খেলাধুলা

লো স্কোরিং ম্যাচে টান টান উত্তেজনা, ধুঁকতে ধুঁকতে কুমিল্লার জয়

লড়াই করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ রসদ নিয়ে নামতে হয়। কিন্তু সিলেট সানরাইজার্সের সেই রসদ ছিল না। তবুও দলটি লড়াই করেছে দাঁতে দাঁত চেপে। নাজমুল ইসলাম অপুর ছোবল, মোসাদ্দেক হোসেন-সোহাগ গাজীর ঘূর্ণিতে যেন দিশেহারা ছিল কুমিল্লা ভিক্টোরুয়ান্সের ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু স্বল্প পুঁজি নিয়ে আর কতদূর পারা যায়। উইকেটের মিছিলে ধুঁকতে ধুঁকতে ঘাম ঝরানো জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে কুমিল্লা।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) শনিবার (২২ জানুয়ারি) দ্বিতীয় দিনের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয় কুমিল্লা ও সিলেট। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ১৯ ওভার ১ বলে ৯৬ রানে অলআউট হয় সিলেট। রান তাড়া করতে নেমে ৮ বল বাকি থাকতে ২ উইকেটে জয় পায় কুমিল্লা।

টিকে থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন মাহিদুল অঙ্কন। ১৪ বলে ৯ রান করেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন তানভীর ইসলাম (৩)।  তবে উইনিং রান আসে ১৯তম ওভারে কেসরিক উইলিয়ামসের টানা দুই ওয়াইডে।

টার্গেট ছিল একশ’র নিচে। হেসে খেলেই জয় পাওয়ার কথা ছিল কুমিল্লার। কিন্তু তা হতে দেয়নি মোসাদ্দেকের দল। বোলিংয়ে ছিল ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা। আর ফিল্ডিংয়ে ক্ষীপ্রতা। ৩৬ বলে কুমিল্লার প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। সেখান থেকে এক পর্যায়ে প্রয়োজন হয় ১২ বলে ৭! এই পরিসংখ্যানেই বোঝা যায় ম্যাচকে কতদূর টেনে নিয়ে এসেছেন সিলেটের বোলাররা। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠ ছাড়তে হয়েছে হার নিয়ে। লো স্কোরিং ম্যাচ হলেও দল দুটি উপহার দিয়েছে টান টান উত্তেজনা।

দুই দলের ইনিংসেই ডটের সমাহার। আগের ইনিংসে সিলেট খেলেছে ৬৮টি। আর কুমিল্লার ইনিংসে ডট ছিল ৬২টি! কুমিল্লার ৫ ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করলেও কেউ বিশের ঘর পার হতে পারেননি। সর্বোচ্চ ১৮ রান আসে আফগান অলরাউন্ডার করিম জানাতের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া ক্যামেরন ডেলফোর্ট (১৬), মুমিনুল হক (১৫), নাহিদুল ইসলাম (১৬) ও ইমরুল কায়েস (১০) ফেরেন থিতু হয়ে।

শুরুতে চাপে রেখেছিলেন সোহাগ গাজী। এরপর মোসাদ্দেক হোসেন ও নাজমুল ইসলাম অপুর ঘূর্ণিতে যেন অসহায় ছিলেন কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা। ৩টি উইকেট নেন অপু। সোহাগ গাজী ও মোসাদ্দেক নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। তাসকিন আহমেদ ১টি উইকেট পেলেও তিনি ছিলেন ইকোনোমিক্যাল। ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়েছেন ডানহাতি এই পেসার।

এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে একই দশা হয়েছিল সিলেটের। শুরু থেকেই উইকেট হারানোর সঙ্গে ব্যাটসম্যানরা খেলতে থাকেন একের পর এক ডট বল। টি-টোয়েন্টিতে যেখানে ব্যাটসম্যানরা সিঙ্গেলস-ডাবলসের সঙ্গে বাউন্ডারি মারার জন্য মুখিয়ে থাকেন, সেখানে সিলেটের ব্যাটসম্যানরা ডটবল খেলে উল্টো চাপে ফেলেছেন নিজেদের দলকেই। 

প্রথম ১০ ওভারে ৬০ বলের মধ্যে ৪১টিই ছিল ডট! সব মিলিয়ে ৬৮টি। সিলেটের ইনিংসে সর্বোচ্চ ২০ রান করেছেন কলিন ইনগ্রাম। রবি বোপারা ১৭ ও সোহাগ গাজী ১২ রান করেন। এ ছাড়া দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করতে পারেননি কোন ব্যাটসম্যান।

কুমিল্লার হয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন তিন বোলার— নাহিদুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান ও শহিদুল ইসলাম। হাত ঘুরিয়েছেন মুমিনুল হক-আরিফুল হকও। মুমিনুল ১ উইকেট পেলেও আরিফুল পাননি। এ ছাড়া তানভীর ইসলাম ও করিম জানাত নেন ১টি উইকেট।

এই ম্যাচে রাজত্ব দেখিয়েছেন বোলাররাই। দুই দলের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০ রান করেছিলেন ইনগ্রাম, আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল অতিরক্ত ১৯ রান!

ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে ম্যাচসেরার পুরষ্কার জেতেন নাহিদুল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: সিলেট: ১৯.১ ওভারে ৯৬ (কলিন ইনগ্রাম ২০, রবি বোপারা ১৭, সোহাগ গাজী ১২; নাহিদুল ২/২০, মোস্তাফিজ ২/১৫, শহিদুল ২/১৫)।  কুমিল্লা: ১৮.৪ ওভারে ৯৭/৮ (ক্যামেরুন ডেলপোর্ত ১৬, মুমিনুল ১৫, ইমরুল ১০, নাহিদুল ১৬, করিম ১৮; সোহাগ গাজী ২/৩০, মোসাদ্দেক ২/১০, নাজমুল ইসলাম ৩/১৭)। ফল: কুমিল্লা ২ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: নাহিদুল ইসলাম।