যে ব্যক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে Prefettura থেকে তার নামে nulla osta ইস্যু করা হবে। এই nulla osta নিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তি ঢাকাস্থ ইতালিয়ান দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করবেন।

ভিসা নিয়ে ইতালিতে এসে নিয়োগকারী বা মালিকের সাথে যোগাযোগ করে স্থানীয় প্রশাসনিক অফিসে গিয়ে কাজের চুক্তি সম্পাদন করবেন এবং ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করবেন। কাজের চুক্তি না করলে এবং সৌজন্য না পেলে শুরু থেকেই ওই ব্যক্তি অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

সরাসরি আবেদনের কোনো সুযোগ নেই

ইতালি বা যেকোন দেশে কর্মী নিয়োগের কোনো সার্কুলার দেয়া হলে বাংলাদেশ থেকে আগ্রহী বেশিরভাগ আবেদনকারী সাধারণত বেসরকারি এজেন্সিগুলোতে ভিড় করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে মধ্যপ্রাচ্য বা অন্যান্য দেশগুলোর মতো ইতালিতে চাইলেই কোনো এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করা যায় না।

কৃষি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, নির্মাণ খাতসহ সার্কুলারে তালিকাভুক্ত খাতগুলোতে মৌসুমি ও স্পন্সর উভয় ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন একমাত্র নিয়োগকর্তা। অর্থাৎ, ইতালিতে কৃষি বা অন্যান্য খাতে ব্যবসা করছেন এমন কোনো মালিক যদি তার প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মীর প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে তিনি আবেদনকারীর বিস্তারিত তথ্য ও যাবতীয় সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে সরকারের নির্দিষ্ট দপ্তরে আবেদন করবেন।

সরকার যাচাই-বাছাই করে আবেদন মঞ্জুর করলে পরবর্তীতে নিয়োগকর্তা ভিসাসহ অন্যান্য প্রস্তুতির জন্য আবেদনকারীকে অবহিত করবেন।

অবৈধ এজেন্সি ও অবাস্তব বেতন নিয়ে সতর্কতা

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আবেদনকারীরা ইতালির বেতন কাঠামো এবং যাবতীয় তথ্য যাচাই না করেই অনেকসময় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যান।

পরবর্তীতে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি যে পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ইতালিতে এসেছেন সেটি তার পুরো বছরের বেতনের সমান বা তার থেকেও কম। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আছেন যারা তাদের ব্যবসায় প্রয়োজনীয় কর্মী না লাগার পরেও শুধু মৌসুমি মুনাফা লাভের আশায় বিপুল অর্থের বিনিময়ে লোকজনকে ভিসার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন।

যেখানে একটি মৌসুমি ভিসার মেয়াদ থাকে মাত্র ছয় মাস সেখানে চুক্তিতে থাকা কর্মঘণ্টার দ্বিগুণ কাজ করার পরেও একজন ব্যক্তির পক্ষে এত বিশাল অংকের টাকা আয় করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এছাড়া অনেক অভিবাসীকে মৌসুমি ভিসার মেয়াদের পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যেতে বলা হয়৷ এমন পরিস্থিতিতে তারা বিপদে পড়েন। বসবাসের অনুমতি দেয়ার যৌক্তিক কারণ না থাকায় পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে তাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়ে যায়।

ভাষা ও কারিগরি দক্ষতা

কোনো আবেদনকারী যদি যথাযথ নিয়োগকর্তা যোগাড় করতে সক্ষম হোন তাহলে আবেদনের পাশাপাশি তিনি যে কাজের জন্য যাবেন সেই বিষয়ে তার পর্যাপ্ত কারিগরি দক্ষতা এবং ন্যূনতম ইতালীয় ভাষা জানা থাকা উচিত।

যেমন কেউ যদি নির্মাণ খাতে সাধারণ বা আধাদক্ষ কর্মী হিসেবে আসতে আগ্রহী হন তাহলে ইতালির আবহাওয়া এবং নির্মাণখাতের কাজের পরিবেশ সম্পর্কে মানসিক প্রস্তুতি নেয়া উচিত।

এটি হোটেল-রেস্তোরাঁ, কৃষিসহ সব খাতে আসতে আগ্রহীদের জন্যই প্রযোজ্য। বিগত বছরগুলোতে এসব ভিসায় এসে অনেকেই অনিয়মিত অভিবাসীতে পরিণত হওয়ার পর তাদের পুনরায় বৈধতা পেতে বছরের পর বছর সময় লেগেছে৷ আবার অনেককে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে।

সর্বোপরি একজন আবেদনকারীর উচিত সরকারি বেতন কাঠামো এবং থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ সম্পর্কে অবগত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়ে ভিসার প্রস্তাব দেয়া নিয়োগকর্তারা অনেক ক্ষেত্রেই অসাধু ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন।