শিক্ষা

ট্রাস্ট কলেজ: সাফল্যের ১ যুগ

ব্যতিক্রমী ও আধুনিকতার সারিতে সুপরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ট্রাস্ট কলেজ। একাদশ শ্রেণিতে তিনটি বিভাগে প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী নিয়ে ২০০৯ সালে এর যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সাফল্য আর ক্রমাগত অগ্রযাত্রায় ট্রাস্ট কলেজ এখন এক যুগ পেরিয়ে শুরু করেছে ১৩তম ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম।

ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত পাঠদানের জন্য রয়েছে এ কলেজে রয়েছে একশ-এর বেশি দক্ষ, অভিজ্ঞ ও উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতাপূর্ণ শিক্ষাদানে গত ১১টি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ ট্রাস্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে।

২০১৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ ২০টি কলেজের অন্যতম স্থান অর্জন করে ট্রাস্ট কলেজ। সম্মানের ঝুড়িতে জমা হয়েছে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মাননা পদকও।

গতানুগতিক মুখস্থবিদ্যা, নোটসংস্কৃতি, পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্তকরণ বা সাজেশন নির্ভরশীলতা পরিহার করে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা বাড়াতে দৃঢ় প্রত্যয়ী এ কলেজ। সৃজনশীল ও কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বায়নের উপযোগী, আলোকিত মানুষ ও দক্ষ জাতি গঠনের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করছে ট্রাস্ট কলেজ।

করোনায় যখন সমগ্র বিশ্ব গৃহবন্দি, তখন প্রযুক্তির ব্যবহারে অনলাইন মাধ্যমে শিক্ষাকর্মসূচি গ্রহণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষাকার্যক্রম পারিচালনা করে আসছে ট্রাস্ট কলেজ। সেইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণিত রুটিন অনুযায়ী সংসদ টিভিতে প্রচারিত ক্লাসগুলোতেও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক তদারকি করে আসছেন ট্রাস্ট কলেজের শিক্ষকরা।

পাশাপাশি বিভিন্ন দিবস ও জাতীয় কর্মসূচির অনুষ্ঠানগুলো ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে যথাযথভাবে উদযাপন করে আসছে ট্রাস্ট কলেজ।

ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং মহান স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ট্রাস্ট কলেজে নেওয়া হয়েছে গুরুত্বর্পূণ কর্মসূচি।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্ত্রী ও কোভিড-১৯ বিবেচনায় ১২ বছরের টিউশন ফি’র ধারাবাহিকতায়ও ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। তারপরও যারা এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছলদের মধ্যে যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের জন্য বিনামূল্যে পড়ার সুযোগও আছে।

এক যুগেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে সুদক্ষ পরিচালনা পর্ষদ এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকের সমন্বিত উদ্যোগে ট্রাস্ট কলেজের পাঠদান পদ্ধতিতে রয়েছে ব্যতিক্রমী কিছু বৈশিষ্ট্য।

একাডেমিক ক্যালেন্ডার পদ্ধতিতে বোর্ডের দুই বছরের সিলেবাসকে একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছরকে তিনটি টার্মে ভাগ করা হয়। প্রতিটি টার্মের নির্ধারিত ক্লাসের সংখ্যা অনুযায়ী অধ্যায়গুলো সাজিয়ে টার্মভিত্তিক পরিকল্পনা করা হয়। টার্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিদিনের ক্লাস পরিচালিত হয়।

প্রতিটি ক্লাস পূর্বনির্ধারিত পাঠ-পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রহণ করা হয়। ক্লাসে শিক্ষকগণ কী বিষয় কোন পদ্ধতিতে পাঠদান ও মূল্যায়ন করবেন পাঠ-পরিকল্পনায় তা নির্ধারণ থাকে।

প্রতিটি ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের কলেজে ভর্তির প্রাক্কালে মুদ্রিত পাঠ-পরিকল্পনা ও লেকচার শিট দেওয়া হয়। তাতে আলোচ্য বিষয়ের মূল প্রসঙ্গসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো থাকে।

কোনো বিষয়ের লেকচার শুরুর আগেই ছাত্রছাত্রীদের মানসম্মত হ্যান্ডনোট দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা এই নোটের সঙ্গে নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়।

চূড়ান্ত পরীক্ষার পূর্বে প্রতিটি বিষয়ের মূল বই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পড়ানো হয়। শ্রেণিকক্ষেই ছাত্রছাত্রীদের প্রতিটি অধ্যায়ের সকল সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের তৈরি করা হয়।

নির্ধারিত ক্লাসের বাইরে অতিরিক্ত সময়ে শিক্ষকরা নিবিড় তত্ত্বাবধানে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদেরকে কলেজের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেন।

প্রচলিত লেকচার পদ্ধতি ছাড়াও প্রজেক্টর, কম্পিউটার, সিডি, ভিসিডিসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেওয়া হয়। পাঠদান পদ্ধতির বৈচিত্র্যের কারণে শিক্ষাকে আনন্দময় ও আকর্ষণীয় হয়। এতে ছাত্রছাত্রীরা সহজেই পঠিত বিষয়ে দ্রুত জ্ঞান লাভে সক্ষম হয়।

কলেজটি আবাসিক এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় হরতাল ও অবরোধে ক্লাস অব্যাহত থাকে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অনিবার্য কারণে ক্লাস চালানো সম্ভব না হলে পরবর্তী নির্ধারিত ছুটির দিনে বিকল্প ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়।

অসুস্থতা বা বিশেষ কোনও কারণে অধ্যক্ষের পূর্বানুমতিক্রমে ছাত্রছাত্রীদের কেউ কোনও দিন অনুপস্থিত থাকলে মেকআপ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের কাছে ছাত্রছাত্রীকে উপস্থিত করার বিষয়টি অভিভাবকরা নিশ্চিত করে থাকেন।

শ্রেণিকক্ষে পঠিত তত্ত্বীয় বিদ্যাকে আরও কার্যকর এবং বাস্তবজীবনে দক্ষভাবে কাজে লাগানোর প্রয়োজনে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষাগারে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়।

ট্রাস্ট কলেজ-এ ছাত্রছাত্রীদের জন্য পৃথক হোস্টেল সুবিধা রয়েছে। এটি পৃথক হোস্টেল সুপার দ্বারা সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকরাও সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে হোস্টেলে অবস্থান করে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার তত্ত্বাবধান করেন।

প্রতি ১০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য একজন গাইড শিক্ষক/ফর্ম শিক্ষক নির্ধারণ করা থাকে। তারা সার্বক্ষণিক ছাত্রছাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করেন এবং যে-কোনও সমস্যায় দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেন।

ট্রাস্ট কলেজে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি অনেক সহশিক্ষা কার্যক্রমও রয়েছে। প্রতিদিনের ক্লাসের পাশাপাশি রুটিন অনুযায়ী নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে এ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। যে-সমস্ত ক্লাব রয়েছে তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— সায়েন্স ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা, কালচারাল সেন্টার, ট্যুরিস্ট ক্লাব, রাইটার্স ক্লাব ও আবৃত্তি-সংঘ ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেলিভিশন আয়োজিত জাতীয় টেলিভিশন সংসদীয় ইংরেজি বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০১২-১৩ এর ১ম রানার আপ-এর সম্মান অর্জন করে ট্রাস্ট কলেজ।